যশোর জেলা আ.লীগ সভাপতির তাণ্ডব, শহীদ পরিবারের বাড়িঘর ভেঙে লুটপাট
বাংলাদেশ

যশোর জেলা আ.লীগ সভাপতির তাণ্ডব, শহীদ পরিবারের বাড়িঘর ভেঙে লুটপাট

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া শহীদ উদ্দিন আহমেদের পরিবারের বাড়িঘর ভেঙে কোটি টাকার জিনিসপত্র লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুপুরে সদরের হামিদপুর পশ্চিমপাড়ায় শহীদ উদ্দিন আহমেদের ছেলে মো. আসাদুজ্জামানের বাড়িঘর ভেকু মেশিন দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দেড় শতাধিক লোকজন হামলা চালিয়ে ওই বাড়িতে লুটপাট চালায়। বাড়ির মালিক আসাদুজ্জামান ও তার স্বজনরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

তাদের অভিযোগ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন তার বেয়াই নুরুল ইসলামের পক্ষে তাদের বাড়ির জমি দখলের জন্য এই হামলা ও লুটপাট চালিয়েছেন। হামলার সময় ঘরে থাকা নগদ টাকা, সোনার গয়না, গরু-ছাগল, ধান-গমসহ কোটি টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।

অভিযোগের বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনও কথা বলতে রাজি হননি। এ ব্যাপারে জানতে তার বাসায় ২০ মিনিট অবস্থান করলেও একটি কথাও বলেননি।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আসাদুজ্জামানের পুত্রবধূ সুবর্ণা আক্তার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে হঠাৎ ২০-৩০ জন সন্ত্রাসী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে। পরে আরও শতাধিক লোকজন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলায় অংশ নেয়। ওই সময় আমার স্বামী এ বি এম জাফরি ও ভাশুর আফরাউজ্জামান বাড়িতে ছিলেন। তারা অস্ত্রের মুখে বাড়ির লোকজনকে জিম্মি করে তাদের কাছ থেকে মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। দুপুরের রান্না সম্পূর্ণ হলেও আমরা কেউ খাবার খেতে পারিনি। ঘরবাড়ি ভেঙে সব জিনিসপত্র তছনছ করে দিয়েছে। ঘরের সব জিনিসপত্র নিয়ে গেছে। আজ রাতে আমরা কোথায় থাকবো, তাও জানি না।’

শহীদ উদ্দিন আহমেদের ছেলে মো. আসাদুজ্জামানের বাড়িঘর ভেকু মেশিন দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে

আসাদুজ্জামানের ছোট ছেলে এ বি এম জাফরি বলেন, ‘দুপুরে বাড়িতে কাজ করছিলাম। ওই সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলামের দেড় শতাধিক লোকজন শটগান, হকিস্টিক, লাঠিসোঁটা, ধারালো অস্ত্র নিয়ে আমাদের বাড়িতে হামলা চালায়। ১৫-১৬টি মাইক্রোবাস, সাত-আটটি ট্রাক্টর-ট্রলি, দুটি জিপ গাড়ি, প্রাইভেটকার ও বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে এসেছিল তারা। হামলার পর বাড়িটি ভেকু মেশিন দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়। ঘণ্টাখানেকের তাণ্ডবে আটটি বসতঘর, দুটি রান্নাঘর, তিনটি ফলদ গাছ ধ্বংস করে দেয়। জমি কেনার জন্য ঘরে রাখা ১০ লাখ টাকা, মা, ভাবি ও স্ত্রীর ৩০ ভরি সোনার গয়না, তিনটি গরু, ছয়টি ছাগল, ৬০ মেট্রিক টন ধান-গমসহ কোটি টাকার জিনিসপত্র সাত-আটটি ট্রাক্টর-ট্রলিতে করে নিয়ে যায় তারা।’ 

দেড় শতাধিক লোকজন হামলা চালিয়ে ওই বাড়িতে লুটপাট চালায়

আসাদুজ্জামানের মেজো ছেলে আফরাউজ্জামান বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি বাড়িতে ছিলাম না। খবর পেয়ে এসে ধ্বংসযজ্ঞ দেখেছি। তারা আমার ছোট ভাইসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে মারধরও করেছে। খবর নিয়ে জেনেছি, হামলার সময় বাড়ির সামনের রাস্তায় গাড়িতে বসেছিলেন শহিদুল ইসলাম মিলন। তারই নির্দেশে এই হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে যখন পুলিশ আসে তখন সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। কিন্তু একটি ভেকু মেশিন ও ট্রাক্টর ঘটনাস্থলে পেয়েছে পুলিশ।’

বাড়ির জমি দখলের জন্য এই হামলা ও লুটপাট

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাড়ির মালিক আসাদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার বাবা শহীদ উদ্দিন আহমেদ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। আমরা শহীদ পরিবারের সন্তান। শহিদুল ইসলাম মিলন আমার বাল্যবন্ধু। সম্প্রতি আমাদের বাড়ির জায়গার সাবেক মালিক নুরুল ইসলাম তার বেয়াই হয়েছেন। নুরুল ইসলামের এই জায়গা ব্যাংকের কাছে বন্ধক ছিল। ১৯৯২ সালে ব্যাংক জমিটি নিলামে তুললে আমরা ক্রয় করি। পরে সেখানে বাড়ি করে বসবাস করে আসছি। গত বছর শহিদুল ইসলাম মিলন বাড়ির জমি দখলের জন্য তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এসেছিলেন। ওই সময় তাদের হামলায় আমার সন্তানরা আহত হন। তখন গ্রামবাসীর প্রতিরোধে সন্ত্রাসীসহ তিনি পালিয়ে যান। এ বিষয়ে আমরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছিলাম। এখন আমাদের ওপর আবারও হামলা ও বাড়িঘরের জিনিসপত্র লুটপাটের ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।’

হামলার সময় ঘরে থাকা নগদ টাকা, সোনার গয়না, গরু-ছাগল, ধান-গমসহ কোটি টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়

এ ব্যাপারে জানতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের বাড়িতে গেলে এই প্রতিনিধিসহ কয়েকজন সাংবাদিককে ২০ মিনিট বসিয়ে রাখেন। এরপর শহীদ পরিবারের সন্তানের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে লুটপাটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি বুধবার ঢাকায় গিয়েছিলাম। আজ এসেছি। হামলার বিষয়ে আমি কোনও বক্তব্য দেবো না। আপনাদের যা খুশি, তাই লিখতে পারেন।’ 

হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। তারা কাউকে পায়নি। তদন্ত করে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বাড়িঘর ভেকু মেশিন দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে

প্রসঙ্গত, গত ৯ জুন শহরের দড়াটানাসংলগ্ন কসবা পুলিশ ফাঁড়িতে যশোর নারী, শিশু ও মানব পাচার ট্রাইব্যুনাল-২-এর রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) মোস্তাফিজুর রহমান মুকুলকে মারধর করেন শহিদুল ইসলাম। এ ঘটনায় ১১ জুন দুপুরে যশোর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার আবেদন করেন ভুক্তভোগী মোস্তাফিজুর। বিচারক গোলাম কিবরিয়া মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের জন্য কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন। মামলায় শহিদুল ইসলামসহ দুজনকে আসামি করা হয়। মারধরের ঘটনার প্রতিবাদে জেলা আইনজীবী সমিতি মানববন্ধন করে। ওই মানববন্ধন থেকে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি অভিযুক্ত শহিদুল ইসলামের শাস্তির দাবি জানানো হয়েছিল। এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।

Source link

Related posts

২ হাজার পিস ইয়াবাসহ নারী পাচারকারী আটক

News Desk

শিবচরের ঘটনায় মামলা, আসামি স্পিডবোট মালিক-চালকসহ ৪

News Desk

বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা যাওয়া ব্যক্তিকে উদ্ধারে গিয়ে প্রাণ হারালেন আরও দুজন

News Desk

Leave a Comment