কুষ্টিয়া থেকে ঢাকার গাবতলী যাচ্ছিলেন আমির হোসেন (৩৫)। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক তিনি। শনিবারই (২৪ জুলাই) তার ঈদের ছুটি শেষ হয়ে গেছে। রোববার (২৫ জুলাই) দুপুরের মধ্যে তাকে প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত হতে হবে। নইলে তার চাকরি থাকবে না।
রিকশা, ভ্যান ও মোটরসাইকেলে চেপে তিনি দৌলতদিয়া ঘাট পর্যন্ত এসেছিলেন। ফেরি পার হয়ে পাটুরিয়া ঘাটে এসে যানবাহন না পাওয়ায় পড়েন বিপাকে। ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালকের এক কথা ‘১৫০০ টাকা হলে যেতে রাজি আছি’। যেতে যেহেতু হবেই তাই বাধ্য হয়েই ১৫০০ টাকা ভাড়া দিয়ে গাবতলীর উদ্দেশে রওনা হলেন আমির।
পোশাকশ্রমিক নাজমা বেগম মা-বাবার সঙ্গে ঈদ করতে গ্রামে গিয়েছিলেন। কারখানা বন্ধ থাকলেও গাজীপুরের বাসায় স্বামী ও সন্তান রয়েছে। মেয়ে কান্নাকাটি করছে। তাই পথে পথে নানা বাধা-বিপত্তির কথা মাথায় নিয়েই ফরিদপুর থেকে তিনি যাচ্ছিলেন গাজীপুরে।পাটুরিয়া ফেরিঘাটে পৌঁছে পড়েন যানবাহন সঙ্কটে। মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারে ভাড়া চাচ্ছে অনেক বেশি। কয়েকজনের সঙ্গে মিলে জনপ্রতি ৪০০ টাকা ভাড়ায় তিনি প্রাইভেটকারে করে রওনা দেন নবীনগরের উদ্দেশে। সেখান থেকে আরেকটি যানবাহনে তাকে যেতে হবে গাজীপুরে।
আমির হোসেন আর নাজমা বেগমের মতো শত শত মানুষ লকডাউনের মধ্যে পথে পথে নানা দুর্ভোগ আর ভোগান্তি নিয়েই ফিরছেন কর্মস্থলের দিকে। সরকারি বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে ঘরের বাইরে বের হওয়ার কারণ জানতে চাইলে নানা জরুরি প্রয়োজনের কথা বলছেন তারা।
রোববার (২৫ জুলাই) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পাটুরিয়া ফেরিঘাটে দেখা গেছে ঢাকামুখী মানুষের ভিড়। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ কম থাকায় সীমিত পরিসরে ফেরি চলাচল করছে। জরুরি যানবাহন পারাপারের জন্য ছোট-বড় ৮টি ফেরি চলাচল করলেও তাতেই ওঠে পড়ছেন মানুষ।
নিয়ম অনুযায়ী লকডাউনে যাত্রী পারাপার নিষেধ থাকলেও ঘাট কর্তৃপক্ষ অথবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের পারাপারে কোনো বাধা দিচ্ছে না। গাদাগাদি করে ফেরি পাওয়ায় উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। তবে বিনা বাধায় ফেরি পার হতে পারলেও পাটুরিয়া ঘাটে পৌঁছে যানবাহন সঙ্কটে রাজধানীমুখী মানুষ পড়ছেন চরম বিপাকে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে অল্প কিছু ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার চললেও ভাড়া নেয়া হচ্ছে ইচ্ছেমতো।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একজন যাত্রী নিয়ে গাবতলী যেতে মোটরসাইকেলে ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১৫০০ টাকা। দুইজন গেলে ৮০০ টাকা করে। মোটরসাইকেলে নবীনগর পর্যন্ত ভাড়া ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। প্রাইভেটকারে গাবতলীর ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৬০০ টাকা। নবীনগরের ভাড়া ৪০০ টাকা। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়েই কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছে মানুষ।
মোটরসাইকেল চালক মিলন মিয়া বলেন, সড়ক-মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্ট রয়েছে। এজন্য বিভিন্ন গ্রামীণ সড়ক ব্যবহার করে যেতে হয়। ধরা পড়লেই গুনতে হয় জরিমানা। এজন্য ভাড়া অন্য সময়ের চেয়ে বেশি নেয়া হচ্ছে। তবে যাদের সঙ্গে লকডাউনে বের হওয়ার যৌক্তিক কাগজপত্র রয়েছে তাদের নিয়ে সরাসরি মহাসড়ক দিয়েই রওনা হই।
মানিকগঞ্জ জেলা ট্টাফিক পুলিশের পরিদর্শক (প্রশাসন) আবুল হোসেন জানান, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের চেকপোস্ট রয়েছে। বিধিনিষেধের আওতামুক্ত গাড়িগুলোকে থামিয়ে উল্টো পথে পাঠানো হচ্ছে। অনেকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।