টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরে বন্যায় পাহাড়ি চার নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পানি কমলেও ঢলের পানি যেদিক দিয়ে নেমে যাচ্ছে সেসব অঞ্চলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বন্যায় এখন পর্যন্ত জেলায় আট জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। পাশাপাশি দুই লক্ষাধিক মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
তবে রবিবার (০৬ অক্টোবর) বিকালে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, বিকাল থেকে রোদ ওঠায় এবং বৃষ্টি কমে যাওয়ায় পানি কমে যাবে। তবে জেলার পাঁচ উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ভারত সীমান্তবর্তী শেরপুরের তিন উপজেলা। এতে দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এখনও নিম্নাঞ্চলে পানি বেড়েই চলেছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এতে বাড়ছে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা। ডুবে গেছে দুই শতাধিক গ্রাম। তলিয়ে আছে রাস্তাঘাট। ঘরবাড়িতে পানি ওঠায় আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে মানুষ। দেখা দিয়েছে খাবার সংকট। দুর্গম গ্রামীণ এলাকায় নৌকা ছাড়া যোগাযোগ না করতে পারায় সেখানে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছায়নি।
এ ছাড়া বন্যায় ভেসে গেছে পুকুরের মাছ, সবজির ক্ষেত, কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি ও গবাদি পশু। বিধ্বস্ত হয়েছে কয়েকটি সড়কসহ অসংখ্য গ্রামীণ কাঁচা-পাকা সড়ক। কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অনেক এলাকা। সংকট তৈরি হয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির এবং গোখাদ্যের। জেলা প্রশাসন থেকে ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
বন্যাদুর্গত নালিতাবাড়ীতে শনিবার রাত পর্যন্ত চার জনের মৃত্যুর খবর জানা গিয়েছিল। রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আরও দুজনের মৃত্যুর খবর আসায় ছয় জনে দাঁড়িয়েছে। মৃতরা হলেন নালিতাবাড়ীর নন্নী ইউনিয়নের অভয়পুর গ্রামের বছির উদ্দীনের দুই ছেলে আবু হাতেম (৩০) ও আলমগীর হোসেন (১৭), বাঘবেড় ইউনিয়নের বাঘবেড় গ্রামের মানিক মিয়ার স্ত্রী ওমিজা খাতুন (৪৫) এবং নয়াবিল ইউনিয়নের আন্ধারুপাড়া গ্রামের ইদ্রিস মিয়া (৬৬)। এর মধ্যে শনিবার রাতে দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। শুক্রবার দুপুরের পর নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বাড়ি থেকে বেরিয়ে চেল্লাখালী নদীর পানির স্রোতে ভেসে যান তারা। একই সময় সেখানকার বাতকুচি গ্রামের জহুরা খাতুন (৪৫) ভেসে গিয়ে নিখোঁজ রয়েছেন। একই দিন গ্রামের ডুবন্ত সড়ক পার হওয়ার সময় ভেসে গিয়ে ইদ্রিস মিয়া এবং বন্যার পানিতে ডুবে ওমিজা খাতুনের মৃত্যু হয়। রবিবার খলিশাকুড়ি থেকে খলিলুর রহমান (৬৫) ও সন্ধাকুড়া থেকে আরেকজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে একজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘বন্যায় নালিতাবাড়ীতে এখন পর্যন্ত ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে একজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এখনও একজন নিখোঁজ আছেন।’
অপরদিকে বন্যাকবলিত নকলা উপজেলায় দুজনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছেন নকলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘উপজেলার উরফা ইউনিয়নের কুড়েরকান্দায় বন্যার পানিতে থাকা বিদ্যুতের তারে বিদ্যুতায়িত মোক্তার আলী (৫০) নামে একন মারা গেছেন। একই উপজেলার গনপদ্দির গজারিয়া বন্যার পানিতে ডুবে আব্দুর রাজ্জাক নামে আরেকজনের মৃত্যু হয়েছে।’
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া রবিবার বিকালের তথ্য অনুযায়ী, জেলার ভোগাই নদীর পানি ৫৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং চেল্লাখালীর ৫৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া অপর দুটি পাহাড়ি নদী মহারশি ও সোমেশ্বরীর পানি বিপদসীমার নিচে রয়েছে। এদিকে ব্রহ্মপুত্র, মৃগী ও দশানী নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেও বিপদসীমার অনেক নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা কৃষি বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, এ পর্যন্ত জেলার সাড়ে ৩৫ হাজার হেক্টর জমির আমন ধানের আবাদ পানিতে তলিয়ে গেছে। সাড়ে ৯০০ হেক্টর জমির সবজির আবাদ পানিতে ডুবে আছে।
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাকিবুজ্জামান খান বলেন, সোমবারের মধ্যে সব নদীর পানি কমবে। উন্নতি হবে বন্যা পরিস্থিতির।