সিলেটে গোলাপগঞ্জের ভাদেশ্বরে নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর নেকাব খোলার অভিযোগ নিয়ে চলছে তোলপাড়। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ভাদেশ্বর এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। একইসঙ্গে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য উপজেলা প্রশাসন ও স্কুল পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে দুটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে। গত ১৫ মার্চের এ ঘটনায় এখনও স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। তবে বিষয়টিকে ভুল বোঝাবুঝি বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত শিক্ষক সুনীল চন্দ্র। তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।
জানা যায়, ক্লাসে মেয়ের নেকাব খুলতে অধ্যক্ষ অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ তোলেন ছাত্রীর বাবা। এ নিয়ে তিনি ফেসবুকে পোস্ট দেন ও এলাকাবাসীর কাছে বিচার চান। পরে তিনি ঘটনার বিষয়ে পুরোটা জেনে বিচার চেয়ে দেওয়া ফেসবুক পোস্ট ডিলিট করে দেন। পরে এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে পুনরায় পোস্ট দেন ওই ছাত্রীর বাবা। তবে এ সময়ের মধ্যেই ভাদেশ্বর এলাকায় মাইকিং করে নাছির উদ্দিন বিদ্যালয়ে স্থানীয়দের জড়ো হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এতে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যায়।
ওই ছাত্রীর বাবা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আসলে পুরো ঘটনা ভুল বোঝাবুঝি। শ্রেণিকক্ষে করোনা ও অক্সিজেন বিষয়ে আলোচনা করেন অধ্যক্ষ সুনীল চন্দ্র। এ সময় তিনি মাস্কের ব্যবহার নিয়েও আলোচনা করেন। কিন্তু অনেকেই বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালাচ্ছে। ক্লাসে আমার মেয়ের নেকাব খোলার বিষয়ে প্রথমে আমি ফেসবুকে পোস্ট করেছিলাম। এরপর পুরো বিষয়টি জেনে আমার ভুল ভাঙে। নিজের ভুল স্বীকার করে আগের দেওয়া ফেসবুক পোস্ট ডিলিট করে নতুন করে আবার পোস্ট দিয়েছি।’
শিক্ষকের বিরুদ্ধে মাইকিং করে অপপ্রচার কে চালিয়েছে, জানাতে চাইলে ছাত্রীর বাবা আরও বলেন, ‘ফেসবুকে আমার পোস্ট দেখার পর ভাদেশ্বর এলাকায় চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। পরবর্তীতে আমি ফেসবুক থেকে প্রথম পোস্টটি ডিলিট করে দিয়েছি। ঘটনার পর দিন এলাকাবাসীর পক্ষে কে বা কারা দুপুরের দিকে নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে স্থানীয়দের জড়ো হতে মাইকিং করে। এতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যানসসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এলাকাবাসীকে শান্ত করেন।’
স্কুল সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ১৫ মার্চ গণিতের শিক্ষক আমিন উদ্দিন না আসায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুনীল চন্দ্র দাস এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়ার জন্য শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত হন। এ সময় তিনি ক্লাসে মাস্ক ও অক্সিজেন বিষয়ে কথা বলেন। এক পর্যায়ে ক্লাসে অক্সিজেনের সমস্যা হবে বলে এক ছাত্রীকে মুখের নেকাব নামিয়ে ক্লাস করতে বলেন তিনি। পরে ওই ছাত্রী বাড়ি ফিরে নেকাব খুলে ক্লাস করার বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের জানায়। এ ঘটনায় ছাত্রীর বাবা শিক্ষকের বিচার চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন। এরপর শিক্ষক সুনীলের বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগে বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট দেওয়া হয়। পরে ওইদিনই ছাত্রীর বাসায় যান অধ্যক্ষ সুনীল চন্দ্রসহ আরও কয়েকজন শিক্ষক এবং গভর্নিং বডির কয়েকজন সদস্য। মেয়ের বাবার কাছে ক্লাসের ঘটনাটি ব্যাখ্যা করা হয়। বিস্তারিত জেনে ছাত্রীর বাবা নিজের ভুল বুঝতে পারেন। পরে তিনি ফেসবুক পোস্ট ডিলিট করে দেন এবং ভুল স্বীকার করে পুনরায় পোস্ট দেন।
এদিকে গভর্নিং বডি গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শামীম আহমদ বলেন, ‘শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে আমরা তদন্ত করছি। এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীর বক্তব্যও শুনেছি। তদন্ত কাজ শেষ হওয়ার পর ঘটনার বিস্তারিত জানা যাবে।’
ভাদেশ্বর নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাসুম চৌধুরী বলেন, ‘স্কুল পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে ঘটনাটি খতিয়ে দেখার জন্য একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী সপ্তাহে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।’ তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
উপজেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রধান ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম জানান, ‘বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গোলাপগঞ্জ থানার ওসি হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, ‘ভাদেশ্বর এলাকার পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ শান্ত রয়েছে। তবে পুলিশের নজরদারি রয়েছে।’
ভাদেশ্বর নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে ১৯৯৫ সাল থেকে শিক্ষকতা শুরু করেন সুনীল চন্দ্র দাস। ২০০৯ সালে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান। ২০১৫ সালে বিদ্যালয়ে কলেজ শাখা চালুর পর থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।