মেঘালয়ের শীতের হিমেল বাতাসকে বিদায় দিয়ে এসেছে বসন্ত। পাতা ঝরছে গাছের। কিছু কিছু গাছে সুবজ পাতার কুঁড়ি বিকশিত হচ্ছে। এরই মধ্যে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর শিমুল বাগানে লেগেছে বসন্তের আগুন রঙের ছোঁয়া।
প্রায় দেড় যুগ আগের কথা। তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের সুহালা গ্রামের বৃক্ষপ্রেমী মরহুম জয়নাল আবেদীন যাদুকাটা নদীর তীরে ৩০ একর জায়গায় তিন হাজার ২০০টি শিমুল গাছের চারা লাগান। গত কয়েক বছর ধরে এসব গাছে ফুল ফুটছে। বর্তমানে প্রায় ১২০০ গাছে ফুল ফুটেছে। এই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা আসেন মানিগাঁও গ্রামের জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগানে। বাগানটির বর্তমান মালিক মৃত জয়নাল আবেদীনের ছেলে রাকাব উদ্দিন।
সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত পর্যটকরা বাগানে অবস্থান করেন ফুল, নদী ও পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। আগত দর্শনার্থী ও পর্যটকরা জানান, প্রতিবছর বসন্ত বরণ করতে তারা এখানে আসেন। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে এই বাগানে ফুল ফোটা শুরু হয়েছে। এখনও ফুল ফুটছে।
পর্যটকদের বাড়তি আনন্দ দিতে বাগানে ঘোড়ায় চড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া শিশু পর্যটকদের জন্য শিমুল ফুলের মালা তৈরি করে বিক্রি করা হয় এখানে। দর্শনার্থীদের জন্য শিমুল ফুলের তৈরি লাভ ফ্রেম, ডিএসএল আর ক্যামেরা দিয়ে ফটো তুলার ব্যবস্থাও রয়েছে। বাগানের ভেতরের ক্যান্টিন ও ক্যাফেতে রয়েছে খাবারের ব্যবস্থা।
ঢাকার গেন্ডারিয়া এলাকার ব্যবসায়ী আবুল কাসেম জানান, বসন্ত আর শিমুল ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে তিনি সপরিবারে এখানে বেড়াতে এসেছেন। এখানকার যাদুকাটা নদী, বারেক টিলা, ট্যাকের ঘাট সব কিছু ঘুরে দেখেছেন। এরকম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে তিনি মুগ্ধ।
যাত্রাবাড়ি এলাকার শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘গাছে গাছে আগুন রাঙা শিমুল ফুল দেখে চোখ ও মন জুড়িয়ে যায়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আনজুম নাহারের মতে, ‘দেশের অন্যান্য পর্যটন এলাকা থেকে এটি ভিন্ন। এখানে নদী, ফুল, পাহাড় ও নীল আকাশ একসঙ্গে দেখা যায়। তাই প্রতিবছর বসন্ত উদযাপন করতে এখানে আসি। তবে এবার ফুলের পরিমাণ কম। অনেক গাছে এখনও ফুল ফোটেনি।’
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহারাম হোসেন বলেন, ‘এটি একটি অন্যরকম পর্যটন স্পট। বসন্ত বরণ আর ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করত হলে এই বাগানে আসতেই হবে।’
বাগানের কেয়ারটেকার ফরিদ গাজী বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে ফুল ফুটতে শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত প্রায় অর্ধেক গাছে ফুল ফুটেছে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত পর্যটকরা এখানে আসেন।’
বাগান মালিক রাকাব উদ্দিন বলেন, ‘পর্যটকদের সুবিধার জন্য বাগানে ক্যান্টিন ক্যাফে সার্ভিসসহ বিভিন্ন সেবা চালু করা হয়েছে। আগামীতে সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়ানো হবে। তবে অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে পর্যটকদের কষ্ট করতে হয়।’
তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল লতিফ তরফদার জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ সব সময় তৎপর রয়েছে। বিশেষ বিশেষ দিনে বাগান ও আশপাশের এলাকায় পুলিশ টহল দিয়ে থাকে।