চুয়াডাঙ্গার ভিক্টোরিয়া জুবিলি (ভি জে) উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এসএসসি নির্বাচনি পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষককে চড়-থাপ্পড় মারার ঘটনায় ওই ছাত্রকে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠিয়েছে আদালত। মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটার দিকে চুয়াডাঙ্গা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মুসরাত জেরিন এ আদেশ দেন।
এর আগে আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করে ওই ছাত্র। আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে শিশু সংশোধনাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
এদিকে, এ ঘটনায় ওই ছাত্রের শাস্তির দাবি জানিয়ে আজও বিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছে।
জানা গেছে, এসএসসি নির্বাচনি পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষককে চড়-থাপ্পড় মারার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অভিযোগ উঠেছে, পরীক্ষার হলে বিশৃঙ্খলা ও অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে পরীক্ষার্থী দশম শ্রেণির এক ছাত্রের খাতা কেড়ে নেন শিক্ষক। এতে শিক্ষক ও ছাত্রের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে শিক্ষক হাফিজুরকে চড়-থাপ্পড় মারেন ওই ছাত্র।
এ ঘটনায় শিক্ষকদের পক্ষে সোমবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় মামলা করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ সফিয়ার রহমান।
আজ বেলা সাড়ে ১২টায় ভিক্টোরিয়া জুবিলি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের সামনে চুয়াডাঙ্গা-জীবননগর রোডে অবস্থান নিলে কিছুক্ষণের জন্য তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে যানজট নিয়ন্ত্রণে আসে। মানববন্ধনে বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন।
সঠিক বিচারের দাবি জানিয়ে তারা বলেন, ‘এ ধরনের সামাজিক অবক্ষয়ের ঘটনা আর যেন চুয়াডাঙ্গায় না ঘটে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। এমন ঘটনা মেনে নেওয়া হবে না। সামাজিকভাবে আমরা এত নিচে নেমে গেছি, এর উত্তরণ দরকার।’
তারা আরও বলেন, ‘শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। কড়া প্রশাসন প্রয়োজন। আমরা এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ সফিয়ার রহমান বলেন, ‘পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে ওই শিক্ষার্থী পরীক্ষার নিয়মকানুন যথাযথভাবে মানছিল না। যে কারণে ভুক্তভোগী শিক্ষক তার খাতাটি নিয়ে নেন এবং বসতে বলেন। কিন্তু ওই শিক্ষার্থী শিক্ষকের ওপর চড়াও হয় এবং একপর্যায়ে চড়-থাপ্পড় মারে। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষক লিখিতভাবে বিচারের আবেদন করেছেন। তার আবেদন এবং সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজ সহকারে বিদ্যালয়ের সভাপতির পরামর্শে আমরা একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহাব্বুর রহমান জানান, সরকারি কর্মচারীকে কর্তব্য পালনে বাধাপ্রদান, আক্রমণ, অপরাধমূলক বলপ্রয়োগ এবং আঘাতসহ ভয়ভীতি প্রদানের অপরাধে ৩৩২, ৩৫৩ ও ৫০৬ ধারায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাড. আবু তালেব বলেন, ‘আদালতে হাজির হয়ে ওই শিক্ষার্থী জামিনের আবেদন করলে বিজ্ঞ আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে শিশু সংশোধনাগারে (যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র) পাঠানোর নির্দেশ দেন।’