রংপুরের সঙ্গে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলাসহ বুড়িমারী স্থলবন্দরে যাতায়াতের একমাত্র সড়কপথ রংপুর-বুড়িমারী জাতীয় মহাসড়কের বর্ধিতকরণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নিম্নমানের সামগ্রী বিশেষ করে মাটি মিশ্রিত বালু, ইটের খোয়া ও পাথর ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের বিরুদ্ধে।
রংপুর থেকে কাউনিয়া অংশে ২৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে মহাসড়কের দুই পাশের ১৪ ফুট সড়ক বর্ধিতকরণের কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার, সড়ক ও জনপথ বিভাগের তদারকি এবং দায়িত্বহীনতার কারণে বর্ধিত অংশ ধসে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
রংপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুর থেকে লালমনিরহাট হয়ে বুড়িমারী স্থলবন্দর পর্যন্ত জাতীয় মহাসড়কটি বিভিন্ন কারণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন ভারত ও ভুটান থেকে ৫০০ থেকে ৭০০ ট্রাকে পাথরসহ বিভিন্ন মালামাল পরিবহন করা হয়। এ ছাড়া লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার ট্রাক-বাসসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল করে। জাতীয় মহাসড়কটি অপেক্ষাকৃত ছোট হওয়ায় সড়কের দুপাশের ১৪ ফুট নতুন সড়ক নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সওজের রংপুরের নির্বাহী প্রকৌশলীর অধীনে রংপুর থেকে কাউনিয়া পর্যন্ত অংশের নতুন সড়ক নির্মাণ করার জন্য ২৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণকাজ শুরু হয়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মীরবাগ বাজার সংলগ্ন মহাসড়কের বর্ধিত অংশে মাটি খুঁড়ে সেখানে উন্নতমানের বালুর পরিবর্তে তিস্তা নদীর মাটি মিশ্রিত ভিটি বালু দেওয়া হচ্ছে। এর ওপর খোয়া আর বালু মিক্সিং করে সেখানে ফেলা হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী বালু আর ইটের খোয়া মেশিনের মাধ্যমে মিশ্রণ করার কথা থাকলেও তা না করে বালু ও নিম্নমানের খোয়া মেশিনের মাধ্যমে কোনোরকমে খোয়ার ওপরে বালু দিয়ে ওলটপালট করে মিশ্রণ দেখানো হচ্ছে। এসব কাজে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কোনও কর্মকর্তাকে তদারকি করতে দেখা যায়নি।
এ ছাড়াও মীরবাগের কাছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের যে স্থানে নির্মাণসামগ্রী রাখা হয়েছে সেখানে বালু ও ইটের খোয়া মেশানো। নিম্নমানের বালু অবাধে ব্যবহার করা হলেও তার তদারকি করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের উৎকোচ নিয়ে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
এ ব্যাপারে ঘটনাস্থলে উপস্থিত সড়ক ও জনপথ বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) এ প্রতিনিধিকে জানান, নিয়ম অনুযায়ী বালু, খোয়া,পাথর এবং বালু-খোয়া মিশ্রণ করা কোনোটাই হচ্ছে না। এভাবে কাজ চললে মহাসড়কটি দুবছরও টিকবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
সার্বিক বিষয় জানতে রংপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজেদুর রহমানের সঙ্গে কথা বলতে তার কার্যালয়ে গেলে তিনি এসব অনিয়মের ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান। তিনি বলেন, ‘ঠিকাদার কাজ করছে। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবো সঠিক হলেই কাজ করতে দেওয়া হবে।’ কিন্তু সড়ক বিভাগের কোনও তদারকি হচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি সওজের একজন উপসহকারী প্রকৌশলীকে ডেকে পাঠিয়ে তাকে বিষয়টি দেখতে বলেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ইতোমধ্যে ৭০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। তবে পুরো কাজটিই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে হয়েছে কিনা তার সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।