আগে আসে আবার পরে যায় দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের শীত। হিমালয়ের কোলঘেঁষে অবস্থিত জেলাটিতে ঠান্ডা আবহাওয়া জেঁকে বসেছে। অগ্রহায়ণের শেষ দিকে এসে যেন পৌষের শীত পড়ছে পঞ্চগড়ে। রাতে শীত দিনে গরম—এভাবেই দিন পার করছেন জেলার বাসিন্দারা। আজও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ‘হিমালয়কন্যা’ খ্যাত জেলাটিতে।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে ভোর ৬টায় ১১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। আগের দিনের তুলনায় সামান্য বেড়েছে তাপমাত্রা।
পঞ্চগড়ের প্রথম শ্রেণির তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্র নাথ বলেন, ‘সামান্য তাপমাত্রা বাড়লেও গত ৯ দিন ধরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে তেঁতুলিয়ায়। বুধবার সকাল ৯টায় ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৫ শতাংশ। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টায় ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছিল।’
দিনে-রাতে দুই রকম আবহাওয়ার কারণে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে জ্বর-সর্দিসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগব্যাধি। পর্যটকদের কাছে এই শীত উপভোগ্য হলেও ভোগান্তি বেড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষের।
বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, সকাল সকাল ঝকঝকে রোদ ছড়িয়েছে প্রকৃতিতে। রাত থেকে সকাল পর্যন্ত কনকনে শীত অনুভূত হলেও রোদ থাকায় দিনের বেলায় শীতের প্রভাব পড়ছে না কাজকর্মে। সকাল সকাল কাজে বেড়িয়েছেন চা ও পাথরশ্রমিক, দিনমজুর থেকে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
স্থানীয়রা বলছেন, সন্ধ্যার পর থেকেই শুরু হয় ঠান্ডা বাতাস। রাত বাড়তে থাকলে বাড়ে কনকনে শীতের প্রকোপ। সাধ্য অনুযায়ী শীত নিবারণে লেপ, কম্বল ও কাঁথা নিতে হচ্ছে রাতে। সকাল ৯টার পর থাকছে না ঠান্ডার প্রভাব। দিনে-রাতে দুই রকম আবহাওয়ার কারণে প্রায় ঘরে ঘরে জ্বর-সর্দি, কাশিও শ্বাসকষ্টে ভুগছে মানুষ।
স্থানীয় মেহের আলী, হোসেন আলীসহ কয়েকজন বলেন, ‘সন্ধ্যার পর থেকেই ঠান্ডা বাড়তে থাকে। রাত থেকে সকাল পর্যন্ত খুবই ঠান্ডা। মনে হচ্ছে পৌষ মাস। তবে সকাল ১০টার পর আর ঠান্ডা থাকে না। দিনে বেশ গরম এখনও। দুই রকম আবহাওয়ার কারণে সর্দিকাশিতে ভুগছি।’
তবে শীত পর্যটকদের জন্য আনন্দের উল্লেখ করে হাবিব ও সুমন নামের কয়েকজন পর্যটক বলেন, ‘রাজধানী ঢাকায় এখনও ফ্যান চালিয়ে ঘুমাতে হয়। সেখানে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে এসে শীত উপভোগ করছি আমরা। একদিকে বরফের পাহাড়, একই সঙ্গে শীত দুটোই উপভোগ্য হয়ে উঠেছে।’
এদিকে শীতে বেড়েছে জ্বর, সর্দি, কাশি, হাঁপানিসহ বিভিন্ন শীতজনিত রোগ। তেঁতুলিয়া ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালসহ জেলার পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শিশু ও বয়স্করা সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এদিকে, ঠান্ডাজনিত রোগের কারণে জেলার হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগে গড়ে প্রতিদিন তিন-চারশ রোগী জ্বর, সর্দি, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ শীতজনিত নানা রোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ছাড়া প্রতিদিন গড়ে শতাধিক শিশু ও বয়স্ক রোগী চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।
এবার হেমন্তের শুরু থেকেই উত্তরের এই জনপদে শুরু হয়েছিল শীতের আবহ। বর্তমানে দিনভর ঝলমলে রোদ থাকায় দিনে গরম অনুভূত হলেও বিকাল হতে না হতেই শুরু হচ্ছে শীতের অনুভূতি।