চট্টগ্রামের শিশু আলিনা ইসলাম আয়াত (৫) হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত আবির আলীর মা আলো বেগম ও বাবা আজমল আলীকে তিন দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) তিন দিনের রিমান্ড শেষে তাদের আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগের দিন বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) দুই দিনের রিমান্ড শেষে আবিরের বোন আঁখি আকতারকে (১৫) আদালতে সোপর্দ করা হয়। বয়স কম হওয়ায় আদালত তাকে ভিকটিম সাপোর্ট কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পিবিআই ইন্সপেক্টর মনোজ কুমার দে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আবিরকে সাত দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার মা-বাবাকে তিন দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আজ শুক্রবার আদালতে পাঠানো হয়। দুই দিনের রিমান্ড শেষে বৃহস্পতিবার আঁখিকে আদালতে পাঠানো হয়।’
এদিকে পিবিআইয়ের অপর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আবিরের বাবা-মা রিমান্ডে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আরও কিছু প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজন হলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে আদালতে পুনরায় রিমান্ড আবেদন করা হবে।’
এদিকে রিমান্ডে আবির নৃশংসভাবে আয়াতকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। পাশাপাশি কোথায় কোথায় আয়াতের লাশের খণ্ডিত অংশ ফেলেছে তা পিবিআই কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিজেই গিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। পরে কয়েকদিনের টানা তল্লাশি অভিযানে বুধবার ও বৃহস্পতিবার মাথা ও পায়ের খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করা হয়। শুক্রবারও সকাল থেকে লাশের বাকি অংশ এবং পোশাকের সন্ধানে তল্লাশি চালিয়েছে পিবিআই। তবে আজ কিছুই পাওয়া যায়নি।
এদিকে আয়াতের দাদা মঞ্জুর হোসেনের দাবি, ‘আবিরকে গ্রেফতারের পর আমি তার বাসায় গিয়েছিলাম। ওই বাসার মেঝে, পাতিল, খাট ও দেয়ালে তখনও রক্তের দাগ লেগেছিল। ঘটনার ১০ দিনের মাথায় গিয়ে আমি এমন দৃশ্য দেখেছি। তার মা-বোন ওই বাসায় থেকেও কি এসব দেখেননি? তারা যদি দেখে থাকে তাহলে আমাদের জানায়নি কেন? হয়তো তারাও এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত।’
আয়াত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে এর আগে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা বলেছেন, ‘মুক্তিপণ আদায়ের জন্য আয়াতকে অপহরণ করে তাদের সাবেক ভাড়াটিয়া আবির আলী। গত ১৫ নভেম্বর নগরের ইপিজেড থানাধীন বন্দরটিলা নয়াহাট বিদ্যুৎ অফিস এলাকার মসজিদের পাশ থেকে আরবি পড়তে যাওয়ার সময় আয়াতকে অপহরণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। পরে লাশ আকমল আলী সড়কের নিজ বাসায় নিয়ে ছয় টুকরো করে আবির। লাশের টুকরো দুটি বস্তায় করে পতেঙ্গা বেড়িবাঁধ এলাকায় বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেয় সে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার দিন আয়াতকে না পেয়ে তার বাবা ইপিজেড থানায় নিখোঁজের জিডি করেন। জিডির ছায়া তদন্ত করে পিবিআই। এ ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে আবিরকে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর সে পিবিআইকে এসব তথ্য দিয়েছে।’
এদিকে মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) ভোরে গ্রেফতার করা হয় ঘাতক আবির আলীর বাবা আজমল আলী, মা আলো বেগম ও বোন আঁখি আকতারকে। ওই দিন দুপুরে তাদের আদালতে সোপর্দ করার পর আবিরের বাবা আজমল আলী ও মা আলো বেগমের তিন দিন করে এবং বোন আঁখি আকতারের দুদিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।