রাজশাহী মহানগরীতে নানা ধরনের অপরাধে জড়াচ্ছে কিশোর গ্যাং সন্ত্রাসীরা। হত্যা, সন্ত্রাসী হামলা, চাঁদাবাজি, মাদক বিক্রি ও মাদক গ্রহণ ছাড়াও তারা চুরি ছিনতাইয়ের মতো অপরাধে জড়াচ্ছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের তারা উত্ত্যক্ত ও যৌন হয়রানি করছে। গ্রেফতার হলেও আইনের দুর্বলতার কারণে আদালত থেকে তারা দ্রুত ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। জামিনে বেরিয়ে তারা আবারও একই অপরাধে জড়াচ্ছে। মহানগরীতে পাঁচ শতাধিক কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যের ডাটাবেজ তৈরি করেছে পুলিশের সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ। র্যাবও জেলাব্যাপী কিশোর গ্যাঙের তালিকা তৈরি।
Mir Concrete
জানা গেছে, রাজশাহী মহানগরীতেও কিশোর গ্যাঙের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। সন্ধ্যা হলেই এসব কিশোর দলবেঁধে মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে সড়কে নেমে পড়ে। বিভিন্ন সড়কে মোটরসাইকেল রেসে তারা লিপ্ত হচ্ছে। পথচারি নারীদের শাড়ি ওড়না ধরে তারা অহরহ টান দেয়। সুযোগ পেলে তারা ছিনতাইও করে। মহানগর পুলিশের সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের ইনচার্জ সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার উৎপল কুমার চৌধুরী জানান, কিশোর গ্যাঙের অপরাধমূলক তৎপরতা দমনে নগরজুড়ে সিসিটিভিতে সার্বক্ষণিক মনিটর করা হচ্ছে। পাঁচ শতাধিক কিশোর তরুণের ডাটাবেজ করা হয়েছে। অভিভাবকদের ডেকে সতর্ক করা হচ্ছে। রাজশাহীতে র্যাব-৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ার জানান, জেলাব্যাপী কিশোর গ্যাঙের তালিকা প্রণয়ন করছে র্যাব। কিছুটা সময় লাগছে। তালিকা হলে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হবে।
গোদাগাড়ী, বাগমারা, চারঘাট ও বাঘা এলাকায়ও কিশোর গ্যাঙের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়েছে। ৬ অক্টোবর বাগমারা উপজেলার বারইপাড়া গ্রামে এক বৌভাতের অনুষ্ঠানে দুই স্কুলছাত্রীকে যৌন হয়রানি করে একদল কিশোর। ওড়না ধরে তারা টানাটানি করে। দুই কিশোরকে ধরে অভিভাবকদের খবর দেন লোকজন। অভিভাবকরা মুচলেকা দিয়ে তাদের ছাড়িয়ে নেয়। এ ঘটনার জের ধরে ৯ অক্টোবর পাশের বিলবাড়ি গ্রামে এক যুবক গেলে তাকে মারধর করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এ নিয়ে বারইপাড়া ও বিলবাড়ি গ্রামের কিশোরদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে যুবক সাজেদুর রহমান গুরুতর আহত হয়। ১১ অক্টোবর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে সাজেদুর মারা যায়। বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম জানান, বিয়েবাড়িতে দুই স্কুলছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করা নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। কিশোর গ্যাং সদস্যদের কারণেই সাজেদুরের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন পুলিশ।
এ ছাড়া ৭ সেপ্টেম্বর গোদাগাড়ীতে স্কুলছাত্র সামিউল আলমকে অপহরণ ও পরে পরিত্যক্ত ইটভাটায় নিয়ে পৈশাচিক কায়দায় নির্যাতন করে একদল কিশোর সন্ত্রাসী। সামিউলের শরীরের বিভিন্ন স্থানে জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাঁকা দেওয়া হয়। রামেক হাসপাতালে এক সপ্তাহ চিকিৎসা নিয়েছে সামিউল। সামিউল বাড়ি ফিরলেও ট্রমা থেকে বেরুতে পারেনি বলে জানিয়েছেন তার বাবা জাহাঙ্গীর আলম। এ ঘটনার হোতা কিশোর গ্যাং লিডার পলাশ স্কুলছাত্রী অপহরণ মামলায় কারাগারে। গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম জানান, কিশোর গ্যাঙের ১৫ সদস্যের তালিকা পেয়েছি। মাদক সেবনের অভিযোগে অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে তারা জামিনে বেরিয়ে আসে এবং এলাকায় আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে। নতুন তালিকা হলে আবারও অভিযান চালানো হবে।
জানা গেছে, কিশোর সানাউল্লাহ সানার নেতৃত্বে গোদাগাড়ীতে মাদকাসক্ত ১০ থেকে ১২ জনের একটি গ্রুপ বেশ সক্রিয়। সন্ধ্যা হলেই মোটরসাইকেল নিয়ে তারা পৌর এলাকার একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়ায়। মাদক ব্যবসায়ীদের বখাটে সন্তানরা দামি মোটরসাইকেল নিয়ে সারা দিন বিভিন্ন স্থানে দাপিয়ে বেড়ায়। বিভিন্ন স্কুল-কলেজের প্রধান ফটকের সামনে তাদের দেখতে পাওয়া যায়। পৌর এলাকার রেলবাজার ও মাদারপুরে কিশোরদের তিনটি গ্রুপ রয়েছে।