কক্সবাজারের টেকনাফে বঙ্গোপসাগরে নাফ নদের মোহনায় মাছ শিকারের সময় অস্ত্রের মুখে ধরে নিয়ে যাওয়া ২০ জেলেকে দুই দিন পর ফেরত দিয়েছে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) বিকালে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া দুটি নৌকায় বিজিবির মাধ্যমে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘাটে জেলেরা ফেরত আসেন। পরে ফেরত আসা জেলেদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে বিজিবি। তবে জেলেদের ব্যবহৃত ১৭টি নৌকাসহ জাল ফেরত দেয়নি।
এর আগে সোমবার (৫ নভেম্বর) বিকালে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের অদূরে নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা থেকে ১৭টি নৌকা ও ২০ মাঝিমাল্লাসহ জাল নিয়ে গেছে।
টেকনাফ ২ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল মহিইদ্দীন আহমেদ বলেন, বঙ্গোপসাগরে নাফ নদে মাছ শিকারের সময় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের শুন্যরেখা অতিক্রম করে মিয়ানমারের জলসীমার নাইক্ষ্যংদিয়া নামক স্থানে ঢুকে পড়ে। এ সময় মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে নৌকাসহ ২০ বাংলাদেশি জেলেকে আটক করে নিয়ে যায়। পরে তাদের (আরকান আর্মি) সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করি। এক পর্যায়ে বৃহস্পতিবার বিকালে জেলেদের ফেরত আনা হয়েছে। তবে জেলেদের ব্যবহৃত নৌকাসহ জাল ফেরত দেয়নি। আমরা এ বিষয়ে কথা বলছি।
ফেরত আসা জেলেরা হলেন– হাসিম (৩০), হোসেন (২০), মহি উদ্দিন (২২), এনায়েত উল্লাহ (৩২), আব্দুল শুক্কুর (৩৫), নুর হাফেজ (২২), ইয়াছিন (৩০), আবদুর রহিম (২৪), হাসান আলি (৩৩), ওসমান গনি (৩০), শাহ আলম (২২), আসমত উল্লাহ (২০), আব্দুল শুক্কুর (২৬), আবুল হোসেন (১৭), আয়ুব খান (৩০), নুর হোছন (২২), বেলাল (১৮), সলিম (২৭), আবদুল কাদের (২২) ও ইবনে আমিন (৩৫)। তারা সবাই টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়ার বাসিন্দা।
ফেরত আসা জেলে এনায়েত উল্লাহ বলেন, দুইটা ইঞ্জিন চালিত নৌকা নিয়ে মাছ ধরে ফেরার পথে নাইক্ষ্যংদিয়া থেকে আমাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে চোখে কাপড় বেঁধে ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। তখন তারা শর্ত বেঁধে দিয়ে টিপ সই নেন। এবার নাকি আমাদের ক্ষমা করে দিছে, যদি আরেকবার ধরতে পারে বাংলাদেশে আর ব্যাক দেবে না বলে জানিয়ে দেয়। যদি নাইক্ষ্যংদিয়াই মাছ শিকার করতে হয়, আরকান আর্মি সরকার এবং বাংলাদেশ সরকার থেকে চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে।
ফেরত আসা জেলে আব্দুল করিম বলেন, আজীবন নাইক্ষ্যংদিয়াই মাছ শিকার করছি। এ বছর আরকান আর্মি বাধা সৃষ্টি করতেছে। যুগ যুগ ধরে আমাদের বাপ-দাদারা সে স্থানে মাছ শিকার করে আসছিল। সে সূত্র ধরেই আমরা সেখানে মাছ শিকারে যাই।
তিনি বলন, মিয়ানমার দুই বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে বেড়ে যাওয়ায় আমাদের নাইক্ষ্যংদিয়াই জায়গায় তারা দখল করতে চাই। তাই সে জায়গায় তারা মাছ শিকার না করতে অনুরোধ জানিয়েছে। মাছ শিকার করলে কঠোর শাস্তি দেবে বলছে।
এ বিষয়ে নৌকার মালিক নুরুল ইসলাম বলেন, নাফ নদে মাছ শিকারের সময় নৌকাসহ ২০ জেলেকে ধরে নিয়ে যায়। অবশেষে বিজিবির প্রচেষ্টায় দুই দিন পর জেলেদের ফেরত আনা হয়েছে। তবে জেলেদের ব্যবহৃত ১৭টি নৌকা আর জালগুলো ফেরত দেয়নি। তাছাড়া নাফ নদেতে এ ধরনের ঘটনায় বেড়ে যাওয়ায় জেলেদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।