পদ্মা সেতু চালুর পর দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ হলো খুলনা-মোংলা রেললাইনের নির্মাণকাজ। সোমবার (৩০ অক্টোবর) বিকালে এই পথে পরীক্ষামূলক চলাচল করেছে। এদিন বিকাল ৪টায় ফুলতলা স্টেশন থেকে মোংলা বন্দরের উদ্দেশে ট্রেন যাত্রা শুরু হয়। ট্রেনটি সন্ধ্যা ৭টায় মোংলা বন্দরে পৌঁছে। এর মধ্য দিয়ে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুক্ত হলো আরেকটি মাইলফলক। ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ায় মোংলা বন্দর যেমন আরও গতিশীল হবে, তেমনি এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক কার্যক্রম আরও বৃদ্ধি পাবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী বুধবার (০১ নভেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে এই রুটে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করা হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যৌথভাবে ভার্চুয়ালি এই রেলপথ উদ্বোধন করবেন। এর ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিকভাবে যুক্ত হবে ভারত, নেপাল ও ভুটান। পাশাপাশি গতিশীল হবে মোংলা বন্দরের ব্যবসা-বাণিজ্য।
মোংলা বন্দরের ব্যবসায়ী ও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষজন বলছেন, খুলনার সঙ্গে রেল যোগাযোগ শুরু হওয়ায় বন্দরের সক্ষমতা বহুগুণ বেড়ে যাবে। এতে প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল ও ভুটান রেলপথ দিয়ে সহজেই মোংলা বন্দর ব্যবহার করতে পারবে। আগে সড়ক ও নদীপথে এই বন্দরের পণ্য পরিবহন হতো। রেলপথে পণ্য পরিবহনে খরচ কম, এর সুবিধা পণ্যের ওপর যোগ হবে। এই মানুষের জীবনযাত্রায় গতি আসবে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, বন্দরের পণ্য আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে সড়কপথের পাশাপাশি রেল যোগাযোগ জরুরি ছিল। কিন্তু মোংলা বন্দরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ না থাকায় যাতায়াত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় মোংলা বন্দরকে আরও গতিশীল করতে রেল যোগাযোগ স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০১৬ সালের নভেম্বরে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। অবশেষে খুলনা-মোংলা রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হলো।
খুলনা-মোংলা রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান বলেন, ‘খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে। এই রেলপথের দৈর্ঘ্য প্রায় ৯০ কিলোমিটার। প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে চার হাজার ২৬০ কোটি টাকা। রেললাইনের কাজ শেষ। তবে প্রকল্পের কিছু কাজ বাকি আছে। সেগুলো দ্রুত সম্পন্ন করা হবে। সোমবার বিকালে খুলনার ফুলতলা থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত নির্মিত নতুন রেললাইনে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল করেছে। ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই রুটে ট্রেন চলাচল উদ্বোধনের পর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হবে। এজন্য আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে।’
খুলনা-মোংলা রেললাইন ট্রেন চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত বলে জানালেন প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী আহমেদ হোসাইন মাসুম। তিনি বলেন, ‘খুলনা-মোংলা রেললাইনে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলাচল করেছে। এটি চলাচলের জন্য পুরোপুরি উপযোগী। সোমবার বিকাল ৪টায় ফুলতলা থেকে ট্রেন ছাড়ার পর বিভিন্ন পয়েন্ট পর্যবেক্ষণ ও গতি হ্রাস-বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে ট্রেনটি সন্ধ্যা ৭টায় মোংলা বন্দরে পৌঁছে। রুটের কোথাও কোনও সমস্যা আমরা পাইনি। বলা যায়, ট্রেন চলাচলের জন্য রেললাইন পুরোপুরি প্রস্তুত।’
বন্দরের কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে উল্লেখ করে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী বলেন, ‘মোংলার সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এবং নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে পণ্য পরিবহন সাশ্রয়ী এবং সহজ করতে খুলনার ফুলতলা রেলস্টেশন থেকে মোংলা পর্যন্ত রেললাইন প্রকল্পটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ায় বন্দরের আমূল পরিবর্তন ঘটবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের দ্বিগুণ প্রসার ঘটবে। বন্দরের সঙ্গে খুলনাসহ সারাদেশের সংযোগ হবে। মালামালবাহী ট্রেন খুলনা-যশোর হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় যাবে। এতে বন্দরের কার্যক্রম বাড়বে।’
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ্জামান বলেন, ‘খুলনা-মোংলা রেলপথ চালু হলে মোংলা বন্দরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।’
খুলনা চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি কাজি আমিনুল হক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সারাদেশের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগের জন্য যেমন পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছেন, তেমনি নিরবচ্ছিন্ন রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে মোংলা বন্দরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপন করেছেন। এতে গার্মেন্টস পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্য যেমন কম খরচে মোংলা বন্দর থেকে পরিবহন করা যাবে, তেমনি মোংলা বন্দর দিয়ে রফতানি বাড়বে।’
আরও পড়ুন: খুলনা-মোংলায় পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শুরু