চট্টগ্রামে থান কাপড়ের জন্য বিখ্যাত শত বছরের পুরনো মার্কেট টেরিবাজার। যা কাপড়ের পাইকারি বাজার হিসেবে পরিচিত। তবে এখন শুধু থান কাপড় নয়; মিলছে সব ধরনের প্রয়োজনীয় কাপড়। গত এক দশকে টেরিবাজারে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক ওয়ানস্টপ শপিংমল। যেখানে মিলছে নারী-পুরুষ ও শিশুদের যাবতীয় পোশাক। ফলে টেরিবাজারে এখন ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। জমজমাট ঈদ বেচাকেনায় স্বস্তিতে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) সরেজমিনে দেখা গেছে, টেরিবাজারের প্রবেশপথে নারী-পুরুষের উপচে পড়া ভিড়। ওয়ানস্টপ শপিংমলগুলোর পাশাপাশি অন্যান্য দোকানেও ক্রেতাদের সমাগম। এসব দোকানের কর্মচারীদের দম ফেলার ফুসরত নেই। চলছে ঈদের শেষ সময়ের জমজমাট বেচাকেনা।
টেরিবাজারের প্রবেশপথে ছয়তলা ভবনের চারতলায় রয়েছে চিটাগাং শাড়ি হাউস। যেখানে এক ছাদের নিচে মিলছে সব ধরনের পোশাক। রাত ৮টার দিকে গিয়ে দেখা গেছে, ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। ক্রেতারা প্রয়োজনীয় পোশাক কিনছেন।
চিটাগাং শাড়ি হাউসের বিক্রয়কর্মী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘থান কাপড় থেকে শুরু করে নারী ও শিশুদের সব ধরনের পোশাক আছে। তবে পুরুষদের জন্য আছে লুঙ্গি ও পাঞ্জাবি। বেচাকেনা জমে উঠেছে।’
এই প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আবদুল মান্নান বলেন, ‘প্রায় আট বছর আগে চিটাগাং শাড়ি হাউস গড়ে উঠেছে। এখানে এক ছাদের নিচে সব ধরনের প্রয়োজনীয় সব কাপড় পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে থ্রিপিস, থান কাপড়, শাড়ি, বিয়ের শাড়ি, লেহেঙ্গা, পাঞ্জাবি ও লুঙ্গিসহ নারী-পুরুষ ও শিশুদের সব কাপড় পাওয়া যাচ্ছে।’
টেরি বাজারের সানা ফ্যাশন ভবনে গিয়ে দেখা গেছে, ভবনের দোতলা ও সাত তলায় শিশুদের শার্ট-প্যান্ট, পাঞ্জাবি-পায়জামাসহ ও জেন্টস আইটেম রয়েছে। তিনতলায় শাড়ি ও চারতলায় থ্রিপিসসহ মেয়েদের পোশাক।
সানা ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী আব্দুস সামাদ বলেন, ‘আগে মাসুম ক্লথ স্টোর নাম দিয়ে আমরা ওয়ানস্টপ শপিংমলে ব্যবসা শুরু করি। গত কয়েক বছরে ভালো মুনাফা হয়েছে। এক দোকানে বসে ক্রেতারা যাতে সব ধরনের পোশাক কিনতে পারে সেজন্য পরিধি বাড়িয়ে সানা ফ্যাশনের কার্যক্রম শুরু করি। আমাদের বেচাকেনা ভালোই হচ্ছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টেরিবাজারে গত এক দশকে প্রায় অর্ধশতাধিক শপিংমল গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে মাসুম ক্লথ স্টোর, বধুয়া শপিং, চিটাগাং শাড়ি হাউস, মেগামার্ট, সানা ফ্যাশন, রাজস্থান, রাজপরী, জারা শপ, আলিশা, জাবেদ ক্লথ স্টোর, বৈঠক বাজার, ভাসাবি, মনে রেখ, শাহ আমানত, পরশমনি, শিরমনি, রাঙ্গুলি, ফেমাস, হারুন অ্যান্ড ব্রাদার্স, মল টুয়েন্টি ফোর, মোহাম্মদীয়া, হ্যালো ফ্যাশন, গোল আহমদ, নিউ রাজস্থান, মৌচাক, আলমগীর, বাগদাদ অ্যাম্পোরিয়াম, নিউ আজমির ইত্যাদি বেশ পরিচিত।
টেরিবাজারে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কেনাকাটা করতে আসা নুরুল হক বলেন, ‘এখানকার কিছু শপিংমলে একসঙ্গে সব প্রয়োজনীয় কাপড় পাওয়া যায়। এ কারণে কেনাকাটা করতে এসেছি। দাম ঠিক আছে।’
টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহমদ হোছাইন বলেন, ‘টেরিবাজারে প্রায় দুই হাজার ছোট-বড় দোকান আছে। এটি শতবর্ষী মার্কেট। এখানে কয়েক ধরনের ব্যবসা হয়। রমজানের আগে থেকে টেরিবাজারে ব্যবসা জমে উঠেছে। এখান থেকে থান কাপড় চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলাসহ আশপাশের জেলা-উপজেলার খুচরা ব্যবসায়ীরা বিক্রির জন্য নিয়ে যান। এখন বিক্রি হচ্ছে প্যান্ট-শার্ট, শাড়িসহ অন্যান্য কাপড়। থান কাপড়ের বেচাকেনা কিছুটা কমলেও শপিংমলগুলোতে জমজমাট বেচাকেনা চলছে।’