কুমিল্লার শ্রীকাইল ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস গ্যাসক্ষেত্রের দুই কূপে ডিপ ড্রিলিং করতে চায় পেট্রোবাংলা। এ বিষয়ে কোনও অভিজ্ঞতা না থাকার পরও ডিপ ড্রিলিংয়ের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করাটা কেন এত জরুরি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে দেশের প্রয়োজনে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে চেষ্টা করাও দরকার বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, শ্রীকাইল-১ এবং তিতাস-১ এর ডিপ ড্রিলিং দিয়ে দেশে ডিপ ড্রিলিংয়ে যাত্রা শুরু হবে। দুটি কূপের মধ্যে শ্রীকাইলে খনন করা হবে ৫ হাজার ৩০০ মিটার। অন্যদিকে তিতাসে খনন করা হবে ৫ হাজার ৬০০ মিটার। তবে দুই ক্ষেত্রেই ১০০ মিটার কম বা বেশি হতে পারে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম বলেন, ‘বাপেক্স যদি তাদের জরিপ দেখে মনে করে এত ডিপে গ্যাসের আরও স্ট্রাকচার আছে, তাহলে ডিপ ড্রিলিংয়ে যেতেই পারে। তবে এ ক্ষেত্রে ঝুঁকির বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। আবার অভিজ্ঞতাও একটি বড় ইস্যু, যা বাপেক্সের নেই। আর আধুনিক যন্ত্রপাতি কাজে লাগিয়ে যদি করতে পারে, সেটা খুবই ভালো খবর।’
ডিপ ড্রিলিং কী—এমন প্রশ্নে বাপেক্সের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘সাধারণত আমাদের দেশে ৪ হাজার ২০০ থেকে ৪ হাজার ৬০০ মিটার পর্যন্ত কূপ খনন করে গ্যাস তোলা হয়। এর নিচেই রয়েছে হার্ড রক বা কঠিন শিলা। এই কঠিন শিলার নিচে কী আছে, তা এখনও অনুসন্ধান করে দেখা হয়নি।’
তবে বাপেক্সের একটি তৃতীয় মাত্রার (থ্রিডি) জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণ করে বলা হচ্ছে এর নিচে গ্যাস থাকতে পারে। ওই থ্রিডিতে বলা হয়েছে শ্রীকাইলে ৯২৬ বিসিএফ (বিলিয়ন ঘনফুট) আর তিতাসে ১ হাজার ৫৮৩ বিসিএফ গ্যাস থাকতে পারে। সব মিলিয়ে এই মজুতের পরিমাণ আড়াই টিসিএফের (ট্রিলিয়ন ঘনফুট) মতো হতে পারে।
তবে এ ক্ষেত্রে ঝুঁকিও রয়েছে। সাধারণত হার্ড রকের পর গলিত লাভা থাকে। তবে শ্রীকাইল ও তিতাসের ভূপৃষ্ঠের ওই অংশে কী আছে, তা এখনও কেউ জানে না। হার্ড রক ভেদ করে ড্রিলিং করলেই বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া সম্ভব। সংগত কারণে বলা হচ্ছে—এখানে যেমন রিস্ক আছে, ঠিক তেমনি সম্ভাবনাও রয়েছে।
বাংলাদেশের কোনও গ্যাস ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত ডিপ ড্রিলিং করা হয়নি। ডিপ ড্রিলিং করার মতো অভিজ্ঞতাও বাপেক্সের নেই। এ ক্ষেত্রে সাধারণত কোনও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হবে। যাদের ডিপ ড্রিলিংয়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে, সেই কোম্পানিটি বাপেক্সের হয়ে ডিপ ড্রিলিং করে দেবে।
বাপেক্সের এক কর্মকর্তা জানান, যেহেতু বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ আবার গ্যাস পাওয়া যাবেই—এমনটি নিশ্চিত নয়, সেহেতু সরকার এখনই এই বিনিয়োগ করবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত সবার আগে নিতে হবে। তিনি আরও জানান, বিষয়টি নিয়ে জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও বাপেক্স চিঠি চালাচালি করছে। এখনও সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সম্মতি মেলেনি। সম্মতি পাওয়া গেলে বাপেক্স দরপত্র আহ্বান করবে।
শ্রীকাইল বাপেক্সের নিজস্ব গ্যাস ক্ষেত্র হলেও তিতাস গ্যাস ক্ষেত্রের মালিক বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি। ফলে এই কাজটি পৃথক দুটি কোম্পানি করবে। সমন্বয় করবে বাপেক্স। এখন পর্যন্ত তিতাস গ্যাস ক্ষেত্রই সবচেয়ে বড় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অন্যদিকে শ্রীকাইল একটি ছোট আকারের গ্যাস ক্ষেত্র।