মারুফ আহমেদ (ছদ্মনাম)। তিনি বংশালের বাবুবাজার ব্রিজ পার হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করে পল্টনে চাচার বাসায় বেড়াতে যাচ্ছিলেন। এ সময় বাবুবাজার ব্রিজ দিয়ে যারা ঢাকায় প্রবেশ করছিলেন চেকপোস্ট বসিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও জরিমানা করছিল পুলিশ।
মারুফ আহমেদ চেকপোস্ট পার হতে গেলেই পুলিশ সদস্যরা তাকে থামতে বলেন। তিনি না থেমে চেকপোস্ট অতিক্রম করার চেষ্টাকালে তাকে ধরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিয়ে যায় পুলিশ। ম্যাজিস্ট্রেট তাকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করেন।
শনিবার (৩ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর বাবুবাজার ব্রিজের ওপর ঘণ্টাব্যাপী এ চেকপোস্টের নেতৃত্ব দেন লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. জসীম উদ্দীন মোল্লা। অভিযান পরিচালনা করেন ঢাকা জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দা পারভীন। এ সময় অভিযানে মামলা দেয়া হয় ৪৭ জনকে। আর জরিমানা করা হয় ১১ হাজার টাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, রিকশা, ভ্যান, পিকআপ, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে করে অনেকেই বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ঢাকায় প্রবেশ ও ঢাকা ছাড়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু লালবাগ বিভাগের কড়া চেকপোস্টের কারণে সবাইকেই পড়তে হয় পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে। ওই চেকপোস্টে ঘণ্টাখানেক দাঁড়িয়ে দেখা যায়, মানুষ মিথ্যা বলে পার পাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু কাগজ দেখতে চাওয়ায় সবকিছু গরমিল হয়ে যায়।
লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. জসীম উদ্দীন মোল্লা জাগো নিউজকে বলেন, ‘লালবাগ বিভাগের ৬টি থানায় একাধিক চেকপোস্ট রয়েছে। আমরা প্রতিদিন কনভয় পেট্রলিং করছি, বিভিন্ন অলিগলিতে মোবাইল পেট্রলিং চলমান রয়েছে। ডিসি থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত সবাই একযোগে কাজ করে যাচ্ছেন। এসব চেকপোস্টে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট থানার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। যারা সরকারি নিয়ম ভঙ্গ করছেন তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যাচ্ছি, আদালতে সোপর্দ করা হচ্ছে এমনকি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে স্পট ফাইন করা হচ্ছে। যাদের মাস্ক নেই তাদেরকে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে।’
লকডাউনের তৃতীয় দিনে রাজধানীবাসী সচেতন হয়েছে কি-না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কিছু মানুষ আছে যারা নিয়ম ভঙ্গ করতে অভ্যস্ত। বেশিরভাগ মানুষকেই সচেতন হতে দেখ গেছে। আগের তুলনায় মানুষের মাস্ক পরার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। পুরান ঢাকায় ছোট-ছোট কলকারখানা অনেক বেশি, অন্য এলাকার চেয়ে এখানে মানুষের সংখ্যাও বেশি।’
ঢাকা জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দা পারভীন বলেন, ‘নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বের হয়ে প্রতিষ্ঠানের কাজের অজুহাত দেখাচ্ছেন অনেকেই। এটি মন্ত্রিপরিষদের নির্দেশনার সঙ্গে কোনোভাবেই যাচ্ছে না। অপ্রয়োজনে মানুষ ঘোরাফেরা করছে, লকডাউন দেখতে বেরিয়েছ। এক্ষেত্রে আমরা তাদের জরিমানা করছি। জরুরি সেবার সঙ্গে যারা জড়িত তারা উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে যেতে পারছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘গার্মেন্টস, শিল্পকারখানা, চিকিৎসা সেবায় যারা আছেন, সাংবাদিক, ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানসহ জরুরি প্রয়োজনে যারা কাজ করে তাদের ঢাকায় ঢুকতে দিচ্ছি। বাকিদের ফিরিয়ে দিচ্ছি, প্রয়োজনে মামলা দিচ্ছি। এ সময় লালবাগ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার, সহকারী পুলিশ কমিশনার, ট্রাফিক পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও নিজ নিজ ইউনিটের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।