রংপুর মেডিক্যাল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের বর্ধিত অংশের চার তলায় ইউরোলজি ও এন্ড্রোক্রাইনোলজি ওয়ার্ডে বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) বিকাল থেকে পানি নেই। এতে রোগী ও স্বজনরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। বন্ধ রয়েছে দুটি ওয়ার্ডের জরুরি অপারেশনসহ সকল কার্যক্রম।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ওই দুই ওয়ার্ডের জন্য দুটি পানির পাম্প রয়েছে। দুটিই বিকল হয়ে পড়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তবে কবে সচল হবে সে ব্যাপারে কেউ কিছু জানাতে পারেনি।
শুক্রবার (২৫ মার্চ) দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, ইউরোলজি ও এন্ড্রোক্রাইনোলজি ওয়ার্ডে পানি নেই। তবে তৃতীয় তলায় অর্থোপেডিক ও গ্যাস্ট্রোলজিসহ অন্য ওয়ার্ডে পানি সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে।
হাসপাতালে আসা রোগী ও স্বজনরা জানান, আজ সকালে দুই ঘণ্টার জন্য ওই ওয়ার্ডগুলোতে পানি ছিল না। ইউরোলজি ও এনড্রোক্রাইলজি বিভাগে পানি সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ।
ইউরোলজি ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী থেকে আসা শামসুল ইসলাম। পানির অভাবে তার জরুরি অপারেশন বন্ধ রয়েছে। বাধ্য হয়ে স্বজনরা তাকে বাইরে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন।
শামসুল ইসলামের মেয়ে আমিনা ইসলাম বলেন, ‘ভাবতেই অবাক লাগে, এত বড় হাসপাতালে পানির অভাবে জরুরি অপারেশন বন্ধ! আমার বাবা খুব কষ্ট পাচ্ছেন। বাধ্য হয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি।’
হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগে চার শতাধিক রোগী ভর্তি রয়েছেন। জায়গার সংকুলান না হওয়ায় ওয়ার্ডের করিডোরে শতাধিক রোগী মেঝেতে বসে আছেন।
দিনাজপুরের বিরামপুর থেকে আসা আনোয়ার হোসেন ও ফুলবাড়ি থেকে জোসনা বেগম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে পানি সরবরাহ বন্ধ। আমরা চরম দুর্ভোগে পড়েছি। কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। পানির অভাবে টয়লেটে দুর্গন্ধ বেড়েছে। হাসপাতালে বসে থাকায় মুশকিল হয়ে পড়েছে।’
ইউরোলজি ওয়ার্ডে কর্তব্যরত নার্স আকলিমা বেগম জানান, দুটি ওয়ার্ডে বৃহস্পতিবার থেকে পানি সরবরাহ বন্ধ। অন্য ওয়ার্ডে পানি আছে। ইউরোলজি ও এন্ড্রোক্রাইনোলজি পাশাপাশি ওয়ার্ড। এই দুই ওয়ার্ডে পানি সরবরাহ বন্ধ থাকায় তারা চরম বিপাকে পড়েছেন।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কর্তব্যরত এক ইন্টার্ন চিকিৎসক বলেন, ‘পানির অভাবে জরুরি অপারেশনসহ সকল কার্যক্রম বন্ধ। স্যাররা আসেন না, আমরা কী করবো?’
হাসপাতালের এন্ড্রোক্রাইনোলজি ওয়ার্ডে একই দৃশ্য দেখা যায়। পানির অভাবে রোগী ও তাদের স্বজনরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
ওয়ার্ড মাস্টার সাহাবুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে পানি সরবরাহের দায়িত্ব গণপূর্ত বিভাগের। এ জন্য হাসপাতালে একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলীর কার্যালয় রয়েছে। তাদের কাছে বেশ কয়েকবার আমরা অভিযোগ করেছি। তারা শুধু বলছেন, পানির পাম্প বিকল হয়ে গেছে। সচলের চেষ্টা চলছে। তারা ঠিকমতো বলতে পারছেন না, কবে কখন সচল করা যাবে।
হাসপাতাল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত গণপূর্ত বিভাগ রংপুর মেডিক্যাল কলেজ শাখা কার্যালয়ের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রাজিয়া সুলতানা বলেন, দুটি পাম্প নষ্ট হয়েছে। সেগুলো মেরামতের চেষ্টা করা হচ্ছে।
হাসপাতালের পরিচালক রেজাউল করিম জানান, বিষয়টি গণপূর্ত বিভাগকে জানানো হয়েছে। তারাই এসব বিষয় দেখাশোনা করে থাকে। এ ব্যাপারে কারও গাফিলতি রয়েছে কি-না খতিয়ে দেখা হচ্ছে।