রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মতিহার হলে সৌরভ নামে এক বাকপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে মধ্যরাতে সিট থেকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে হল ছাত্রলীগের সভাপতি ও তার এক অনুসারির বিরুদ্ধে। গত মঙ্গলবার রাতে এই ঘটনা ঘটলেও শনিবার দুপুরে বিষয়টি জানা-জানি হয়। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হল প্রাধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন।
সৌরভ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। অন্যদিকে অভিযুক্তরা হচ্ছেন মতিহার হল ছাত্রলীগের সভাপতি মো. রাজীব হোসেন ও তার অনুসারি হাবিব।
লপ্রশাসন ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি মতিহার হলের ৪৩৮ নম্বর কক্ষে সৌরভকে সিট বরাদ্দ দেয় হল প্রশাসন। কিন্তু ওই কক্ষে আগে থেকে থাকছিল ছাত্রলীগ কর্মী হাবিব। তবে হাবিবের এচাটডমেন্ট ২০৫ নম্বর কক্ষ। মঙ্গলবার সৌরভ তার বেড নিয়ে ওই কক্ষে গেলে হাবিবের বেড দেখতে পায়। পরবর্তীতে সে হাবিবের বেডটি সরিয়ে নিজের বিছানা রাখে। রাতে হাবিব ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে ফোন করে ডেকে নিয়ে কিভাবে সিট বরাদ্দ পেয়েছে, কার অনুমতিতে তার বিছানা সরানো হয়েছে এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এর কিছুক্ষণ পরে হল ছাত্রলীগের সভাপতি রাজিব’র নেতৃত্বে হাবিবসহ দুই তিনজন এসে তাকে সিট থেকে নামিয়ে দেয়।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সৌরভ বলেন, রাত সাড়ে এগারটার দিকে আমাকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে আমি বিনোদপুরে থাকছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত হাবিব বলেন, আমি ৫-৬দিন ধরে ওই কক্ষে থাকছি। মঙ্গলবার রাতে রুমে এসে দেখি আমার বিছানাপত্র সরিয়ে ওই ছেলে তার নিজের বিছানা পেতেছে। সে আমাকে না জানিয়েই কাজটি করেছে। তার সিট বরাদ্দও হয় নি। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে আমি তার সঙ্গে কথা বলি। তাকে জিজ্ঞেস করি আমাকে না জানিয়ে বিছানা সরানোর কারণ। তবে সে কোনো উত্তর দিতে পারে নি। পরবর্তীতে রাজীবভাইসহ তার সঙ্গে কথা বললে ছেলেটি ওই রুম থেকে চলে যায়।
২০৫ নম্বর কক্ষ ছেড়ে ৪৩৮ আসার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিটটি আমার পরিচিত এক বড় ভাইয়ের। প্রভোস্ট স্যারের সঙ্গে কথা বলে আমি ওই রুমে উঠেছি। তাঁর সঙ্গে কথা বলে সিট একচেঞ্জ করবো।
তবে হল প্রাধ্যক্ষ মুসতাক আহমেদ’র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের হিসেবে অনুযায়ি ৪৩৮ নম্বর কক্ষটিতে একটি সিট খালি ছিল। তাই সৌরব নামে ওই শিক্ষার্থীকে বরাদ্দ দিয়েছি। হাবিবের সাথে সিটের বিষয়ে কোনো কথা হয় নি বলেও জানান হল প্রাধ্যক্ষ।
সিট থেকে নামানোর বিষয়ে হল ছাত্রলীগের সভাপতি রাজীব হোসেন বলেন, ৪৩৮ ওই সিটে আমাদের হাবিব নামে এক কর্মী আগে থেকে থাকতো। সৌরভ তার বিছানাপত্র সরিয়ে নিজের বিছানাপত্র রাখে। আমি রাতে বিষয়টি জানার পর আমরা তার সঙ্গে কথা বলি। সে চলে যায়। হাবিবের সিট অন্যকক্ষে বরাদ্দের বিষয়টি বলতেই হল ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, হাবিব যে কক্ষে থাকতো (২০৫ নম্বর) সেখানে আমাদের (ছাত্রলীগের) এক ছেলে থাকে।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়াকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায় নি।
সার্বিক বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ মুসতাক আহমেদ বলেন, মধ্যরাতে সিট থেকে নামিয়ে দেওয়ার বিষয়টি শুনেছি। ছেলেটি আমার কাছে এসেছিল। অভিযোগ দিয়েছে। রোববার বিষয়টি নিয়ে বসবো। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ছেলেটি বেশ ভয়ে আছে বলেও জানান হল প্রাধ্যক্ষ।