Image default
বাংলাদেশ

মোস্ট ওয়ান্টেড ‘বাঘ হাবিব’ গ্রেপ্তার

পূর্ব সুন্দরবনের চিহ্নিত বাঘ শিকারি হাবিব তালুকদার ওরফে বাঘ হাবিবকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বন বিভাগ ও স্থানীয়দের কাছে বাঘ হাবিব নামেই পরিচিত তিনি। বাঘ শিকার করাই তার নেশা। গত ২০ বছরে অন্তত ৭০টি বাঘ হত্যা করেছে বলে এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে। তার নামে রয়েছে ৯টি বন অপরাধের মামলা। এর মধ্যে তিনটিতে রয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। বনে নিষিদ্ধ, তবুও গোপনে ঢুকে একের পর এক শিকার করেন বাঘ-হরিণ-কুমির। অবশেষে গতকাল শুক্রবার রাতে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন দুর্ধর্ষ এই বাঘ শিকারি। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পলাতক ছিলেন বাঘ হাবিব। মাঝেমধ্যে গোপনে বাড়িতে এসে অন্যের ঘরে ঘুমাতেন। গতকাল শুক্রবার প্রতিবেশী রফিকুলের বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে অবস্থান করছিলেন তিনি। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে রাত আড়াইটা দিকে স্থানীয় সোনাতলা গ্রামে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে।

‘বাঘ হাবিবের’ বাড়ি শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের বনসংলগ্ন সোনাতলা গ্রামে। তার বাবা কদম আলী সুন্দরবনের দুর্ধর্ষ বনদস্যু ছিলেন। বনের পাশে বাড়ি হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই সুন্দরবনে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। বন্যপ্রাণী শিকারের সহযোগী হিসেবে এখন কাজ করেন তার ছেলে হাসান (২০) ও জামাই মিজান (২৫)। তাদের নামেও রয়েছে একাধিক মামলা । হাবিব গত ২০ বছরে ৭০টি বাঘ হত্যা করলেও তার নামে বাঘ শিকারের তিনটি এবং হরিণ শিকারের পাঁচটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে তিনটিতে রয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। হাবিব এসব মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে নিজের বাড়িতে থাকতেন না। বেশির ভাগ সময় বনেই কাটে তার জীবন। জানা গেছে, ছাগল অথবা মুরগির মাংসের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে বনের যেসব এলাকায় বাঘের বিচরণ, সেসব স্থানে রেখে দেওয়া হয় ‘বিষটোপ’। বাঘ ওই বিষ মেশানো মাংস খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। অনেক সময় মৃত আবার আহতাবস্থায়ও ধরে তার ছামড়া ও কঙ্কাল সংগ্রহ করা হয়। এভাবে বাঘ শিকার করেন তিনি। ফাঁদ পেতে হরিণ শিকার করে তার চামড়া সংগ্রহ করে মাংস বিক্রি করে দেন। এ ছাড়া ফাঁদ ও মাংসের টোপ দিয়ে হরিণ এবং কুমির শিকার করে থাকেন।

বন বিভাগ জানায়, হাবিবকে বহু আগে থেকেই সুন্দরবনে প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কোনো বন অফিস থেকেই তার নামে পাস দেওয়া হয় না। তারপরও গোপনে বনে ঢুকে বন্যপ্রাণী শিকার করেন তিনি। তার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার পরও এই কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন। এর পেছনে একাধিক শক্তিশালী চক্র জড়িত রয়েছে। সুন্দরবন সুরক্ষায় নিয়োজিত কমিউনিটি পেট্রোলিং গ্রুপের (সিপিজি) ভোলা টহল ফাঁড়ি ইউনিটের দলনেতা মো. খলিল জমাদ্দার জানান, সুন্দরবনের বাঘ-হরিণ শিকার করা হাবিবের পেশা। ২০ বছর ধরে এই কাজ করছে সে। তার নামে অনেক মামলা রয়েছে। বনের বাঘ-হরিণ শিকার করেই বন মামলা চালায় সে। কোনো বাধাই তাকে বাঘ শিকার থেকে ফেরাতে পারেনি।

শরণখোলা স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) মো. আব্দুল মান্নান বলেন, বাঘ শিকারি হাবিব বন বিভাগ ও পুলিশে কাছে মোস্ট ওয়ান্টেড। তার নামে বাঘ ও হরিণ শিকারের অপরাধে ৮টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে বন বিভাগের সাতটি এবং পিরোজপুর আদালতে হয়েছে একটি। এ ছাড়া অন্য অপরাধেও বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে। পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, হাবিব তালুকদার ‘বাঘ হাবিব’ নামে বন বিভাগের তালিকাভুক্ত অপরাধী। সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা থেকে এ পর্যন্ত সে ৭০টির মতো বাঘ হত্যা করেছে বলে একাধিক সূত্র দাবি করছে। শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইদুর রহমান বলেন, বাঘ হাবিবের নামে শরণখোলা থানায় তিন ওয়ারেন্ট মুলতবি ছিল। তাকে দীর্ঘদিন ধরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। গোপন সংবাদের মাধ্যমে তার অবস্থান শনাক্ত করে আটক করে আজ শনিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সূত্র ::দৈনিক আমাদেরসময়

Related posts

ঈদ বিনোদনে প্রস্তুত গাজীপুরের বিনোদন কেন্দ্রগুলো

News Desk

১৩৯ উপজেলায় ভোট বুধবার, কেন্দ্রে গেলো সরঞ্জাম

News Desk

রাজশাহীতে করোনার সংক্রমণ রোধে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ

News Desk

Leave a Comment