ঈদুল আজহার ছুটিতে বাগেরহাটের মোংলার মেরিন ড্রাইভ সড়ক দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। পৌর শহরের ফেরিঘাট থেকে শুরু করে কাইনমারী স্লুইস গেট পর্যন্ত তিন কিলোমিটারের এই সড়কে সোমবার (১১ জুলাই) বিকালে ভিড় করেন দর্শনার্থীরা।
সড়কটি মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেল ও আন্তর্জাতিক বঙ্গবন্ধু মোংলা-ঘাষিয়াখালী ক্যানেলের পাড় ঘেঁষে দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। মেরিন ড্রাইভে এসে সুন্দরবন, পশুর চ্যানেলে সারিবদ্ধ কার্গো-কোস্টার জাহাজসহ বিভিন্ন ধরনের নৌযান, রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুল্লি ও সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করছেন। শুধু মোংলা নয়, পাশের রামপাল উপজেলাসহ দূর-দূরান্ত এলাকা থেকে এখানে সময় কাটাতে ও প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগে ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা।
রামপাল উপজেলার মাহফুজ রহমান বলেন, ‘এলাকায় তেমন দর্শনীয় কোনও স্থান নেই। তাই বন্ধুরা মিলে মোংলা বন্দর ও পৌর শহরের মেরিন ড্রাইভে ঘুরতে এসেছি। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সুউচ্চ চুল্লি, সুন্দরবন, জাহাজ ও নদীর দৃশ্য দেখে খুব ভালো লেগেছে।’
মোংলা পৌর শহরের জয়বাংলা সড়কের বাসিন্দা কেয়া আক্তার, শারমিন আক্তার, শেহলাবুনিয়ার ঝুমুর বেগম, বাতেন সড়কের লাভলি ও কাইনমারীর টুটুল মন্ডল বলেন, ‘ঈদের দিন ব্যস্ততা থাকায় বের হতে পারিনি। তাই পরদিন সোমবার বিকালে পরিবারসহ মেরিন ড্রাইভে ঘুরতে এসেছি। বাচ্চারা খুব মজা করছে। অনেক কিছু দেখার আছে এখানে। তবে আরও ভালো ব্যবস্থা থাকলে ভালো হতো। বিশেষ করে বসার জায়গা। অনেক বড় জায়গা, হাঁটতে হাঁটতে হাঁপিয়ে উঠতে হয়।’
রাজশাহী থেকে মোংলায় বেড়াতে আসা হাসিবুর রহমান বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে মেরিন ড্রাইভে এসেছি। এখানে আসলে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। নদী, বাতাস, আকাশের মেঘের ভেলা, জাহাজ ও সবুজ প্রকৃতি দেখতে খুবই ভালো লাগে। এবারসহ তিনবার আসা হলো।’
মেরিন ড্রাইভের দুই পাশে রয়েছে লাইট পোস্টও। এ কারণে রাতেও লোকজন ঘুরতে আসে। এখানে রয়েছে বসার পাকা স্থাপনাও। মেরিন ড্রাইভের এক পাশে নদী আর এক পাশে কাশবনসহ বিভিন্ন ফুল-গাছের সমারোহ। এ সড়কের পাশে রয়েছে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম, নৌবাহিনীর ক্যাম্প। ঈদের ছুটিতে আগের তুলনায় দর্শনার্থীদের ব্যাপক ভিড় বাড়ায় সেখানে বসেছে বিভিন্ন ধরনের খাবার ও বাচ্চাদের খেলনা সামগ্রীর দোকানপাট। ঘুরতে আসা মানুষের কারণে ভাল আয়ও হচ্ছে মৌসুমি এসব দোকানির।
পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুর রহমান বলেন, ‘মূলত শহররক্ষার জন্য নির্মিত মেরিন ড্রাইভের দুই পাশের সৌন্দর্য বর্ধন করায় দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই থাকে। মেরিন ড্রাইভ এলাকায় বিভিন্ন ধরনের গাছপালার পাশাপাশি ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও হরিণের প্রতিকৃতি। আগামীতে এ সড়ককে ঘিরে আরও উন্নয়নম অর্থাৎ দর্শনার্থীদের মনোরঞ্জনে ইকোপার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক কমলেশ মজুমদার বলেন, ‘মেরিন ড্রাইভটি এখানকার মানুষের একমাত্র বিনোদনের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। মূলত সুন্দরবন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় দর্শনার্থীরা মেরিন ড্রাইভে ছুটে আসছেন আনন্দ উপভোগের জন্য। মেরিন ড্রাইভের পাশে সাফারি পার্ক তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষের।’