মৌসুমের সর্বোচ্চ গরমে অতিষ্ঠ দিনাজপুরের মানুষ
বাংলাদেশ

মৌসুমের সর্বোচ্চ গরমে অতিষ্ঠ দিনাজপুরের মানুষ

প্রচণ্ড তাপদাহে পুড়ছে উত্তরের জেলা দিনাজপুর। গত কয়েকদিন ধরে অব্যাহত তাপদাহের কারণে নাভিশ্বাস উঠেছে খেটে খাওয়া মানুষের। সেই সঙ্গে বাতাসের আদ্রতা কমেছে ৪৯ শতাংশ পর্যন্ত, যা বাড়াচ্ছে দুর্ভোগ। বুধবার (১৩ জুলাই) জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ। 

যদিও বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) তাপমাত্রা কিছুটা কম এবং বাতাসের আদ্রতা ও গতিবেগ কিছুটা বেড়েছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বিদ্যমান তাপদাহ আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে।

দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৫ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬ কিমি। তবে বিকাল ৩টায় তাপমাত্রা রেকর্ডে কিছুটা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

এর আগে, বুধবার ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বাতাসের সর্বনিম্ন আদ্রতা ছিল ৫৮ শতাংশ। মঙ্গলবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও বাতাসের সর্বনিম্ন আদ্রতা ৬১ শতাংশ, সোমবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও বাতাসের সর্বনিম্ন আদ্রতা ৫৭ শতাংশ, রবিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও বাতাসের সর্বনিম্ন আদ্রতা ৪৯ শতাংশ। 

আবহাওয়াবিদদের ভাষ্যমতে, তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে মৃদু, ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে মাঝারি ও ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের অধিক থাকলে তীব্র তাপদাহ বলে। এ হিসাবে বর্তমানে দিনাজপুরে মৃদু তাপদাহ বিরাজ করছে। 

 দিনাজপুর সদর উপজেলার গাবুড়া এলাকায় চাতালে ধান শুকানোর কাজ করছেন মুক্তি রানী। তিনি বলেন, কয়েকদিন ধরে কোনও বৃষ্টি নেই। গরমে চাতালে কাজ করতে পারছি না, অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ছি। 

চাতালশ্রমিক প্রতীমা শীল বলেন, ধান শুকাতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে যাই। রাতে গা জ্বালাপোড়া করে, চুলকায়। কবে যে বৃষ্টি হবে। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে গেছি আমরা।  

পারদিঘন এলাকার সুরেন্দ্রনাথ রায় বলেন, তীব্র গরম। ধানের জমিতে কীটনাশক স্প্রে করতে পারছি না। গরমে ঘেমে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি। কাজ করতে পারি না। 

শুধু গ্রামে নয়, শহরের চিত্রও একই। দিনাজপুর পৌরসভার সামনে ইজিবাইকচালক আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, গরমের কারণে রাস্তাঘাটে যাত্রী কম, শহরে লোকজন নেই। আয় কমে গেছে।

পার্বতীপুর উপজেলার বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি এলাকার আল আমিন সরদার বলেন, আমি দিনাজপুরে লেখাপড়া করি ও পাশাপাশি একটি কোম্পানিতে চাকরি করি। সকালে ছাতা নিয়ে বের হয়েছি, এরকম তাপমাত্রা আর দেখিনি। ছাতা নেওয়ার পরও মনে হচ্ছে সূর্য মাথার ওপরে। খুব ক্লান্ত লাগছে।

 উপশহর এলাকার বাসিন্দা রিপন চন্দ্র রায় বলেন, বেশ কয়েকদিন ধরেই অতিরিক্ত গরম। বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না। কাজকামের অনেক সমস্যা। গরমে আয়-রোজকার বন্ধ। 

দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, বর্তমানে দিনাজপুরসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে মৃদু তাপদাহ চলছে। বুধবার জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এই মৌসুমে সর্বোচ্চ। তবে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৫ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার দুপুর ১২টায় তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ বুধবারের চেয়ে বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে। তবে বিকাল ৩টার রেকর্ডে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে। তাপদাহ আরও দুই-তিন দিন চলমান থাকতে পারে। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বেশ কিছু স্থানে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টিপাত হলে তাপদাহ কিছুটা কমবে। ১৯ জুলাইয়ের পর জেলায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে; যা অব্যাহতভাবে কয়েকদিন চলবে। 

 

Source link

Related posts

নতুন কমিটি বাতিলের দাবিতে সরাইলে বিএনপির একাংশের ঝাড়ু মিছিল

News Desk

হিলিতে চলতি মৌসুমে ধানের ভালো ফলন, খুশি কৃষকরা

News Desk

ভাসানচরে গেলো আরও ১৫৩৫ রোহিঙ্গা

News Desk

Leave a Comment