চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসী যাত্রীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বকশিশের নামে বিমানবন্দরে নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্য, গাড়িচালক এবং বহিরাগতরা এ হয়রানি করছেন বলে অভিযোগ করেছেন প্রবাসীরা। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপনা নিয়ে অসন্তাষ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী প্রবাসীরা।
চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার পাহাড়তলী ইউনিয়নের দুবাই প্রবাসী তসলিম উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিমান থেকে নামতেই চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে হয়রানি শুরু হয়। দেখা যায়, কাস্টমস কর্মকর্তারা অবৈধ মালামাল খোঁজার অজুহাতে লাগেজ খুলে তন্ন তন্ন করেন। অবৈধ মালামাল না পেলেও তারা লাগেজ বেঁধে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন না। এ কারণে বিমানবন্দরেই প্রবাসীদের অনেক মালামাল খোয়া যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিমানবন্দর থেকে মালপত্র নিয়ে বের হতেই শুরু হয় নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসারদের হয়রানি। বিদেশি মুদ্রার জন্য তারা প্রবাসীদের রীতিমতো নাজেহাল করে ছাড়েন। এরপর মালামাল নিয়ে অপেক্ষমান স্বজনদের কাছে যাওয়ার আগেই ব্যাগ টানাটানি শুরু করে বহিরাগতরা। একজন প্রবাসীকে চার থেকে পাঁচ জন যুবক ঘিরে ধরে। নিজেরাই আগ বাড়িয়ে এসব মালামাল গাড়িতে তুলে দেয়। এরপর মোটা অংকের বকশিশ দাবি করে। সেই সঙ্গে আছে অসংখ্য ভিক্ষুকের উপদ্রবও।’
সম্প্রতি চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়ে দেখা গেছে, যেসব প্রবাসী যাত্রী ইমিগ্রেশন শেষ করে বিমানবন্দর থেকে বের হচ্ছেন তাদের এগিয়ে দেওয়ার কথা বলে কিছু সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্মী এবং আনসার সদস্য ডলার, দিরহাম কিংবা বিদেশি মুদ্রা দাবি করছেন। তারা বিদেশি মুদ্রা পেলে সালাম দিয়ে বিদায় জানাচ্ছে, না পেলে রীতিমতো ভর্ৎসনার শিকার হতে হয় প্রবাসীদের।
এরপর দ্বিতীয় ধাপে প্রবাসীকে টানাটানি করে বিভিন্ন যানবাহনের চালকরা। একজন প্রবাসীকে কয়েকজন চালক ঘিরে ধরেন। তাদের কেউ কেউ জোর করে মালামাল নিজ গাড়িতে তুলে নিতেও চেষ্টা করেন। এরপর যেসব প্রবাসীকে তাদের স্বজনরা নিতে আসেন তাদের কাছে পৌঁছাতে আরেক দফা হয়রানির শিকার হতে হয়। সহযোগিতা করার নামে একজন প্রবাসীর মালামাল চার-পাঁচ জন যুবক টানাটানি করে। গাড়িতে মালামাল তুলে দিয়ে মোটা অঙ্কের বকশিশ দাবি করতেও দেখা গেছে। অথচ পুরো শাহ আমানত বিমানবন্দর সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় রয়েছে। প্রকাশ্যে প্রবাসীদের কাছ থেকে টাকা দাবি করা হলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।
আরব-আমিরাত প্রবাসী সাংবাদিক সমিতির সভাপতি শিবলী আল সাদিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে যাত্রী হয়রানি লেগেই আছে। প্রতি পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হয় প্রবাসীদের। অথচ এই প্রবাসীরাই রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখেন। তারা বিমানবন্দরে পা দিয়েই হয়রানির শিকার হন। প্রবাসীরা বিমানবন্দরে রিজার্ভেশন সেন্টার এবং ইমিগ্রেশনে নানাভাবে হয়রানি হচ্ছেন। বিশেষ করে, ভিজিট ভিসার যাত্রীদের প্রতি এ হয়রানির মাত্রা অনেক বেশি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দ্রুত ইমিগ্রেশনের ব্যবস্থা থাকলেও বাংলাদেশে তা এখনও গড়ে ওঠেনি। ইমিগ্রেশনে কর্মরতদের প্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষ প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিমানবন্দরে প্রবাসীর ব্যাগ গায়েব, ব্যাগ থেকে মালামাল চুরি, ব্যাগ টানাটানি, টাকার জন্য প্রবাসীদের বিরক্ত করা চরম পর্যায়ে ঠেকেছে। এগুলো বন্ধ করা উচিত। এর সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন।’
অভিযোগের বিষয়ে পতেঙ্গা থানা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বিমানবন্দরে আনসার সদস্যরা যাত্রীদের কাছ থেকে বকশিশের নামে টাকা দাবি কিংবা হয়রানি করছে এমন অভিযোগ আমরা পাইনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তাসলিম আহমেদ বলেন, ‘প্রবাসীদের কাছ থেকে টাকা দাবি নিয়ে আনসার সদস্য দ্বারা হয়রানির কিছুটা সমস্যা আছে। তবে আগের চেয়ে অনেক কমেছে। আমরা পুরোপুরি কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। পুরো বিমানবন্দর এলাকা সিসিটিভির আওতায় আছে। বিমানবন্দরের পরিবেশ এখন অনেক ভালো।’ বহিরাগতদের দ্বারা সৃষ্ট সমস্যাও অনেক কমেছে বলেও এ কর্মকর্তা দাবি করেন।