প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করতে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের টেকনাফে অবস্থান করছেন। তারা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন ও তথ্য যাচাই-বাছাই করছেন।
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সকাল ৮টায় টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়ায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার ট্রানজিট জেটি দিয়ে কাঠের ট্রলারে করে ৩২ সদস্যের মিয়ানমার প্রতিনিধিদল আবারও বাংলাদেশে আসেন। তাদের ট্রলারে ১১ জন মাঝিমাল্লা ছিলেন। তারা সবাই সে দেশের রোহিঙ্গা নাগরিক।
এ সময় অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) সামছু দৌজাসহ সরকারি কর্মকর্তারা তাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এতে মিয়ানমার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির রাখাইন প্রাদেশিক সরকারের ইমিগ্রেশন ডিরেক্টর স নাইং।
এর আগে, ১৫ মার্চ ও ২৫ মে মিয়ানমার প্রতিনিধিদল দুই দফায় বাংলাদেশে আসে। সে সময় প্রায় ৭০০ রোহিঙ্গার তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে মিয়ানমার ফিরে যায় দলটি। তবে রাখাইনে ফিরে যাওয়ার পরিবেশ দেখতে ৫ মে বাংলাদেশ সরকার ও রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধিদল রাখাইন সফর করে।
অতিরিক্ত শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) সামছু দৌজা বলেন, ‘সম্ভব্য প্রত্যাবাসনকে সামনে রেখে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা করতে মিয়ানমারের ৩২ সদস্যের প্রতিনিধি দল আবারও বাংলাদেশে এসেছেন। তারা ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন।’
সরেজমিনে দেখা যায়, মঙ্গলবার সকালে বাসে করে লেদা-নয়াপাড়া ক্যাম্পের বসবাসকারী দেড়শ পরিবারের রোহিঙ্গাকে ধাপে ধাপে টেকনাফের নাইট্যংপাড়াস্থল বন বিভাগ, সড়ক ও জনপথ বিভাগের রেস্ট হাউজ প্যান্ডেলে নিয়ে আসা হয়। এরপর সেখানে তাদের একে একে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
এদিকে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ আট লাখ ৮৮ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর তালিকা মিয়ানমারের কাছে পাঠিয়েছিল। এরপর মিয়ানমারের পক্ষ থেকে ৬৮,০০০ রোহিঙ্গার একটি ফিরতি তালিকা পাঠানো হয়। গত বছর জানুয়ারিতে ওই তালিকা থেকে পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসেবে পরিবারভিত্তিক প্রত্যাবাসনের জন্য প্রাথমিকভাবে ১১৪০ জনকে বাছাই করা হয়। এর মধ্যে ৭১১ জন রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মিয়ানমার সম্মতি দিলেও বাকি ৪২৯ জনের ব্যাপারে তাদের আপত্তি ছিল। সে সময় ৪২৯ জনের তথ্য যাচাই-বাছাই করতেই মিয়ানমারের ১৭ জন সদস্যের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসেছিল।
মিয়ানমার প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক অংশ নিতে আসা টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা মো. বজলুল রহমান বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে আসা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আসা হয়েছে। আমার ক্যাম্প থেকে অর্ধশতাধিক লোকজনকে আনা হয়েছে। তারা মিয়ানমার প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে। মূলত মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। বৈঠক শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।’
বৈঠক অংশ নিতে আসা টেকনাফের শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা নুর কবির বলেন, ‘আমরা মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কথা বলতে এখানে এসেছি। আমরা আমাদের দাবিগুলো তুলে ধরবো। মূলত বৈঠক শেষে আসল কথা জানা যাবে। কারণ, এই প্রতিনিধিদল এর আগে দুবার এসে ঘুরে গেছে। তখন তাদের কথায় আমরা সন্তুষ্ট হতে পারেনি।’