রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাড়ছে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার
বাংলাদেশ

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাড়ছে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার

আজ ২০ জুন বিশ্ব শরণার্থী দিবস। ১১ লাখের বেশি মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গার ভার নিয়ে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আজ দিবসটি পালিত হচ্ছে। এমন এক সময়ে দিনটি পালিত হচ্ছে যখন রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের হাত ধরেই ক্যাম্পে অত্যাধুনিকসহ বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র ঢুকছে। ফলে বেড়েছে হতাহতের ঘটনা, সন্ত্রাস আর মাদক ব্যবসা। এতে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও ভয়ভীতির মধ্যে রয়েছেন।

গত এক সপ্তাহে রোহিঙ্গা শিবিরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে তিন জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজনই ক্যাম্পে স্বেচ্ছায় ভলান্টিয়ার ছিলেন। মূলত রোহিঙ্গা নেতা মুহিব উল্লাহ হত্যার পরই ক্যাম্পে নিজেদের নিরাপত্তায় স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত করা হয়।

সর্বশেষ গত ১৬ জুন সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঢোকার সময় আমেরিকার তৈরি অত্যাধুনিক এম-১৬ রাইফেল এবং গোরাবারুদসহ উখিয়ার জামতলী ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ হোসেন (৩০) ও জাহেদ হোসেনকে (৩০) আটক করে ৮-এপিবিএন। এরপর পরই সীমান্তের গোয়েন্দা সংস্থাসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নড়েচড়ে বসে।

অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে জানতে চাইলে ৮-এপিবিএনের অধিনায়ক এসপি শিহাব কায়সার খান বলেন, ‘সীমান্তের ওপার দিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ওপার থেকে বিভিন্নভাবে অস্ত্র ঢুকছে। সন্ত্রাসীরা এসব অস্ত্র দিয়ে ক্যাম্পে মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ প্রভাব বিস্তারের ব্যবহার করছে। মূলত ক্যাম্পে নিরাপত্তার কাজে ব্যবহৃত ভলান্টিয়ার সিস্টেম ভাঙতে সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের ব্যবহার করছে। কারণ ভলান্টিয়াররা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ক্যাম্পে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না। ক্যাম্পে অস্ত্র উদ্ধারেও অভিযান চলছে।’ 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য মতে, ২০১৯ সালের শুরু থেকে ২০২২ সালের ১৫ জুন পর্যন্ত কক্সবাজারের সীমান্ত ক্যাম্পসহ রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করে চার হাজার ৪৮টি দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিপুল পরিমাণ গোরাবারুদ উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসব আগ্নেয়াস্ত্রসহ তিন শতাধিক রোহিঙ্গা ডাকাতকে আটক করা হয়েছে। যাদের বেশির ভাগই ক্যাম্পের বাসিন্দা।

৮-এপিবিএন পুলিশ জানায়, গত এক বছরে ক্যাম্প থেকে আমেরিকার তৈরি অত্যাধুনিক এম-১৬ রাইফেলসহ ২৩০টি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র এবং বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে এনে ক্যাম্পে মজুতকালে ১৮ লাখ ৩৫ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, টেকনাফ ও উখিয়া মিলে বর্তমানে চার দফায় মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের পাহাড়, বন ও জঙ্গল কেটে ৩২টি আশ্রয় শিবিরে আছে। তবে এখন উখিয়া ও টেকনাফের সর্বত্রই যেন রোহিঙ্গা শিবির। এ দুই উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দার সংখ্যা পাঁচ লাখের মতো। দিন যতই গড়াচ্ছে, রোহিঙ্গা শিবিরে বাড়ছে অস্থিরতা।

গত ৯ জুন উখিয়া ক্যাম্পে রোহিঙ্গা নেতা আজিম উদ্দিন হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার তিন জন কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের নেতা (মাঝি) মো. হারুন বলেন, ‘ক্যাম্পে আবারো সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে তিন জনকে হত্যা করা হয়েছে। সন্ত্রাসীরা নতুন ক্যাম্পে অস্ত্রে মজুত করছে। এতে ক্যাম্পের বাসিন্দারা ভয়ভীতির মধ্যে রয়েছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ‘রোহিঙ্গা শিবির এলাকায় মাদক আর অস্ত্র একই সূত্রে গাঁথা। পাশাপাশি ক্যাম্পে দলগত সশস্ত্র তৎপরতা, মাদক, চাঁদাবাজি, অপহরণ বাণিজ্য থেকে শুরু করে তুচ্ছ ঘটনায়ও ব্যবহার করা হচ্ছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। ক্যাম্পে নিজেদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও প্রভাব বিস্তারে নানা অস্ত্র ব্যবহার করছে একশ্রেণির রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী। বিশেষ করে এখন মাদক পাচারে অস্ত্র ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে।’

টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরল আলম বলেন, ‘পাঁচ বছরেও প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। তা ছাড়া ক্যাম্পে অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় কক্সবাজারের মানুষ ভয়ভীতির মধ্য রয়েছে। প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে এই প্রধান সমস্যা সমাধান ছাড়া আর কোনও পথ নেই।’

 

Source link

Related posts

ভিয়েতনামি নারিকেল বাগান করে শতাধিক কৃষকের স্বপ্নভঙ্গ

News Desk

অমির দুই সহযোগী দুদিনের রিমান্ডে

News Desk

আজ সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫১তম জন্মদিন

News Desk

Leave a Comment