করোনার কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে সরকার অর্থ বিতরণ করছে। এসব প্রণোদনা প্যাকেজ শেষ হওয়ার সময় ঠিক করা নেই। প্যাকেজগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত চলমান থাকবে। একই সঙ্গে যতদিন প্রয়োজন ততদিন প্রণোদনা থাকবে বলে জানান অর্থ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার। শুক্রবার অর্থমন্ত্রীর বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিষয়ে নানা প্রশ্নের উত্তর দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে সংশ্লিষ্ট প্রশ্নে অন্যরাও বিভিন্ন বিষয়ে উত্তর দেন।
এ সময় প্রণোদনা প্যাকেজ কতদিন চলবে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থসচিব বলেন, ‘সরকার মোট ২৩টি প্যাকেজ বাস্তবায়ন করছে। এসব প্যাকেজ পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত চলবে। তাতে যতদিন লাগে। আগামী বছর লাগলেও চলবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যদি প্রয়োজন হয়, তিনি আরও প্রণোদনা প্যাকেজ নিয়ে আসবেন। তাই এ প্রণোদনা প্যাজের কোনো সময় ঠিক করা নেই। ‘মোট প্রণোদনা পাকেজের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বাস্তবায়ন করছে ছয়টি, যা প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকার। এটা মোট প্যাকেজের ৭০ শতাংশ। বাকি ৩০ শতাংশ বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক যে প্যাকেজ বাস্তবায়ন করছে, তার ইন্টারেস্ট বাবদ বছরে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা লাগবে, সেটা কিন্তু বাজেট থেকে দেয়া হচ্ছে, যাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর বেশি চাপ না পড়ে, সরকার বার্ডেন শেয়ার করছে।
প্রণোদনা প্যাকেজ নিয়ে করা আরেক প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, ‘অর্থনীতিবিদসহ সবাই বলে যে, সরকারের সুবিধা বড়রা পায়, ছোটরা পায় না। কিন্তু এটা ঠিক না। ৪০ হাজার কোটি টাকা বড় ব্যবসায়ীদের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ৩২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। এর সুবিধাভোগী ৩ হাজার ২৫৭ জন ব্যবসায়ী তা পেয়েছেন।
‘এর পরেই ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা রয়েছে এমএসএমই খাতে। এর মধ্যে ১৪ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা বা ৭৩ শতাংশ ছাড় হয়েছে। ১ হাজার কোটি টাকা ছাড়ের জন্য অনুমোদন হয়ে আছে। এতে সুবিধাভোগীর সংখ্যা ছিল ৯৬ হাজার ১৭১ জন। এ ছাড়া কৃষি খাতে ফুল-ফল-মৎস্য এসবের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের মধ্যে এ পর্যন্ত ছাড় হয়েছে ৩ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা বা ৮০ শতাংশ। এতে উপকারভোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৭২ হাজার ৩৯০ জন। এগুলো তিন বছর মেয়াদি।
‘এ ছাড়া নিম্ন আয়ের পেশাজীবীদেরর জন্য ৩ হাজার কোটি টাকার প্যকেজের মধ্যে ৬১ শতাংশ বা ১ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে। এতে উপকারভোগীর সংখ্যা ৩ লাখ ২৮ হাজার ৫৪৭ কোটি।’ গভর্নর বলেন, ‘একটা প্রশ্ন উঠছে যে ব্যাংকিং খাত থেকে সরকার ঋণ নিয়ে ঘাটতি পূরণ করলে ব্যাংকিং খাতের সমস্যা হবে কি না? ৭৬ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকিং খাত থেকে নেয়ার কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে ২ লাখ কোটি টাকা অতিরিক্ত অর্থ আছে।