গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে রাজধানী ঢাকার উত্তরা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ১২ কিলোমিটার সড়কে অব্যাহত যানজটের কারণে মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি ভেবে গাজীপুরের জয়দেবপুর রেল স্টেশন থেকে ঢাকার কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত বিশেষ ট্রেন সার্ভিস চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী রোববার থেকে বিশেষ এই ট্রেন চলাচল করবে। গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের প্রচেষ্টায় ট্রেন সার্ভিসটি চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বুধবার (১৬ জুন) রাতে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত রাস্তাটিকে যানজটমুক্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিআরটি প্রজেক্ট আমাদেরকে উপহার হিসেবে দিয়েছেন কিন্তু ঠিকাদারদের ক্রমাগত দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কারণে অনেক বছর ধরে ধীর গতিতে কাজ করায় মানুষের দুর্ভোগের কোনো সীমা নেই। বর্ষাকাল আসলে এই দুর্ভোগ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়।’ ‘বিআরটি প্রজেক্টে দায়িত্ব পালন করা সচিব, পিডিসহ সবাইকে প্রায় প্রতিদিনই কয়েকবার করে ফোন করছি, যাতে টঙ্গী-গাজীপুরবাসীসহ এই সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী প্রায় ৩৭টি জেলার মানুষকে দুর্ভোগের হাত থেকে দ্রুত রক্ষা করা যায়। সিটি করপোরেশন, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ, জেলা প্রশাসনসহ সবাই আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছেন। গাজীপুর যাওয়ার বিকল্প সব সড়কে একসঙ্গে কাজ চলমান থাকায় বিকল্প সড়ক ব্যবহার করতে না পারায় দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেছে।
‘এই দুর্ভোগের হাত থেকে মানুষদের কিছুটা হলেও রক্ষা করতে বুধবার রাতে রেলমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে আগামী রোববার হতে গাজীপুর থেকে টঙ্গী হয়ে ঢাকা এবং ঢাকা থেকে টঙ্গী হয়ে গাজীপুর পর্যন্ত বিশেষ ট্রেন সার্ভিস চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি’ যোগ করেন তিনি। তিনি রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, ‘জনগণের দুর্ভোগ লাগবে আমার পক্ষ থেকে ভবিষ্যতেও সব ধরনের উন্নয়ন প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
অপরদিকে গাজীপুরের মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে গাজীপুর থেকে টঙ্গী পর্যন্ত একটি বিকল্প সড়ক নির্মাণ করছে সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম। সিটি করপোরেশনের নিমতলী ব্রিজ হতে টঙ্গীর বনমালা রেল গেইট পর্যন্ত একটি সড়কের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। পবিত্র ঈদুল আজহার আগেই সড়কটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। তিনি প্রতিদিন সশরীরে উপস্থিত থেকে সড়কটির নির্মাণ কাজ তদারকি করছেন।
টঙ্গী থেকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ১২ কিলোমিটার অংশে যাত্রীদের সব সময় যানজটের কবলে পড়তে হয়। এ নিয়ে যাত্রী সাধারণের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। সড়কটিতে চলাচলকারীরা বলছেন, উন্নয়ন কাজের জন্য এখন চলাচল করতে নানা সমস্যা হচ্ছে। বৃষ্টি শুরু হওয়ায় মানুষের ভোগান্তি আরও বেড়েছে।
তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সড়ক সচলে পুরোদমে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৫৫ ভাগ কাজ শেষ হয়ে গেছে। টঙ্গী কলেজ গেট থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে দুই-দুই করে চার লেনের রাস্তার কাজ আগামী এক মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এখন প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ পুরোদমে চলছে। ২০২২ সালের জুনে গাজীপুর-বিমানবন্দর অংশটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা সম্ভব হবে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে গাজীপুর থেকে রাজধানীর বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কে গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্টের (বিআরটি, গাজীপুর-এয়ারপোর্ট) আওতায় দেশের প্রথম বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প শুরু হয়। দুই হাজার ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে মেয়াদ ২০১৮ সালের ডিসেম্বর করা হয় এবং ব্যয় দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়ায় চার হাজার ২৬৪ কোটি ৮২ লাখ ১৪ টাকা। এরপর আরও দুই দফা প্রকল্পের সময় বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুনে শেষ করার কথা রয়েছে। ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার ২৬৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। সরকারের পাশাপাশি এডিবি, ফরাসি উন্নয়ন সংস্থা (এএফডি) ও গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি (ডিইএফ) অর্থায়ন করছে।
বিআরটি সূত্র জানায়, বিআরটি সড়ক উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণ, বিআরটি লেন, সাতটি ফ্লাইওভার, ১৯টি বিআরটি স্টেশন, ২৫ কিলোমিটার ড্রেন ও দুটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। সাতটি ফ্লাইওভারের কোনোটির ওপর দিয়ে আবার কোনোটির নিচ দিয়ে বিআরটি বাস চলাচল করবে। আবার কোনো কোনো ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে বিআরটি এবং গণপরিবহন এক সঙ্গে চলবে। ধীরগতির যান চলাচলে আলাদা আড়াই মিটার প্রস্থের লেন এবং সাড়ে চার মিটারের ফুটপাথ থাকবে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, এ প্রকল্পের আওতায় ১৬ কিলোমিটার অ্যাট গ্রেড এবং সাড়ে চার কিলোমিটার এলিভেটেড মেইন করিডর নির্মাণ করা হবে। মেইন করিডর সংলগ্ন ১১৩টি বা ৫৬ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের উন্নয়ন করা হবে। বিআরটি বাস ডিপোসহ বিভিন্ন স্থানে ২০টি স্টপেজ থাকবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্পের আওতায় টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন ড্রেন নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত মোট ২৮ কিলোমিটার ড্রেন এবং ১০টি কাঁচাবাজার নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ১৪০টি আর্টিকুলেটেড বাস ক্রয় করা হবে। এই রুটের পৃথক লেন দিয়ে ধীরগতির যানবাহন চলাচল করবে।
দ্রুতগতির যান চলাচলের জন্য সড়কের মাঝ বরাবর পৃথক দুটি লেন করা হবে। সেখানে দ্রুত, নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব পরিবহন ব্যবস্থায় ঘণ্টায় ৪০ হাজার যাত্রী চলাচল করতে পারবে। বিআরটি কর্তৃপক্ষ জানায়, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ এখন পুরোদমে চলছে। ২০২২ সালের জুনে গাজীপুর-বিমানবন্দর অংশটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা সম্ভব হবে। এ রুটটি চালু হলে গণপরিবহন ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যোগ হবে। সাড়ে ২০ কিলোমিটার পথ যেতে সর্বোচ্চ আধা-ঘণ্টা লাগবে। ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে যাতায়াতে স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে আসবে। যাত্রীরা দ্রুত কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারবেন।
বিআরটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপক (সওজ অংশ) মো. কায়সার হামিদ জানান, ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৫৫ ভাগ কাজ শেষ হয়ে গেছে। টঙ্গী কলেজ গেট থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে দুই দুই করে চার লেনের রাস্তার কাজ আগামী এক মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। বিআরটি লেনও হয়ে যাবে। বিআরটি স্টেশনগুলোর কাজও চলছে। ফ্লাইওভারের কাজও চলমান রয়েছে। সড়কের সাইড রাস্তার কাজও চলতে থাকবে।
তিনি আরও বলেন, আগামী বছরের জুনে পুরো কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। আশা করছি- নির্ধারিত সময়েই কাজ শেষ হয়ে যাবে। সড়কের দুই পাশের ড্রেনগুলো পরিষ্কার করার কাজ চলছে। ড্রেনগুলোর ময়লা পরিষ্কার হয়ে গেলে আর কোনো সমস্যা থাকবে না। তখন শুধু ফ্লাইওভারের কাজ চলমান থাকবে।