করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে গত ২৮ জুন থেকে দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন (বিধিনিষেধ) চলছে। তারপরও সংক্রমণ ও মৃত্যুর লাগাম টেনে ধরে রাখা যাচ্ছে না। প্রায় প্রতিদিনই শনাক্ত ও মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হচ্ছে। সবশেষ রোববার (১১ জুলাই) দেশে একদিনে সর্বোচ্চ রেকর্ড সংখ্যক ১১ হাজার ৮৭৪ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। আর মৃত্যু হয় ২৩০ জনের। এখন পর্যন্ত একদিনে দেশে সর্বোচ্চ মৃত্যুর সংখ্যা এটি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, মাত্র আটদিনে (৪ জুলাই থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত) করোনায় আক্রান্ত হয়ে দেড় হাজারের বেশি রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ সময় খুলনা, ঢাকা এবং চট্টগ্রাম- এই তিন বিভাগে বেশি মৃত্যু হয়।
সূত্র আরও জানায়, দেশের আট বিভাগের সকল জেলাতে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। গত জুন মাসে ৩০ দিনে (১ জুন থেকে ৩০ জুন) নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তকৃত রোগীর সংখ্যা ছিল এক লাখ ১২ হাজার ১৭৮ জন। আর জুলাই মাসের প্রথম ১১ দিনেই শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পুরো জুন মাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাকে ছুঁই ছুঁই করছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র ও পরিচালক অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ‘দেশে করোনা আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। লকডাউন শুরুর দিন থেকে অর্থাৎ ২৮ জুন থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে নমুনা পরীক্ষায় নতুন করোনা রোগী শনাক্তকরণের হার প্রায় ৩২ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগে রোগীর সংখ্যা বেশি হয়েছে। ফলে এসব বিভাগে সরকারি হাসপাতালের সাধারণ বেডসহ আইসিইউতে রোগীর চাপ বাড়ছে। এ তিন বিভাগে শুধু সংক্রমণই নয়, মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে।
ডা. রোবেদ আমিন আরও বলেন, ‘সংক্রমিত রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিনের মধ্যে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার জন্য শয্যা খুঁজে পাওয়া দুরূহ হয়ে পড়বে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কিত বুলেটিনে দেখা যায়, রাজধানীসহ সারাদেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য সর্বমোট ১৫ হাজার ৪৩টি শয্যার মধ্যে পাঁচ হাজার ১৪টি সাধারণ শয্যা, এক হাজার ২৬৩টি আইসিইউ’র মধ্যে ৩০১টি শয্যা খালি রয়েছে।
আর রাজধানীর সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের পাঁচ হাজার ৬৬৮টি সাধারণ শয্যার মধ্যে এক হাজার ৯০১টি শয্যা, ৮৬১টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে ২০৬টি শয্যা ফাঁকা রয়েছে। স্বাস্থ্য ও রোগ তত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে করোনার টিকা সংগ্রহ করে জনগণকে টিকার আওতায় আনার চেষ্টা চালাচ্ছে। করোনার নমুনা পরীক্ষা করে দ্রুত শনাক্ত করে চিকিৎসার আওতায় আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। তারপরও সংক্রমণ ও মৃত্যু রোধ হচ্ছে না।
তারা বলেন, একটি দেশের ৮০ শতাংশ জনগণকে টিকার আওতায় এনে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে হার্ড ইমিউনিটি না আসা পর্যন্ত সংক্রমণ থামবে না। দেশে পাঁচ শতাংশেরও কম মানুষকে টিকারও আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। এক্ষেত্রে ছোট-বড় নির্বিশেষে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু রোধে প্রয়োজনীয় সকল স্বাস্থ্যবিধি, যেমন-ঘরে-বাইরে মাস্ক পরিধান, সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে ঘন ঘন হাত ধৌত করা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা এসব মেনে চলতে হবে। করোনার লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।