শখের বসে শুরু, গৃহিণী থেকে ৫ বছরেই সফল উদ্যোক্তা
বাংলাদেশ

শখের বসে শুরু, গৃহিণী থেকে ৫ বছরেই সফল উদ্যোক্তা

শখের বসে নার্সারি করে দারুণ সফলতা পেয়েছেন ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার কাশিয়ারচর এলাকার বাসিন্দা জেসমিন আরা। উপজেলা শহর থেকে কিছুটা দূরে ১২ একর জায়গাজুড়ে গড়েছেন ৩০০ প্রজাতির দেশি-বিদেশি গাছের বিশাল ভান্ডার। তবে থেমে নেই জাতসংগ্রহ। সংগ্রহে নেই এমন কোনও গাছের নাম শুনলেই ছুটে যান, সংগ্রহ করে আনেন চারা। আবার তার বাগানে সব গাছের জন্য ছুটে যান বৃক্ষপ্রেমী ও যারা বাগান করতে চান তারা। সবার কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছেন। গৃহিণী থেকে হয়েছেন সফল উদ্যোক্তা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছোটবেলা থেকে বাবা বাড়ির আনাচে-কানাচে নানা প্রজাতির গাছ লাগাতেন জেসমিন আরার বাবা। গড়ে তুলেছিলেন বড় আম বাগান। গাছকে যত্ন করতেন নিজ মমতায়। গাছের প্রতি বাবার এমন ভালোবাসা দেখে নিজেও একদিন বাগান করার স্বপ্ন দেখেন জেসমিন। সেই স্বপ্ন আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে। নিজের পরিশ্রম কাজে লাগিয়ে গড়ে তুলেছেন ময়মনসিংহের সবচেয়ে বড় নার্সারি। এজন্য সরকারিভাবে পেয়েছেন স্বীকৃতি। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধীনে বৃক্ষরোপণে বিশেষ অবদান রাখায় জেসমিন আরা পেয়েছেন সনদপত্র, ক্রেস্ট ও নগদ অর্থ। গৃহিণী পরিচয়ের পাশাপাশি এখন সফল উদ্যোক্তা।

ময়মনসিংহের পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ঘেঁষা গৌরীপুর উপজেলার কাশিয়ারচর এলাকায় ২০১৯ সালে একটি নার্সারি গড়ে তোলেন জেসমিন। নাম দিয়েছেন ‘আধুনিক নার্সারি অ্যান্ড হর্টিকালচার ফার্ম’। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সফলতা পাওয়ায় বর্তমানে ১২ একর জায়গায় বিশাল নার্সারি গড়ে তুলেছেন। 

এখানে বনজ গাছ ছাড়াও দেশি-বিদেশি জাতের আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, আনার, কমলা, আমড়া, লেবু, জাম্বুরা, সফেদা, মাল্টা, বরই, কামরাঙা, মিষ্টি তেঁতুল, চালতা, লিচু, বেল ও লটকনসহ বিভিন্ন জাতের ফলের চারা রয়েছে। বর্তমানে ৩০০ প্রজাতির উন্নতমানের চার লক্ষাধিক চারা রয়েছে বাগানে। এগুলো বিক্রি করা হয় সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। নিয়মিত ৩৫ জন শ্রমিক নার্সারিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, শ্রমিকদের কেউ চারা তুলে বিক্রি করছেন। কেউ গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত। জেসমিন বাগার ঘুরে শ্রমিকদের বিভিন্ন কাজ দেখিয়ে দিচ্ছেন। কোনটা কীভাবে হবে দিক-নির্দেশনাও দিচ্ছেন।  

২০১৯ সালে একটি নার্সারি গড়ে তোলেন জেসমিন, নাম দিয়েছেন ‘আধুনিক নার্সারি অ্যান্ড হর্টিকালচার ফার্ম’

এ সময় কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা নাজমা খাতুন নামের এক শ্রমিকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী ভ্যানগাড়ি চালিয়ে যা রোজগার করেন, তা দিয়ে তিন ছেলেমেয়ের ভরণপোষণসহ পড়াশোনা করানো যায় না। আমি একসময় গৃহিণী ছিলাম। নার্সারি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এখানে কাজের সুযোগ পেয়েছি। এখন আমার এবং স্বামীর রোজগার করা টাকা দিয়ে সংসার ভালোভাবেই চলছে। ছেলেমেয়েকে পড়াশোনা করাচ্ছি।’

আগে দূর-দূরান্তে দিনমজুর হিসেবে বিভিন্ন কষ্টের কাজ করতাম জানিয়ে বাগানে কাজ করা শ্রমিক মনির মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘থাকা-খাওয়ার খরচ বাদে মাস শেষে যা বেতন পেতাম, তা দিয়ে সংসার চলতো না। এখন বাড়ির পাশের এই নার্সারিতে চাকরি করি। এখানের বেতন দিয়ে পরিবার সুন্দরভাবে চলছে।’

শুরুটা শখের বসে উল্লেখ করে নার্সারির মালিক জেসমিন আরা বলেন, ‘ছোটবেলায় বাবার গাছ লাগানো থেকে আমারও গাছের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়। সবসময় চেয়েছি গাছের মাধ্যমে সফল হওয়ার। স্বামীর সঙ্গে পরামর্শ করে নার্সারি গড়ে তুলেছিলাম। সারাদিন নার্সারিতে সময় দিয়ে ধীরে ধীরে সফলতা পেয়েছি।’

এখন আমার কাছে অনেকে নার্সারি করার পরামর্শ নিতে আসেন উল্লেখ করে এই নারী উদ্যোক্তা বলেন, ‌‘আমি তাদের পরামর্শ দিচ্ছি। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন নার্সারি গড়ে তুলেছেন। এখন তারাও লাভবান।’

নিয়মিত ৩৫ জন শ্রমিক নার্সারিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন

জেসমিন আরার স্বামী ড. শামছুল আলম মিঠু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‌‘নার্সারি করার পর থেকে যথেষ্ট পরিশ্রম করে যাচ্ছে জেসমিন। ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে কখনও হেঁটে, কখনও ভ্যানে আবার কখনও রিকশায় চড়ে প্রতিদিন সকালে চলে যায় নার্সারিতে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে। তার কঠোর পরিশ্রমের কারণে সফলতা এসেছে। আমিও চেষ্টা করি, পরামর্শ দিয়ে পাশে থাকার।’

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতর ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‌‘গাছ থেকে পাওয়া অক্সিজেন গ্রহণ করেই আমরা বেঁচে আছি। সারা দেশে প্রচুর পরিমাণ গাছ লাগাতে সবাইকে উৎসাহিত করতে হবে। গড়ে তুলতে হবে নতুন নতুন নার্সারি। জেসমিন আরার মতো আরও অনেকে নিজের পরিশ্রমের মাধ্যমে সফল উদ্যোক্তা হবে, এমনটাই প্রত্যাশা করি।’

Source link

Related posts

এক জেলায় ৪০০ কোটি টাকার লিচু বিক্রির আশা

News Desk

মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে বঙ্গবন্ধুর ছবি-ম্যুরাল ভাঙচুর, বন্ধ ঘোষণা

News Desk

জামালপুরের নকশীকাঁথা ও বাহারী পোশাক সারা দেশে প্রশংসিত

News Desk

Leave a Comment