সম্প্রতি অতি বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং জেলার বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট বন্যার ধকল এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি মৌলভীবাজারের বন্যাকবলিত এলাকাগুলো। পানি কমে এলেও কমছে না বন্যাকবলিত মানুষের দুর্ভোগ। গত চার দিনে বন্যার পানিতে ডুবে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরা সবাই শিশু-কিশোর।
সবশেষ সোমবার (২৪ জুন) একদিনে মৌলভীবাজারে বন্যার পানিতে ডুবে মারা যায় দুই শিশু। গত চার দিনে বন্যার পানিতে ডুবে নিহতরা হলো সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের পশ্চিম শ্যামেরকোনা গ্রামের পচন মিয়ার ছেলে ছাদি মিয়া (৮), একই গ্রামের জমির মিয়ার ছেলে হৃদয় মিয়া (১৭), পাহাড় বর্ষিজোড়া গ্রামের লিমন শেখ (১২), খলিলপুর ইউনিয়নের আজিজুল ইসলাম (৬), কনকপুর ইউনিয়নের বুদ্ধিমন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা শিবলু মিয়ার ছেলে সোহান আহমদ (৭), বড়লেখা উপজেলার ভাগাডহর গ্রামের আয়শা (১২) ও কুলাউড়া উপজেলার ভূকশিমইল ইউনিয়নের মুক্তাজিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাছির মিয়ার ছেলে আবু সাইদ আহমদ রেদোয়ান (৬)।
জানা যায়, গত ২০ জুন সদর উপজেলার শ্যামেরকোনা গ্রামের ছাদি মিয়া ও তার সঙ্গে একজন রাস্তায় হাঁটছিল। আচমকা ধলাই নদীর বাঁধ ভেঙে তারা পানির স্রোতে তলিয়ে যায়। এ সময় তাদের উদ্ধার করতে গিয়ে হৃদয় মিয়া (১৭) নামের কিশোর পানিতে ডুবে মারা যায়। মারা যাওয়ার আগে অপর এক শিশুকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হয় নিহত হৃদয়। পরবর্তীতে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার ফায়ার স্টেশনের উপ-সহপরিচালক মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। তবে এ সকল দুর্ঘটনার অধিকাংশই ঘটছে পরিবারের অবহেলা বা অসচেতনতার কারণে। পরিবারের সদস্যরা যদি ছোট বাচ্চাদের খেয়াল রাখেন এবং সাঁতার শেখান তাহলে পানিতে ডুবে মৃতের সংখ্যা অনেকটাই কমে যাবে।’
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বলেন, ‘বন্যার পানি কমলেও দুঃখজনক বিষয় হলো, পানিতে ডুবে এ পর্যন্ত সাত জনের মৃত্যু। নিহতের পরিবারকে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে। সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন জায়গায় জনসচেতনতা তৈরিতে কাজ করছে প্রশাসন।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিশুদের খেয়াল রাখার জন্য প্রতিটি ইউনিয়নের গ্রামে মাইকিং করা হয়েছে। এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল বলেন, ‘চারটি নদীর মধ্যে তিনটির পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শুধু জুড়ী নদীর পানি বিপদসীমার ১৭৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আশা করি, দু-একদিনের মধ্যে পানি কমে যাবে। সব মিলিয়ে বন্যার পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে।’