বরিশালে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় শিক্ষার্থীদের ওপর টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। এতে ১৫ শিক্ষার্থী ও সাত পুলিশ সদস্যসহ ২২ জন আহত হয়েছেন।
বুধবার (১৭ জুলাই) বেলা ২টার দিকে নগরীর চৌমাথা ও নথুল্লাবাদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহতদের বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নগরীর মুসলিম পাড়ার বাসিন্দা আবেদ হোসেনসহ একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, দুপুর ১২টার দিকে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের নথুল্লাবাদ এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। সেখানে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও অংশ নেয়। অবরোধের কারণে বিভিন্ন যানবাহন আটকা পড়ে। বেলা ২টার দিকে হাতেম কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নথুল্লাবাদের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় বিপরীত দিক থেকে মোটরসাইকেল চালিয়ে আসছিলেন এক পুলিশ সদস্য। তিনি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঠেকাতে আসছেন ভেবে তাকে ধাওয়া করেন শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় মোটরসাইকেল রেখে দৌড় দেন। এ সুযোগে মোটরসাইকেলে আগুন দেন শিক্ষার্থীরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছুড়ে পুলিশ। এতে পুলিশসহ ১২ শিক্ষার্থী আহত হন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের বুলেট ও টিয়ারশেল ছোড়ার খবর শুনে নথুল্লাবাদ এলাকায় থাকা শিক্ষার্থীরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। তখন সেখানেও শিক্ষার্থীদের ওপর রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছুড়েছে পুলিশ। এতে শুরু হয় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এ ঘটনায় পুলিশসহ ১০ শিক্ষার্থী আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ব্যাপারে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিচুর হক বলেন, ‘আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। শিক্ষার্থীরা পুলিশের একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দিয়েছে। অন্তত সাত জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।’
এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লোকমান হোসেন বলেন, ‘পুলিশের ওপর হামলার কারণে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। কয়েকজন আহত হয়েছে। তবে কতজন আহত, তা জানা নেই।’
এদিকে, বিকালে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেট সংলগ্ন বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা লাঠিসোঁটা হাতে নিয়ে বিক্ষোভে নামেন। এ সময় সড়কের পাশে ইট মজুত করা হয়। যে কোনও ধরনের হামলা হলে তা প্রতিহত করতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে দাবি আন্দোলনকারীদের।
আন্দোলনকারীদের নেতৃত্ব দেওয়া বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুজয় বলেন, ‘দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হলেও আন্দোলন দমানো যাবে না। যারা ছাত্রলীগের হামলায় নিহত এবং আহত হয়েছেন, অবশ্যই হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। সেইসঙ্গে কোটা সংস্কার করা না পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’