রাতে ঘন কুয়াশা, দিনে কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশে হিমেল হাওয়া। কমতে থাকা তাপমাত্রায় কনকনে শীতে ভোগান্তিতে পড়েছেন কুড়িগ্রামের প্রান্তিক মানুষজন। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের দিনমজুর শ্রেণির মানুষের কষ্টের মাত্রা বেড়েছে। দিনভর সূর্যের দেখা না মেলায় পরিবারের শিশু ও বয়স্ক লোকদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেকে।
বুধবার (১০ জানুয়ারি) জেলায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা মঙ্গলবারের তুলনায় দশমিক ৮ ডিগ্রি কম।
কুড়িগ্রামের রাজারহাটের কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জানায়, ‘কয়েক দিন ধরে জেলায় তাপমাত্রা হ্রাস পাচ্ছে। হিমালয় থেকে আসা হিমেল হাওয়া জেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলছে। ফলে বেশি ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। এ ছাড়াও মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ও ঘন কুয়াশার কারণে ঠান্ডার তীব্রতা বেড়েছে। এ অবস্থা আরও দুই-তিন দিন চলতে পারে।
পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘চলমান ঠান্ডা কয়েক দিন বিরাজ করতে পারে। মধ্য জানুয়ারি পর জেলায় একটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তবে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও এই মুহূর্তে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই।’
কুড়িগ্রাম পৌর এলাকার নির্মাণশ্রমিক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কাইল রাইতে (মঙ্গলবার দিবাগত রাত) এমন শীত পড়ছে, মনে হয় টিনের চালত বৃষ্টি পড়বার লাগছে। ঠান্ডাতে হাত-ঠ্যাং শিষ্টি নাগি যায়। কাম করবার ধরলে হাত চলে না।’
এদিকে শীতে ঠান্ডার প্রকোপ বাড়লেও হাসপাতালে শিশু ও ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালটির আবাসিক চিকিৎসক শাহীনুর রহমান সরদার বলেন, ‘এবারের শীতে এখন পর্যন্ত শিশু ও ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক। বরং কিছুটা কম রয়েছে। পরিবারের লোকজন একটু সতর্ক ও যত্নবান থাকলে শিশুরা শীতজনিত রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারবে।’
তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর চিত্র কিছুটা ভিন্ন বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুর-এ –মুর্শেদ। তিনি বলেন, ‘শীতের প্রকোপে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা ৫-১০ ভাগ বেড়েছে। হাসপাতালের বহির্বিভাগে সর্দি-কাশিজনিত রোগী বেশি আসছেন।’
শীতজনিত রোগ থেকে মুক্ত থাকার উপায় প্রশ্নে সিভিল সার্জন বলেন, ‘শিশুদের ঠান্ডা লাগানো যাবে না। গরম কাপড় পরিধান ও পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। এ ছাড়াও যারা অ্যাজমা রোগে আক্রান্ত কিংবা যাদের উপসর্গ রয়েছে তারা যেন নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেন।’
এদিকে শীতার্তদের জন্য সরকারিভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা জানায়, চলমান শীতে প্রায় ৪০ হাজার কম্বল উপবরাদ্দ দেওয়া হয়েছে যা বিতরণ শেষ পর্যায়ে। এ ছাড়াও শীতার্ত মানুষের গৃহ সংস্কারের জন্য টিন এবং খাদ্য সহায়তার জন্য শুকনা খাবার রয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী সেগুলো বিতরণ করা হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘কম্বল ছাড়াও আমরা কর্মজীবী মানুষ ও শিশুদের জন্য শীতবস্ত্র হিসেবে সোয়েটার জাতীয় বস্ত্র বিতরণের উদ্যোগ নিচ্ছি। শীতে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের জন্য খাদ্যসহায়তা বিতরণসহ মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।’