‘মোংলা কমিউটার’ ট্রেন নিয়ে যাত্রীদের যত আপত্তি
বাংলাদেশ

‘মোংলা কমিউটার’ ট্রেন নিয়ে যাত্রীদের যত আপত্তি

মোংলা সমুদ্রবন্দর প্রতিষ্ঠার ৭৩ বছর পর আনুষ্ঠানিকভাবে গত ১ জুন থেকে পুরাতন বগি এবং ইঞ্জিন দিয়েই শুরু হয় মোংলা-খুলনা রুটে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল। প্রথম অবস্থায় নতুন এই রেলপথে আগে থেকে চলাচল করা খুলনা-বেনাপোল রুটের একটি লোকাল ট্রেনকে ‘মোংলা কমিউটার’ নামে নতুন নামকরণ করে মোংলা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত যাত্রা শুরু করে।

সোয়া ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ রেলপথে প্রথম অবস্থায় ট্রেন চলছে মাত্র একটি। এ অঞ্চলের মানুষের জন্য এ যাতায়াত ব্যবস্থা আশীর্বাদ হলেও মোংলা থেকে খুলনা ও বেনাপোলগামী ট্রেনের যে সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে তা নিয়ে সাধারণ যাত্রীদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। মোংলা-খুলনা রুটে সময়সূচি পরিবর্তন করে অন্তত ৪টি ট্রেন চালানোর দাবি জানিয়েছেন এ অঞ্চলের মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোংলা থেকে খুলনার উদ্দেশে মানুষ মূলত ব্যবসা, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং অফিসিয়াল কাজে যান। কিন্তু দুপুর ১টায় ট্রেনের সময় হওয়ায় অনেকেই এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দুপুরের দিকে খুলনা থেকে মোংলায় এসে আবার খুলনা যাওয়ায় এ রুটে পর্যাপ্ত যাত্রী নাও উঠতে পারে। আপ এবং ডাউন দুই পথেই পর্যাপ্ত যাত্রী না হলে ট্রেনটি লোকসান গুনবে। দিনের পর দিন লোকসান দিয়ে একপর্যায়ে ট্রেনটি বন্ধ হয়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে। তাই যাত্রীদের সার্বিক সুবিধার কথা বিবেচনা করে ট্রেনের শিডিউল পরিবর্তন করে মোংলা থেকে সকালে ট্রেন ছাড়া ও এ রুটে ট্রেনসংখ্যা বৃদ্ধির জোর দাবি জানিয়েছেন যাত্রীরা।

মোংলা পৌর শহরের জুয়েলারি ব্যবসায়ী তরুণ চন্দ্র বলেন, ‘অনুমোদনের পর দীর্ঘ ১০ বছর ধরে নির্মাণকাজ শেষে চালু হয়েছে মোংলা-খুলনা রেল যোগাযোগ। চিকিৎসা, শিক্ষা, দাফতরিক এবং ব্যবসার কাজে আমাদের প্রতিনিয়ত খুলনা যেতে হয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ট্রেনের সময়সূচি নিয়ে। এ ছাড়া রুটে একটিমাত্র ট্রেন চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’ তিনি এ রুটে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অন্তত ২ জোড়া ট্রেন চলাচলের দাবি জানান।

উম্মে আয়েশা ইতু নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘মোংলা-খুলনা ট্রেন চালু হওয়াতে আমরা খুবই খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমরা শিক্ষার্থীরা সেবাটি থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। কারণ, আমাদের সকালবেলায় খুলনায় পৌঁছাতে হয়। আবার বিকালবেলায় খুলনা থেকে মোংলায় ফিরতে হয়। কিন্তু ট্রেনের শিডিউল দুপুরবেলা হওয়াতে আমার মতো অনেক শিক্ষার্থী এই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই ট্রেনের সংখ্যা ও সময়সূচি পরিবর্তন করা হলে রোগী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, ছাত্রছাত্রী, সাধারণ মানুষের সমস্যা অনেকটাই লাঘব হবে।’

আবুল হাসান নামে মোংলার এক রোগী জানান, প্রায়ই ডাক্তার দেখাতে তাকে মোংলা থেকে খুলনায় যেতে হয়। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ডাক্তার দেখিয়ে খুলনা থেকে মোংলায় ফিরতে রাত ৮-৯টা বেজে যায়। আর খুলনার অধিকাংশ ডাক্তার বিকালের দিকে রোগী দেখেন। এ অবস্থায় রাতে খুলনা থেকে মোংলায় ট্রেন ছাড়লে এ রুটে রোগীসহ সাধারণ মানুষের ভীষণ উপকার হবে।

মোংলা বন্দরে খুলনা থেকে এসে নিয়মিত অফিস করেন সাধন কুমার চক্রবর্তী নামের এক জাহাজ ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ‘সকালে খুলনা থেকে মোংলায় ট্রেন ছাড়লে জাহাজ ব্যবসায়ীসহ বন্দরকেন্দ্রিক সরকারি চাকরিজীবীদের ভীষণ উপকার হয়।’

মোংলা নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মো. নুর আলম শেখ বলেন, ‘এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি মোংলা-খুলনা রুটে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল শুরু হলেও এর শিডিউল ও সংখ্যা নিয়ে আমরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ। এ রেলপথ অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ স্বল্প খরচে এ রুট দিয়ে ট্রেনে চলাচল করতে ইচ্ছুক। কিন্তু কর্তৃপক্ষ স্বল্প পরিসরে ট্রেন চালাচ্ছে।’ এ অবস্থায় এ রুটে নতুন শিডিউলে অন্তত ৪টি যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর দাবি জানান তিনি।

মোংলা পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবদুর রহমান বলেন, ‘মোংলা শুধু একটি বন্দরই নয়, সুন্দরবনকেন্দ্রিক একটি পর্যটন এরিয়াও। এখানে ইপিজেড রয়েছে। রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ইপিজেডের কারণে এ অঞ্চলে মানুষের সমাগমও বাড়ছে। তা ছাড়া এ এলাকার মানুষ চিকিৎসার জন্য প্রায়ই ভারতে আসা-যাওয়া করেন। ব্যবসা ও ডাক্তার দেখাতে খুলনা শহরে যান। প্রতিবছর এখানে দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকেরা আসেন সুন্দরবন দেখতে। সার্বিক দিক বিবেচনা করে ট্রেনের সময়সূচি পরিবর্তন ও এ রুটে অন্তত ৪টি ট্রেন চালালে সাধারণ মানুষ ও যাত্রীরা উপকৃত হবেন।’

মোংলা রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার এস এম মনির আহম্মেদ জানান, এই রুটে ট্রেন চালু হওয়ার পর মোংলা থেকে প্রতিদিন গড়ে দুইশ থেকে আড়াইশ যাত্রী যাতায়াত করছে। যাত্রীদের সুবিধা-অসুবিধার কথা চিন্তা করে ট্রেনের সময়সূচির ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হয়েছে। বিষয়টি তারা বিবেচনা করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।

মোংলা-খুলনা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলা। এটিকে দেশের রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করা, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য পর্যটকদের আকৃষ্ট করা, রেলপথে আরামদায়ক ভ্রমণের সুব্যবস্থা করা, রেলের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার লক্ষ্যে খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে।’

রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার অসীম কুমার তালকুদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আপাতত ‘বেতনা কমিউটার’ ট্রেনটি বেনাপোল থেকে ‘মোংলা কমিউটার’ নামধারণ করে বেনাপোল-মোংলা রুটে চলাচল করবে। পরবর্তীতে আরেকটি রেক দিয়ে এই রুটে ট্রেন চলাচলের পরিকল্পনা রয়েছে।

Source link

Related posts

যেকোনো উপায়ে করোনার টিকা সংগ্রহ করা হবে: প্রধানমন্ত্রী

News Desk

কালীগঞ্জে আগুনে পুড়ে ৫টি দোকান ভস্মিভূত

News Desk

কাহারোলে পাটের আবাদ বেড়েছে

News Desk

Leave a Comment