রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হুন্ডি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) রাজধানীর লেকশোর হোটেলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বার্ষিক গবেষণা সম্মেলনে এমন তথ্য জানিয়েছেন তিনি।
গভর্নর বলেন, আন্ডার ইনভয়েস এবং ওভার ইনভয়েসের মাধ্যমে মুদ্রা পাচার বন্ধে এলসিতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া ৩৫টির মতো বিলাসী পণ্যে আমদানি কমাতে কর আরোপ করা করা হয়েছে।
তিনি জানান, দেশে যে মুল্যস্ফীতি হয়েছে তা মানি সাপ্লাইয়ের জন্য হয়নি। এটা হয়েছে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে। বলা হয়েছে ঋণ প্রবাহ কেন বাড়ছে। এর কারণ হলো আমদানি পণ্যের দাম ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় এই ব্যয় মেটাতে ঋণ নিতে হচ্ছে।
রউফ তালুকদার বলেন, মুদ্রা বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে মেয়াদী ঋণসহ অন্যান্য ঋণের সুদের হার এই মহুর্তে সীমা তুলে দেওয়া সম্ভব নয়। ভবিষ্যতে ভাল সময় আসলে তখন তুলে দেওয়া যাবে।
তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ধরা হয়েছে ‘পোস্ট কোভিড ইন ইউক্রেন অ্যান্ড ডিভিসিভ ওয়াল্ড’। সম্মেলনের প্রথমদিন প্রায় ৯টি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়।
অর্থনীতিবিদরা জানিয়েছেন, বর্তমান সংকটময় মুহুর্তে প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা চিন্তা করলে হবে না। আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতের প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। প্রয়োজনে প্রবৃদ্ধি সেক্রিফাইস করে হলেও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য যা যা করা দরকার তাই করতে হবে। এক্ষেত্রে, জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে গিয়ে ৬ শতাংশ হলেও খারাপ কিছু হবে না।
উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিআরআই’র ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ। দ্বিতীয় অধিবেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। এ সময় সভাপতিত্ব করেন সিপিডির চেয়ারম্যান ড. রেহমান সোবহান।
মূল প্রবন্ধে সাদিক আহমেদ বলেন, করোনা মহামারী পরবর্তী অবস্থায় বাংলাদেশ অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেগুলো অব্যাহত রাখা ঠিক হবে না। কেননা এখন প্রবৃদ্ধির দিকে নজর দেওয়ার সময় নয়। এখন অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে হবে। এজন্য সুদের হারের উর্ধ্বসীমা তুলে দেওয়া, মুদ্রা বিনিয়ম হার বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়া, আমদানি নিয়ন্ত্রণ না করা এবং এলসি খোলা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
তিনি বলেন, রাজস্ব আদায় বাড়ানোসহ কাঠামোগত সংস্কার দরকার। বিশেষ করে একটি কর কমিশন গঠন করতে হবে। এসব উদ্যোগ নিলে চলতি অর্থবছর হয়ত প্রবৃদ্ধি কমে ৬ শতাংশ হতে পারে। কিন্তু সেটিও খারাপ হবে না।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, জিডিপির তুলনায় কর আদায়কে মন্দ বলা হয়েছে। কিন্তু এতো যদি ভয়ংকর অবস্থা হয় তাহলে ৫-৬-৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয় কিভাবে। নিশ্চয়ই রাজস্ব আদায়ের ঘাটতি কিছু একটা দিয়ে পুষিয়ে যাচ্ছে।