দেশে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রিত হয় মোবাইল ফোনে। এ কাজটি করেন আমদানিকারকরা। পণ্যের জোগান কমলে ফোনে বলে দেওয়া হয় বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রির বিষয়টি। একইভাবে গত শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) ১০০ টাকার পেঁয়াজ একটি ফোনে বেড়ে হয় ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। এমনটাই জানিয়েছেন চট্টগ্রামের চাকতাই-খাতুনগঞ্জের আড়তদার ব্যবসায়ীরা।
চাকতাই আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কাশেম বলেন, ‘দেশের পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে আমদানিকারকগণ। এসব আমদানিকারকের বেশিরভাগই সীমান্তবর্তী জেলা হিলি, বেনাপোল, ভোমরা, সোনা মসজিদ এবং ঢাকার। কেননা, পেঁয়াজ বেশি আমদানি হয় ভারত থেকে স্থলবন্দর দিয়ে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারাই আমদানিকারক তারাই বিক্রেতা। তারা যদি চট্টগ্রামে পেঁয়াজ পাঠায় তাহলে আমরা পাই, না পাঠালে পাই না। আবার তারাই ফোনে নির্ধারণ করে দেন কত টাকা করে এসব পেঁয়াজ বিক্রি করতে হবে। আমরা নির্দিষ্ট অঙ্কের কমিশন পেয়ে থাকি।’
চাকতাই আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সহসাধারণ সম্পাদক মো. আহসান খালেদ বলেন, ‘পেঁয়াজ আমদানি হয় ভারত থেকে। বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ায় ভারত থেকে সহজে পেঁয়াজ আমদানি করা যায়। যখন ভারত রফতানি বন্ধ করে দেয় তখন বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। সে সুবাধে পেঁয়াজ আমদানিকারকগণও সীমান্তবর্তী এলাকার। বর্ডারে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের যাদের সম্পর্ক ভালো তারাই এসব ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। সরকার চাইলেই তাদের সিন্ডিকেট ভাঙতে পারে।’
চাকতাই আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রফিক বলেন, ‘পেঁয়াজ বিক্রির পর আমদানিকারকদের টাকা পাঠানো হয়। এমনকি আমদানিকারকগণ ২০০ বস্তা পেঁয়াজ পাঠিয়েছে। এর মধ্যে ৫০ বস্তা বিক্রির পর তারা ফোন করে বলে দেয় আর ১৫০ বস্তা পেঁয়াজ আরও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হবে। আমদানিকারকদের কথামতো আমাদের তাই করতে হচ্ছে। আমরা শুধু কমিশন পেয়ে থাকি।’
চাকতাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘পেঁয়াজসহ বেশিরভাগ পণ্য আমদানি কিছু বড় ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি। ব্যাংক থেকেও সবাই সমান সুযোগ পায় না। চাইলে এলসি (ঋণপত্র) খোলা যাচ্ছে না। ডলার সংকটসহ নানা অজুহাতে সাধারণ ব্যবসায়ীদের আমদানিতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। অথচ যাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক আছে তারা কোনও প্রকার মার্জিন ছাড়াই আমদানি করতে পারছে। সব ব্যবসায়ী যদি সমানভাবে উন্মুক্তভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে তাহলে দেশে কোনও পণ্যের সংকট হবে না। পাশাপাশি হঠাৎ করে এত দাম বাড়বে না।’
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘বর্তমানে ভারতীয় যে পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি হচ্ছে তা খবর নিয়ে জেনেছি ৯০ টাকায় কেনা। সব খরচ বাদ দিয়ে পেঁয়াজের কেজি ১২০ থেকে ১২৫ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। আমদানিকারকদের বাজার নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানানো হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডিও প্রথা বা কোনোভাবে হাতবদল করা যাবে না। হাতবদল করতে হলে সঙ্গে সঙ্গে পণ্যটি হাতবদল করতে হবে। এখন দেখা যাচ্ছে পণ্য হাতবদল হচ্ছে না। কাগজ হাতবদল হচ্ছে। প্রত্যেক হাতবদলে কিন্তু দাম বাড়ছে। এটা কোনোভাবেই অ্যালাউ করবো না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোমবার (১১ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার চাকতাই-খাতুনগঞ্জে কেজিপ্রতি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করা হয় ১৯০ টাকা থেকে ২০০ টাকায়। চীন থেকে আমদানি করা বড় সাইজের পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। খুচরায় প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে ২২০ টাকা থেকে ২৪০ টাকায়। চীনা পেঁয়াজ খুচরায় বিক্রি করা হচ্ছে ১৬০ টাকা করে। অথচ বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) খাতুনগঞ্জে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করা হয় ১০০ টাকায় এবং চীনা পেঁয়াজ বিক্রি করা হয় ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়।
শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) থেকে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করেছে ভারত। ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশটি আর পেঁয়াজ রফতানি করবে না। এমন খবরে দেশের বাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম।