অবশেষে দালালমুক্ত করা হলো বেনাপোল আন্তর্জাতিক কাস্টমস-ইমিগ্রেশনকে। চলতি মাসের শুরু থেকেই বহিরাগতদের প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ভারত গমনাগমনকারী পাসপোর্ট যাত্রী হয়রানি বন্ধে জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তাব্যবস্থা। ফলে পাসপোর্ট যাত্রী ছাড়া কোনও ব্যক্তিকে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কমিশনার আব্দুল হাকিমের নির্দেশে ডেপুটি কমিশনার আথেলো চৌধুরী গত বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) এ আদেশ জারি করেন। কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনকে দালালমুক্ত করতে প্যাসেঞ্জার টার্মিনালে বসানো হয়েছে অত্যাধুনিক স্ক্যানিং মেশিন ও সিসি ক্যামেরা। এ ছাড়া সশস্ত্র আনসার ও আমর্ড পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে বহিরাগতদের। বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে গত ৬ মাসে ১১ লাখ ২০ হাজার যাত্রী ভারতে যাতায়াত করেছেন। যাত্রীদের কাছ থেকে এ সময় বিদেশে ভ্রমণকর বাবদ রাজস্ব আদায় হয়েছে ১১০ কেটি টাকা। শিশু , প্রতিবন্ধী ও ক্যানসার রোগীরা (ভ্রমণকর মওকুফ) এই আওতার বাইরে রয়েছে।
যাত্রী টার্মিনালের প্রধান ফটকে বন্দরের নিরাপত্তাকর্মী, আনসার সদস্য, আমর্ড ব্যাটালিয়ন ও কাস্টমস অফিসাররা সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখায় প্রবেশ করতে পারছে না বহিরাগত দালালরা। বর্তমানে পাসপোর্ট যাত্রী সংখ্যাও বেড়েছে ব্যাপক হারে। ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তাদের সেবার মান বৃদ্ধি করায় যাত্রীরা দ্রুত ও সুশৃঙ্খলভাবে সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে পারছেন নিজেরাই।
বেনাপোল কাস্টমস সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে বেনাপোল চেকপোস্টে একশ্রেণির দালালরা দূরদূরান্ত থেকে আসা পাসপোর্ট যাত্রীদের নানাভাবে হয়রানি করে আসছিল। সিরিয়াল ছাড়া তাদের পাসপোর্টের কাজ তাড়াতাড়ি করে দেওয়ার নাম করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল চক্রটি।
পাসপোর্ট যাত্রীদের পক্ষ থেকে কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার সাফায়েত হোসেন কাস্টমস-ইমিগ্রেশনকে দালালমুক্ত করার ঘোষণা দেন। যাত্রীদের সেবার মান উন্নত করতে চেকপোস্ট প্যাসেঞ্জার টার্মিনালে বহিরাগত দালাল উৎখাতে এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। যাতে টার্মিনাল এলাকায় বহিরাগত কোনও দালাল ঢুকতে না পারে, সেজন্য প্রতিনিয়ত তদারকি করা হচ্ছে।
বেনাপোল চেকপোস্ট পুলিশ ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আযহারুল ইসলাম জানান, বর্তমানে বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করছেন। যাত্রীদের সেবার মান বাড়াতে ইমিগ্রেশনের ডেস্কের সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হয়েছে। তারা নিজেরা ঝামেলামুক্তভাবে সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে কাজ সেরে নিচ্ছেন।
তিনি আরও জানান, কাস্টমস চেকপোস্টের রাজস্ব কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম ও মোখলেছুর রহমান এবং সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সরকার ইমরান ওয়াহিদ, কাজী নাঈম উদ্দিন, সুমনা হক এ্যানি, ও কামরুন নাহারের অক্লান্ত পরিশ্রমে গত ৬ মাসে ছয় কোটি ৭৫ লাখ টাকার ভারতীয় পণ্যসহ ৮০ লাখ ডলার, ৪ কেজি স্বর্ণসহ ৪ জনকে আটক করা হয়েছে। এখন থেকে যাত্রীরা যাতে ঝামেলামুক্তভাবে ভারত যাতায়াত করতে পারেন সেজন্য এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে তিনি জানান। বর্তমানে যাত্রীরা নিজেরা সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে তাদের পাসপোর্টের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে নিচ্ছেন।
বেনাপোল কাস্টমস ডেপুটি কমিশনার অথেলো চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমানে চেকপোস্ট কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনকে দালালমুক্ত এবং যাত্রীদের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করতে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে আমাদের। বর্তমানে কোনও প্রকার হয়রানি ছাড়া নিরাপদে যাত্রীরা ভারত যাওয়া-আসা করছেন। সব ধরনের লাগেজ ব্যবসার তৎপরতা বন্ধ করা হয়েছে। কোনও ধরনের হুমকি-ধমকি দিয়ে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনে বহিরাগত লোকজনেরা প্রবেশ করতে পারবে না।’