বাংলাদেশের যুবকশক্তিকে বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের অন্যতম নিয়ামক হিসেবে প্রতিষ্ঠার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জাতিসংঘের শান্তি মিশনে কর্মরতদের বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের পেশাদারিত্ব, সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার মাধ্যমে দায়িত্ব পালনের আহ্বানও জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শনিবার ‘আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২১’ এর অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। সেনাকুঞ্জের এই অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগ দেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর সকল শান্তিরক্ষীদের বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে পেশাদারিত্ব, সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা বজায় রাখার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
“প্রয়োজনীয় সকল সরঞ্জামসহ…বাংলাদেশের সকল শান্তিরক্ষী যাতে আরও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে স্ব স্ব অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারেন, তার জন্য যা যা প্রয়োজন আমরা অবশ্যই সবকিছুর ব্যবস্থা করব। এই প্রচেষ্টা আমাদের থাকবে।” ‘আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২১’ এর প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশ যুবশক্তিকে বিশ্ব শান্তির অন্যতম নিয়ামক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় বলেও অনুষ্ঠানে জানান শেখ হাসিনা।
“কারণ আমাদের তরুণ সমাজ, তারাও যেন এটা শেখে- শান্তিই একমাত্র উন্নয়নের পথ, শান্তিই নিরাপত্তার পথ, শান্তিই মানুষের কল্যাণের পথ। সেই পথে যেন সকলে যেতে পারে বা সেভাবে যেন তৈরি হয়, আমরা সেটা চাই।”

বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ বাহিনীর তরুণ সদস্যরা একুশ শতকের বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে এবং আগামীতে যারা আসবে তারাও যেন প্রস্তুত থাকে সেইভাবেই তাদেরকে সরকার তৈরি করতে চায় বলেও জানান শেখ হাসিনা। শান্তিরক্ষায় কর্মরতদের আত্মত্যাগকে সম্মান জানিয়ে ২০০৩ সাল থেকে প্রতিবছর ২৯ মে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস পালন করা হয়। বিশ্বশান্তি রক্ষায় নিয়োজিতরা কেবল দেশের প্রতিনিধিত্বই করছেন না বরং দেশের ভাবমূর্তিও উজ্জল করছেন বলে জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, তাদের সাহসী ভূমিকা বিশ্ববাসী ও দেশের জনগণ চিরকাল স্মরণ করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অধীনে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সদা প্রস্তুত। এটা আমি জাতিসংঘকে আরও স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই। “কারণ এখন ১২২টি দেশের ৮০ হাজার ১৮৪ জন শান্তিরক্ষীর মধ্যে ৬ হাজার ৭৪২ জন বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী রয়েছে। এই সংখ্যা বিশ্বে নিয়োজিত মোট শান্তিরক্ষীর ৮.৪ শতাংশ, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। এছাড়াও বর্তমানে বাংলাদেশের ২৮৪ জন নারী শান্তিরক্ষী বিশ্ব শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছেন।”
বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের সুনামের কথা উল্লেখ করে সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বর্তমানে আটটি মিশনে আমাদের শান্তিরক্ষীরা নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়া দক্ষিণ সুদানে ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার হিসেবে মেজর জেনারেল পদবীর কর্মকর্তা এবং কঙ্গো, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক ও দক্ষিণ সুদানে সেক্টর কমান্ডার হিসেবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদবীর কর্মকর্তা নিযুক্ত রয়েছেন। আমাদের শান্তিরক্ষী বাহিনী তাদের দক্ষতার কারণেই আজকে আমরা এই উচ্চপদ পেতে সক্ষম হয়েছি।”
কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে বিভিন্ন দেশে এখন অসহিষ্ণুতা, অনিশ্চয়তা দেখা দিচ্ছে উল্লেখ করে এই সময়ে অত্যন্ত ধীর স্থিরভাবে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শান্তিরক্ষীদের পরামর্শ দেন তিনি। শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করা বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের পরিবারের সদস্য এবং আহত শান্তিরক্ষীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয় অনুষ্ঠানে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ওপর একটি বিশেষ উপস্থাপনাও পরিবেশন করা হয়।
সেনাকুঞ্জ প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন শহীদ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের পরিবারের সদস্য এবং আহত শান্তিরক্ষীদের প্রতিনিধিদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ছাড়াও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পো অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
সেনাকুঞ্জে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধান, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সামরিক ও অসামরিক ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।