যেভাবে কাটবেন বাণিজ্য মেলার টিকিট, নেই ভোগান্তি
বাংলাদেশ

যেভাবে কাটবেন বাণিজ্য মেলার টিকিট, নেই ভোগান্তি

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা এবার শুরু থেকেই জমে উঠেছে। প্রতিদিন কয়েক হাজার ক্রেতা-দর্শনার্থী আসছেন। এবারের মেলায় এই প্রথম অনলাইনে বিভিন্ন ক্যাটাগরির স্টল ও প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে প্রথমবার ই-টিকেটিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

ই-টিকেটিংয়ের ব্যবস্থা করায় আগে থেকেই ঘরে বসে টিকিট কেটে সহজেই মেলায় প্রবেশ করা যাচ্ছে। আবার কেউ কাটতে না পারলে মেলা প্রাঙ্গণে এলে টিকিট বুথ থেকে কেটে দেওয়া হচ্ছে। ফলে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটার জন্য সময়ক্ষেপণ কিংবা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে না ক্রেতা-দর্শনার্থীদের। 

টিকিটের দাম কত

মাসব্যাপী এই মেলা সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন খোলা থাকছে রাত ১০টা পর্যন্ত। মেলায় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য টিকিটের মূল্য ৫০ টাকা এবং ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা তাদের কার্ড দেখিয়ে বিনামূল্যে মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন।

অনলাইনে যেভাবে টিকিট কাটবেন

ঘরে বসে মেলার টিকিট কাটতে পারবেন ক্রেতা-দর্শনার্থীরা। এজন্য ভিজিট করুন ditf2025.com এই লিঙ্কে। এই লিঙ্কে প্রবেশ করার পর প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের টিকিট বুকিংয়ের আলাদা অপশন রয়েছে। সেখানে বয়সসীমা লেখার পর কয়টি টিকিট কিনতে চান, তা লিখতে হবে। একজন সর্বোচ্চ ১০টি কিনতে পারবেন। দুই থেকে ১২ বছর পর্যন্ত শিশুদের প্রতি টিকিটে ২৫ টাকার সঙ্গে চার্জ হিসেবে আরও এক টাকা ২৫ পয়সা যুক্ত হবে। ১২ বছরের ঊর্ধ্বে ব্যক্তিদের প্রতি টিকিটে ৫০ টাকার সঙ্গে চার্জ যুক্ত হবে দুই টাকা ৫০ পয়সা।

এরপর নিচে মোবাইল নম্বর দেবেন। এর পাশে ইমেইল দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। আপনি ইমেইল দিলে টিকিট সংক্রান্ত তথ্য আপনার মেইলে চলে যাবে। সবশেষে টিকিটের টাকার পরিমাণ দেখে নিচে ক্লিক বাটনে চাপলে ডিজি ই-পে’র মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং থেকে বিকাশে, নগদ, ইউপে, সেলফিন, মেঘনা পে ব্যবহার করে করে টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। এ ছাড়া ভিসা/মাস্টার কার্ড ও আইবিবিএল কার্ড ব্যবহার করে টিকিটের টাকা দেওয়ার সুযোগ আছে। নেট ব্যাংকিং সুবিধায় পূবালী ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংক থেকে টাকা পরিশোধ করতে পারেন। বাংলা কিউআর কোড ব্যবহার করে টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। পরবর্তীতে বাণিজ্য মেলার গেটে সেই টিকিটের কপি থেকে কোড স্ক্যান করে প্রবেশ করতে পারবেন। 

এ ছাড়া মেলার প্রবেশ গেটে বেশ কয়েকটি টিকিট বুথ রয়েছে। সেখানে গেলে সহজে ই-টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন। পরে সেই কিউআর কোড স্ক্যান করার মাধ্যমে মেলায় ঢুকতে পারবেন।

লাইনে দাঁড়ানোর দিন শেষ

মঙ্গলবার (০৭ জানুয়ারি) বিকালে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মেলায় এসেছেন ব্যবসায়ী জাভেদ মিয়া। তিনি বলেন, ‘এই প্রথম অনলাইন টিকিট নিয়ে মেলায় প্রবেশ করছি। তবে অনলাইনে টিকিট কাটার দক্ষতা তেমন নেই। এজন্য নিজে কাটতে পারিনি। মেলার গেটে বুথ থেকে কেটেছি। পরে কিউআর কোড স্ক্যান করে মেলায় ঢুকেছি। গতবারও এসেছিলাম। তখন টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হয়েছিল। এবার লাইনে দাঁড়ানোর ভোগান্তি শেষ।’

রাজধানীর উত্তরা থেকে মেলায় বন্ধুদের নিয়ে এসেছেন শিক্ষার্থী আরফান হোসেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অনলাইনে টিকিট কাটার বিষয়টি খুবই চমৎকার। এতে করে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার বিড়ম্বনায় পড়তে হয় না। আমরা তিন বন্ধু অনলািইনে টিকিট কেটে এসেছি। বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেছি।’

ভোগান্তি নেই জানালেন মেলার পরিচালক

এ বিষয়ে বাণিজ্য মেলার পরিচালক বিবেক সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অনলাইনে টিকিট কাটার সুবিধা এবার প্রথম করা হয়েছে। ফলে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটার বিড়ম্বনা নেই। অনলাইনে টিকিট কেটে কিউআর কোড ব্যবহার করে ক্রেতা-দর্শনার্থীরা প্রবেশ করতে পারছেন। ডিজি ই-পে অ্যাপ ব্যবহার করেও টিকিট নেওয়া যায়। তবে যদি কেউ অনলাইনে টিকিট কাটতে না পারেন, সেক্ষেত্রে মেলার গেটে বুথ রয়েছে। সেখান থেকে অনলাইনে টিকিটের ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে। কোনও ধরনের ভোগান্তি নেই।’

জুলাই ও ২৪ চত্বর

এবারের মেলায় প্রথমবার অনলাইনে বিভিন্ন ক্যাটাগরির স্টল/প্যাভিলিয়ন স্পেস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ক্রেতা-দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিআরটিসির নির্ধারিত বাসসেবা থাকছে। পাশাপাশি থাকছে বিশেষ ছাড়ে উবার সেবা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের সম্মানার্থে মেলায় তৈরি করা হয়েছে জুলাই চত্বর ও ২৪ চত্বর। তরুণসমাজকে রফতানি বাণিজ্যে উদ্বুদ্ধ করতে ইয়ুথ প্যাভিলিয়ন তৈরি করা হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) মেলার যৌথ আয়োজক। দেশীয় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিদেশি সাত দেশের ১১ প্রতিষ্ঠান এবারের মেলায় অংশ নিয়েছে। অংশগ্রহণকারী দেশগুলো হলো- ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, হংকং ও মালয়েশিয়া।

থাকছে যেসব কর্নার

মেলায় এ বছরই প্রথম সম্ভাবনাময় খাত/পণ্যভিত্তিক সেমিনার আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদেশি উদ্যোক্তা বা প্রতিষ্ঠানের সুবিধার্থে থাকছে স্বতন্ত্র সোর্সিং কর্নার, ইলেকট্রনিকস ও ফার্নিচার জোন। বয়সভিত্তিক দর্শনার্থীদের সুবিধায় তৈরি করা হয়েছে প্রযুক্তি কর্নার, জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের জন্য সিটিং কর্নার। শিশুদের নির্মল চিত্তবিনোদনের জন্য মেলায় থাকছে শিশুপার্ক। মা ও শিশুদের জন্য মেলায় থাকবে মা ও শিশুকেন্দ্র। দর্শনার্থীদের বিশ্রামের জন্য আরামদায়ক এবং শোভন চেয়ার ও বেঞ্চ রয়েছে।

ই-টিকেটিংয়ের ব্যবস্থা করায় আগে থেকেই ঘরে বসে টিকিট কেটে সহজেই মেলায় প্রবেশ করা যাচ্ছে

৩৬২ প্যাভিলিয়ন ও স্টল

বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৩৬২টি প্যাভিলিয়ন, স্টল ও রেস্তোরাঁ আছে এবারের মেলায়। দেশীয় উৎপাদক-রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানসহ সাধারণ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে শত ভাগ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে এসব বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দেশীয় বস্ত্র, যন্ত্রপাতি, কার্পেট, প্রসাধনসামগ্রী, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস পণ্য, আসবাব, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহস্থালি সামগ্রী, চামড়া, আর্টিফিশিয়াল চামড়া, জুতাসহ চামড়াজাত পণ্য, খেলার সামগ্রী, স্যানিটারিওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক, মেলামিন, পলিমার, হারবাল, টয়লেট্রিজ, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, ফাস্ট ফুড, হস্তশিল্পজাত পণ্য, গৃহসজ্জার উপকরণ ইত্যাদি মেলায় প্রদর্শন ও বিক্রি হচ্ছে।

বিনামূল্যে প্রাথমিক চিকিৎসা

মেলায় আগত দর্শনার্থীদের জন্য সার্বক্ষণিক চিকিৎসক উপস্থিত থেকে বিনামূল্যে প্রাথমিক চিকিৎসা ও চিকিৎসা পরামর্শ দেবেন। মেলায় পাঁচ শতাধিক গাড়ি পার্কিং সুবিধাসংবলিত দ্বিতল কার পার্কিং ভবন রয়েছে। এ ছাড়া মেলা কেন্দ্রের বাইরে আছে ছয় একর জমিতে পার্কিংয়ের আলাদা ব্যবস্থা।

তথ্যকেন্দ্র ও ব্যাংক বুথ 

মেলার সার্বিক কার্যক্রম তদারকির জন্য মেলায় স্থাপন করা হয়েছে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও দর্শনার্থীদের সব ধরনের তথ্য দেওয়ার জন্য রয়েছে তথ্যকেন্দ্র। ব্যাংকিং সেবার জন্য মেলায় অনেক ব্যাংক বুথ স্থাপন করেছে। জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের জন্য বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

 

Source link

Related posts

নারায়ণগঞ্জ থেকে চলবে না ছোট লঞ্চ

News Desk

প্রথমবারের মতো বাতাসি মাছের পোনা উৎপাদন

News Desk

করোনায় ঢাকায় মৃত্যু বেড়েছে প্রায় দেড় গুণ

News Desk

Leave a Comment