প্রতিবারই আগেভাগে শীত চলে আসে উত্তরের জনপদগুলোতে। গত কয়েকদিনের শীতে কাবু এ অঞ্চলের মানুষ। শনিবার (৭ ডিসেম্বর) তাপমাত্রা আরও কমেছে উত্তরের জেলা দিনাজপুরে। জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যেটি শৈত্যপ্রবাহের খুব কাছাকাছি। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ।
দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানান, শনিবার সকাল ৯টায় এই জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ৯৩ শতাংশ এবং গতিবেগ ঘণ্টায় এক কিলোমিটার।
তিনি আরও জানান, শনিবার যে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে তা শৈত্যপ্রবাহের কাছাকাছি। আবহাওয়ার ভাষায়, তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে সেটাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে সেটাকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ এবং ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলে। আর যদি তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আরও নিচে নেমে যায়, তাহলে তাকে তীব্রতর শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।
সেই হিসাব অনুসারে, দিনাজপুরে তাপমাত্রা ১০-এর ঘরে অবস্থান করছে। আর কিছুটা কম হলেই এই জেলার ওপর দিয়ে বইবে শৈত্যপ্রবাহ। যদিও শনিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে নওগাঁর বদলগাছিতে ১০ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এর আগে, গতকাল দিনাজপুর জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ৪ ডিসেম্বর ও ৫ ডিসেম্বর জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৪ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অফিসের দেয়া তথ্যমতে, ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে এই জেলার তাপমাত্রা। সেই সঙ্গে হিমেল বাতাসের ঝাপটা স্থানীয়দের জীবন আরও বিপর্যস্ত করে তুলেছে। খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষের আয় উপার্জনে ভাটা পড়েছে। কৃষকরাও রয়েছেন শঙ্কার মধ্যে।
শনিবার সকালেই উঠেছে সূর্য, তবে প্রখরতা একেবারেই কম। যদিও গতকালের চেয়ে হিমেল বাতাস কিছুটা কম প্রভাবিত হচ্ছে এ জেলার ওপর দিয়ে।
সকালে সদর উপজেলার নয়নপুর এলাকার কৃষক মাজেদুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, শীতের মৌসুমটা কৃষকদের জন্য কষ্টকর। বোরো বীজতলার কাজ চলছে। এভাবে শীত এবং কুয়াশা হলে বীজ থেকে অঙ্কুরিতের হার কমে যায়। তা ছাড়া সকালে মাঠে এসে কাজ করাটাও কষ্টের।
একই এলাকার কৃষক ফিরোজ জানান, এই শীতের সময়ে দিনমজুর পাওয়া যায় না। তারা কাজে আসতে চান না। ফলে চাষাবাদের কাজেও ব্যাঘাত ঘটে।
দিনমজুর শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সকালে কাজে আসতে বেশ কষ্ট হয়। রোদ না ওঠা পর্যন্ত আমরা কাজ করতে পারি না। আর বোরো বীজতলা পানি দেওয়া, টমেটো ক্ষেতে পানি দেওয়া, আলুক্ষেতে পানি দেওয়া অর্থাৎ এই সময়ে পানিতে হাত দেওয়া আরও বেশি কষ্টের।’
মির্জাপুর এলাকার ভ্যানচালক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘শীতের থেকে আরও বেশি কষ্টকর হলো হিমেল হাওয়া। যেদিন বাতাস বেশি হয় সেদিন আর কাজ করার অবস্থা থাকে না। যদি বাতাস হয়, তাহলে রোদ উঠলেও গরম লাগে না। এই শীত মৌসুমটা আসলেই আমাদের জন্য কষ্টের।’
আবহাওয়া কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানান, ধীরে ধীরে তাপমাত্রা কমে যাবে এবং ঘন কুয়াশার প্রাদুর্ভাব হবে। এই মাসেই শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে জেলার ওপর দিয়ে। এই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ কিংবা তৃতীয় সপ্তাহে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।