যশোর শহরের মুড়লি এলাকায় দানবীর হাজী মো. মহসীন স্কুলের কাজী শাহেদ আহমেদ একাডেমিক ভবনের বন্ধ একটি শ্রেণিকক্ষ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে শ্রেণিকক্ষের কয়েকটি বেঞ্চ পুড়ে গেছে। মঙ্গলবার রাতে কে বা কারা শ্রেণিকক্ষে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করেছে বলে অভিযোগ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।
তবে স্থানীয় লোকজন কাউকে দেখতে পাননি, বিস্ফোরণের শব্দও শোনেননি। পুলিশ বলছে, নাশকতা নয়। কেউ ভিন্ন কারণে এ ঘটনা ঘটাতে পারে।
স্কুল সংশ্লিষ্টরা জানান, ডিসেম্বরের ১৭ তারিখের পরীক্ষা গ্রহণের পর থেকে শ্রেণিকক্ষগুলো তালাবদ্ধ ছিল। তা ছাড়া গত দুই দিন শিক্ষকরা নির্বাচনি প্রশিক্ষণে থাকায় স্কুলে আসেননি। সংসদ নির্বাচনে এ বিদ্যালয়টি ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এ জন্য আজ সকালে কর্মচারীরা কক্ষগুলো পরিষ্কার করতে যান। অষ্টম শ্রেণির কক্ষটি খোলার পরে তারা ঘর থেকে গন্ধ এবং কয়েকটি বেঞ্চ পোড়া অবস্থায় দেখতে পান। এ ছাড়া সেখানে দুটি বোতলও পড়ে ছিল। খবর পেয়ে শিক্ষক এবং স্কুল পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দ স্কুলে এসে ঘটনা দেখেন এবং পুলিশে খবর দেন। নাশকতার উদ্দেশ্যে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
বিদ্যালয় সাবেক প্রধান শিক্ষক শাহ আলম বলেন, ‘সকালে শুনেছি স্কুলে বোমা হামলা হয়েছে। এই খবর পাওয়ার পর ছুটে আসি। এসে দেখি অষ্টম শ্রেণির কক্ষে কয়েকটি বেঞ্চ পোড়া, সারা কক্ষ ধোঁয়ায় কালো বর্ণ হয়ে গেছে। ফ্যান-ঘড়ি পুড়ে গেছে। বন্ধ স্কুলে এ ধরনের ঘটনা নাশকতারই অংশ। সামনে নির্বাচন, ফলে ভীতি সৃষ্টির লক্ষ্যে কেউ এ কাজ করতে পারে।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমি মাত্র কয়েক মাস আগে স্কুলে যোগদান করেছি। আজ সকালে কর্মচারীরা কক্ষ পরিষ্কার করতে গিয়ে ঘরটি পোড়া অবস্থায় দেখতে পান। খবর পেয়ে আমি শিক্ষকদের নিয়ে সেখানে যাই। এরপর এই ঘটনার বিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও পুলিশকে জানাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি নাশকতারই অংশ। এ স্কুলে ভোট গ্রহণ হবে এবং ফেব্রুয়ারি মাসে সুবর্ণ জয়ন্তী রয়েছে। এই দুই কারণকে সামনে রেখে কেউ নাশকতা করলেও করতে পারে।’
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি শেখ সালাউদ্দিন টিপু বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসি। এরপর বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করি। কেরোসিন বা পেট্রোল জাতীয় কিছু দিয়ে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে। তবে, এই স্কুল ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে, বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে আসছে না। এজন্য একটা সন্দেহ থেকেই যায়।’
স্কুল লাগোয়া বাড়ির মালিক এবং এই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক সবেদ আলী, ভাড়াটিয়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে দুলদুল ইসলাম এবং পাশের মুদি দোকান কাম বাড়ির মালিক শরীফা বেগম জানান , তারা বিদ্যালয়ের আশেপাশে বহিরাগতদের কাউকেই দেখেননি। গতরাতে কোনও শব্দ বা আগুনও দেখেননি। তারা সকালে এবং দুপুরে বিষয়টি জানতে পেরেছেন।
স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক সবেদ আলী নাশকতার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘হয়তো বাচ্চারা দুষ্টুমি করে এ কাজ করে থাকতে পারে।’
এদিকে, খবর পেয়ে বেলা ৩টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে যশোর কোতয়ালি থানা পুলিশ। সেখানে ওসি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘ঘরের ভেতর দেখে মনে হয়েছে আগুনটি অনেক পুরনো। পেট্রোলের গন্ধ পাওয়া যায়নি। আমরা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু করেছি। তবে, নির্বাচন সামনে রেখে কোনও নাশকতা নয়, কেউ ভিন্ন কারণে এ ঘটনা ঘটাতে পারে বলে মনে হচ্ছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। বিস্তারিত পরে বলা সম্ভব হবে।’