রাখাইনে গৃহযুদ্ধের মধ্যেও থামছে না মাদক পাচার
বাংলাদেশ

রাখাইনে গৃহযুদ্ধের মধ্যেও থামছে না মাদক পাচার

বাংলাদেশের সীমান্তঘেঁষা যুদ্ধবিধ্বস্ত রাখাইনের বেশিরভাগ এলাকাই বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির দখলে। মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির সংঘাত শুরুর পরে গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে নদীপথে দেশটির সঙ্গে সীমান্ত-বাণিজ্য একরকম বন্ধ। অলস পড়ে আছে টেকনাফ স্থলবন্দর। বাণিজ্য বন্ধ থাকলেও কমছে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক আসা। এমন পরিস্থিতিতে মাদকপাচার রোধে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে টহল জোরদার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত টেকনাফ সীমান্ত-নাফনদের বিভিন্ন পয়েন্টে অভিযানে মিয়ানমার থেকে পাচারকালে পৌনে ৫ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এসময় পাঁচ জন মাদক পাচার কারীকেও আটক করা হয়। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন সদ্য যোগদানকারী টেকনাফ বিজিবি-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান।

বিজিবি বলছে, সবশেষ রবিবার (১২ জানুয়ারি) ভোরে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া এলাকার ডাবল জোড়া নামক এলাকা দিয়ে মিয়ানমার থেকে মাদকের একটি চালান আসার খবরে বিজিবির সদস্যরা সেখানে টহল-নজরদারি বৃদ্ধি করে। পরে মিয়ানমার জলসীমা থেকে কর্কশিট দিয়ে তৈরি এক ধরনের ভেলায় মাদক নিয়ে নাফনদী সাঁতরে আসা দুই পাচারকারীকে দেখে অভিযান চালানো হয়। ঘন কুয়াশার আড়ালে নদী সাঁতরিয়ে শূন্য লাইন অতিক্রম করে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের অপর পাশে পালিয়ে যায় তারা। পরে তাদের ফেলে যাওয়া ভেলা তল্লাশি চালিয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

এ বিষয়ে বিজিবি-২ অধিনায়ক আশিকুর রহমান বলেন, ‘রবিবার ভোরে মাদকের একটি বড় চালান পাচারের গোপন তথ্যের ভিত্তিতে দমদমিয়াস্থল নাফনদে তীরে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ২৫টি প্লাস্টিকের ব্যাগে থাকা ২ লাখ ৫০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। আমাদের মাদকবিরোধী অভিযান চলমান রয়েছে। আমরা ১২ দিনে প্রায় ৫ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘মাদক রোধসহ সীমান্তে যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি খুব শক্ত অবস্থানে রয়েছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গার পাশাপাশি কোনও মাদক নিয়ে ঢুকতে না পারে, সেজন্য বিজিবি রাত-দিন টহল অব্যাহত রেখেছে।’ সীমান্তে অপরাধ সম্পূর্ণভাবে রোধে স্থানীয়দের সহযোগিতাও কামনা করেন বিজিবির এই কর্মকর্তা।

বিজিবির তথ্য বলছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ১ হাজার ৯৭০ পিস ইয়াবা, ৩ জানুয়ারি ৬ হাজার ইয়াবা, ৪ জানুয়ারি ২ লাখ ৩০ হাজার ইয়াবা, ৬ জানুয়ারি ৯৬৫ পিস ইয়াবা, ১০ জানুয়ারি ৭৭৫ পিস ইয়াবা ও ১২ জানুয়ারি ২ লাখ ৫০ হাজার উদ্ধার করেছে বিজিবি। এসব অভিযানে আটক হয়েছে পাঁচ জন।

সীমান্ত দিয়ে নানা কৌশলে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথ আইস পাচার হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এর পেছনে পৃষ্ঠপোষকতায় বারবার নাম আসে মিয়ানমার সরকারের জান্ত বাহিনী ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক তালিকায় বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির অধীনেই ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক বেচা-বিক্রি হয়ে আসছে।

এখন যেহেতু এসব এলাকার নিয়ন্ত্রণ বিজিপির নেই, তাই প্রশ্ন উঠেছে এখন কীভাবে মাদক আসছে। গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে মাসব্যাপী তুমুল লড়াইয়ের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বিজিপি ঘাঁটিগুলো এখন আরাকান আর্মির দখলে। ঘাঁটিগুলোতে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন আরাকান আর্মির সদস্যরা। বিশেষ করে গত ৮ ডিসেম্বর রাখাইনে মংডু টাউনশিপ আরাকান আর্মির দখলের পর বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত-বাণিজ্যও বন্ধ হয়ে গেছে।

নদীপথে বিজিবির টহল

স্থানীয়দের অভিযোগ, এখন বিজিপির স্থলে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছেন আরাকান আর্মির সদস্যরা। কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখন আরাকান আর্মির সিন্ডিকেট করে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে মাদক পাচার করছে। তা না হলে সীমান্ত দিয়ে মাদক পাচার বন্ধ হচ্ছে না কেন? বিষয়টি আমি জেলা আইনশৃঙ্খলা সভাতেও বলেছি। কেননা আরাকান আর্মি সম্প্রতি সময়ে রাখাইনে মংডু টাউশিপ দখলের পর থেকে মাদক পাচার বেড়ে গেছে।’

তার অভিযোগ, ‘মূলত তারা (আরাকান আর্মি) সে দেশ থেকে গবাদি পশু এবং মাদক পাঠাচ্ছে বাংলাদেশে। মাদকের টাকায় তার বিপরীতে বিভিন্ন কৌশলে সে দেশে (মিয়ানমার) চোরাচালানে পাচার হচ্ছে রসদসহ বিভিন্ন মালামাল। সরকারের উচিত এই মূর্হতে এটি বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া, তা না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেবে।’

সীমান্তের স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুস সালাম বলেন, ‘এখন মাদকের নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। মিয়ানমারের সংঘাত পরিস্থিতিতে আরাকান আর্মির ভূমিকা পরিষ্কার না। এখন মাদকের চালান প্রবেশ অনেক বেশি চিন্তার।’ তবে বিজিবি সীমান্তে মাদকপাচার রোধে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সীমান্তে মাদক আসা প্রতিহত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা একযোগে কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন।

এদিকে মিয়ারমারের সংঘাতে মংডু টাউনশিপ আরাকান আর্মি দখলের পর থেকে গত ৮ ডিসেম্বরের পর থেকে মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে কোনও ধরনের পণ্যেবাহী ট্রলার আসেনি। ফলে স্থলবন্দর অচল হয়ে পড়ে আছে। অভিযোগ রয়েছে, আরাকান আর্মির ‘প্রতিবন্ধকতার’ কারণে কোনও ট্রলার না আসলেও সীমান্তে মাদক পাচার বেড়েছে।

Source link

Related posts

ডিবিতে সাংবাদিক রোজিনার মামলা

News Desk

করোনা উপসর্গে নিয়ে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিবের মৃত্যু

News Desk

চাঁদপুরে বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত, শহরে জলাবদ্ধতা

News Desk

Leave a Comment