আগামী অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে চালু হতে যাচ্ছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নৌবন্দর মোংলার সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ। ইতোমধ্যে এই রেলপথের কাজ ৯৮ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। এখন চলছে খুঁটিনাটি কাজ; যা চলতি মাসেই শেষ হওয়ার আশা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
তারা জানিয়েছেন, মোংলা-খুলনা রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরু হলে মোংলা বন্দরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। কারণ শুধু সারাদেশের সঙ্গে নয়, রেলপথটি আন্তর্জাতিক রেল রুট হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এর মধ্য দিয়ে বন্দরের ব্যবসা-বাণিজ্য গতিশীল হবে।
মোংলা-খুলনা রেলপথের ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে জানিয়ে প্রকল্পের পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান বলেন, ‘চলতি মাসে কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। সেইসঙ্গে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে এই পথ দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হবে বলে আশা করছি। সেভাবে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি আমরা।’
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ট্রানজিট সুবিধার আওতায় ভারত, নেপাল ও ভুটানে পণ্য পরিবহন সহজ করতে খুলনার ফুলতলা রেলস্টেশন থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত রেলপথ স্থাপন প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এই রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রথম দফায় প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৭২১ কোটি টাকা।
প্রকল্পের কাজ তিন ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে রয়েছে রূপসা নদীর ওপর রেলসেতু নির্মাণ, মূল রেললাইন স্থাপন এবং টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিং স্থাপন। ২০১১ সালে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও শেষ করতে পারেননি ঠিকাদার। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় প্রথম সংশোধনীতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকা। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও, তা সম্ভব হয়নি। দ্বিতীয় দফায় সংশোধনের পর ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। সেইসঙ্গে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লারসেন অ্যান্ড টুব্রো রূপসা নদীর ওপর রেলসেতুর নির্মাণকাজ করেছে। বাকি কাজ করেছে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইরকন ইন্টারন্যাশনাল।
এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক আরিফুজ্জামান বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি ও নানা কারণে কাজ শেষ করতে সময় লেগেছে। দুই দফায় প্রকল্প সংশোধনের কারণে ব্যয় বেড়েছে দুই হাজার ৫৩৯ কোটি টাকা। তবে তৃতীয় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও ব্যয় বাড়েনি। আশা করছি, এবার নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হবে।’
মোংলা-খুলনা রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরু হলে ব্যবসা-বাণিজ্য গতিশীল হবে জানিয়ে মোংলা বন্দরের ব্যবসায়ী মোস্তাক আহমেদ মিঠু বলেন, ‘বর্তমান সরকার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগের জন্য যেমন পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে, তেমনি নিরবচ্ছিন্ন রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে মোংলা বন্দরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপন করেছে। এতে গার্মেন্টস পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্য কম খরচে মোংলা বন্দর থেকে পরিবহন করা যাবে, তেমনি রফতানিও করা যাবে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি বেড়ে যাবে।’
একই কথা বলেছেন বাগেরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার। তিনি বলেন, ‘রেললাইনটি ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে পণ্য পরিবহনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে চিংড়ি ও গার্মেন্টস পণ্য পরিবহন সহজ হবে।’