যে কারণে আগুন নেভাতে ৮৬ ঘণ্টা লেগেছে
বাংলাদেশ

যে কারণে আগুন নেভাতে ৮৬ ঘণ্টা লেগেছে

সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ড্রামভর্তি কেমিক্যাল কনটেইনারে থাকার কথা ফায়ার সার্ভিসকে জানায়নি মালিকপক্ষ। এ কারণে কেমিক্যালভর্তি কনটেইনারের আগুন পানিতে নেভানো সম্ভব হয়নি। কেমিক্যালের কারণে এক কনটেইনার থেকে আরেক কনটেইনারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এজন্য আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লেগেছে ৮৬ ঘণ্টা।

ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় করা মামলার এজাহারে এসব তথ্য উল্লেখ করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (৭ জুন) রাতে ডিপোর আট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সীতাকুণ্ড থানায় এ মামলা করেন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফ সিদ্দিকী। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৩৩৭/৩৩৮/৩০৫.ক/৪২৭ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘বিএম কনটেইনার ডিপোতে আমদানি-রফতানিকৃত গার্মেন্ট পণ্য কনটেইনারে রাখার পাশাপাশি কেমিক্যালভর্তি ড্রামও রাখা হতো। কিন্তু অগ্নিদুর্ঘটনা মোকাবিলায় ডিপো কর্তৃপক্ষের অগ্নিনির্বাপণের পর্যাপ্ত সরঞ্জাম এবং প্রশিক্ষিত জনবল ছিল না। কেমিক্যাল জাতীয় পদার্থের আগুন নেভানোর মতো কোনও ধরনের প্রস্তুতিও তাদের ছিল না। এ অবস্থায় ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হলে ফায়ার সার্ভিসের একাধিক টিম পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ডিপো কর্তৃপক্ষ ড্রামভর্তি কেমিক্যাল কনটেইনারে থাকার বিষয়টি ফায়ার সার্ভিসকে জানায়নি। ড্রামভর্তি কেমিক্যালের কারণে এক কনটেইনার থেকে আরেক কনটেইনারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ফলে এই আগুন পানিতে নেভানো সম্ভব হয়নি। উল্টো ড্রামভর্তি কেমিক্যালের ৬-৭টি কনটেইনার একযোগে বিস্ফোরিত হয়।’ 

আরও পড়ুন: অগ্নিকাণ্ডে হাত হারানো নুরুল ১ নম্বর আসামি, হতবাক স্বজনরা

মামলার এজাহারে পুলিশ আরও উল্লেখ করেছে, ‘বিস্ফোরণের ভয়াবহতায় আশপাশের ২-৩ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা অনেকগুলো ভবনের কাচ টুকরো টুকরো হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। বিস্ফোরিত কনটেইনারের ছড়িয়ে পড়া টুকরোর আঘাতে ঘটনাস্থলে থাকা ফায়ার সার্ভিস কর্মী, পুলিশ সদস্য এবং বিপুল সংখ্যক মানুষ হতাহত হন। এজন্য আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে এত সময় লেগেছে। কর্মকর্তাদের দায়িত্ব অবহেলা, ডিপো পরিচালনায় দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং অব্যবস্থাপনার কারণে অগ্নিকাণ্ড ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।’

মামলার আসামিরা হলেন- বিএম কনটেইনার ডিপোর মহাব্যবস্থাপক নাজমুল আক্তার খান, উপ-মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) নুরুল আক্তার খান, ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) খালেদুর রহমান, সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্বাস উল্লাহ, জ্যেষ্ঠ নির্বাহী (প্রশাসন) নাছির উদ্দিন, সহকারী ব্যবস্থাপক আবদুল আজিজ, ডিপোর শেডের ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম ও সহকারী ডিপো ইনচার্জ নজরুল ইসলাম। এছাড়া ডিপোর অজ্ঞাত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মামলার আসামি করা হয়েছে। সীতাকুণ্ড থানার এসআই আশরাফ সিদ্দিকী বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন।

ডিপোতে আমদানি-রফতানিকৃত গার্মেন্ট পণ্য কনটেইনারে রাখার পাশাপাশি কেমিক্যালভর্তি ড্রামও রাখা হতো

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সীতাকুণ্ড সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল করিম বলেন, ‘পুলিশের মামলায় আট জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ আনা হয়েছে। সেই সঙ্গে ডিপো পরিচালনায় দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ আনা হয়েছে। অজ্ঞাত আরও অনেক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। পুরো ঘটনার তদন্ত চলছে। যদি তদন্তে হত্যাকাণ্ড প্রমাণিত হয়, তাহলে হত্যা মামলাই হবে।’

আরও পড়ুন: সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ড: মামলার আসামি যারা

সীতাকুণ্ড মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মামলায় আট জনকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনায় যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাদেরও মামলায় আসামি করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত মামলার কোনও আসামিকে গ্রেফতার করা হয়নি।’

অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হলে ফায়ার সার্ভিসের একাধিক টিম পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে

প্রসঙ্গত, গত শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। এরপর বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৪৬ জন। এর মধ্যে ৯ জন ফায়ার সার্ভিস কর্মী। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ৪৬ জনের মধ্যে ১৮টি লাশের পরিচয় শনাক্ত হয়নি। তাদের লাশের দাবিতে নমুনা দিয়েছেন স্বজনরা। হিসাবে এখনও পাঁচ জন নিখোঁজ রয়েছেন।

ঘটনার চার দিন পর মঙ্গলবার রাতে মামলা করে পুলিশ। এতে আট জনের নাম উল্লেখ করা হয়। তারা সবাই বিএম কনটেইনার ডিপোর কর্মকর্তা। আগুন লাগার ৮৬ ঘণ্টা পর বুধবার সকালে নেভাতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ও সামরিক বাহিনী।

Source link

Related posts

ভাসানচরে আটকে পড়া ১২ জনকে উদ্ধার

News Desk

চরফ্যাসনে পুলিশের সামনে বোনকে মারধর, ঘর ভাঙচুর-লুটপাট

News Desk

‘আমার জীবন আমার অধিকার, বাল‍্যবিয়ে রুখবো এবার’

News Desk

Leave a Comment