শব্দ দূষণ শুধু পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়; এটি আর্থিক ক্ষতিও বটে। যখন শব্দ দূষণে আমরা বিশ্বের মধ্যে প্রথম হই তখন বিদেশি বিনোয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আমরা যখন মধ্যম থেকে উন্নত আয়ের দেশে উন্নীত হচ্ছি, তখন শব্দ দূষণের প্রথম হওয়ার খবর আমাদের জন্য নেতিবাচক। তাই আমরা শব্দ দূষণে প্রথম হতে চাই না। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোকে অনুসরণ করে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) সকালে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক মিলনায়তনে পরিবেশ অধিদফতরের ‘শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্পের আওতায় গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের নিয়ে মতবিনিময় সভায় এ অভিমত ব্যক্ত করেন বক্তারা ।
ঝিনাইদহ জেলা পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক শ্রীরুপ মজুমদারের সভাপতিত্বে ও স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রভাষক আব্দুল্লাহ আল নাঈমের সঞ্চালনায় এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম, বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু রাসেল, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিক্যাল কর্মকর্তা ডা. মো তালাত তাসনিম এবং ট্রাফিক পরিদর্শক সালাহ উদ্দিন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম বলেন, ‘সবার আগে আমাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। শব্দ দূষণ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, সে উপায় বের করতে হবে। উন্নত দেশগুলোকে অনুসরণ করতে হবে। অনুষ্ঠানে বাদ্যযন্ত্র বাজানো নিষিদ্ধ করতে হবে। আমরা যেন অন্যের বিরক্তির কারণ না হই সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এজন্য আমাদের চরিত্র পরিবর্তন করতে হবে। সবমিলে আমরা রাষ্ট্রের উন্নয়নের স্বার্থে শব্দ দূষণে প্রথম হতে চাই না। এটি স্বাস্থ্য ও পরিবেশের পাশাপাশি বিনিয়োগের সঙ্গেও সম্পৃক্ত।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু রাসেল বলেন, ‘শব্দ দূষণ আইন বাস্তবায়নে আমাদের সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। শুধু আইন প্রয়োগ করে এ সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। ব্যাপকহারে সচেতনতা বাড়াতে হবে। গাড়িচালক, যুবসমাজ বিশেষ করে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে এ বিষয়ে কাজ করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। আর শব্দ দূষণের আইনের বিষয়ে সবাইকে সচেতন করতে হবে। এই আইনকে যুগোপযোগী করতে হবে। যাতে ট্রাফিক পুলিশ এ আইন প্রয়োগ করতে পারে।’
মেডিক্যাল কর্মকর্তা ডা. মো তালাত তাসনিম বলেন, ‘শব্দ দূষণে বধির হওয়ার পাশাপাশি আয়ুও কমে যায়। উচ্চ রক্তচাপ বাড়াসহ নানা রোগ সৃষ্টি হয়।’
পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালিত শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্পের আওতায় সারাদেশের শব্দ দূষণের ওপর জরিপ করছে ইকিউএমএস কনসালটিং লিমিটেড এবং বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যায়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)।
তারই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যায়ন কেন্দ্রের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদারের নেতৃত্বে পরিচালিত টিম ঝিনাইদহ শহরে শব্দ দূষণের মাত্রা জানতে পাঁচ স্থানে সাউন্ড লেভেল মিটার স্থাপন করে। মেশিনটি প্রতি এক মিনিট পরপর তথ্য দেবে। যার মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টার শব্দ দূষণের মাত্রা জানা যাবে।