চলমান শিক্ষক ও চিকিৎসক-সংকটের মধ্যেই বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এবার আটজন চিকিৎসককে বদলি করা হলো। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব (পারসোনেল-৩) এ এফ এম এহতেশামূল হক স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাঁদের বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে।
বদলি হওয়া চিকিৎসকদের ১৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে যোগদান করতে বলা হয়েছে। তবে হঠাৎ কী কারণে তাঁদের বদলি করা হলো, বিষয়টি উল্লেখ নেই প্রজ্ঞাপনে। হঠাৎ চিকিৎসক বদলির এই আদেশে হাসপাতালটিতে চিকিৎসাসেবা ভেঙে পড়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে হাসপাতাল প্রশাসন।
কলেজ ও হাসপাতাল প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মেডিকেল কলেজে ৬৪ শতাংশ শিক্ষক এবং হাসপাতালে ৫৪ শতাংশ চিকিৎসক-সংকট রয়েছে। এ নিয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোতে ‘২৯০ শিক্ষকের ১৮৫ জনই নেই, যন্ত্রপাতিও বিকল’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
হাসপাতালের পরিচালক এইচ এম সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে আগে থেকেই চিকিৎসক-সংকট চলছে। তার মধ্যে একযোগে আটজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের বদলি নতুন করে সংকটে ফেলতে পারে। কেননা, দক্ষিণাঞ্চলের সব উপজেলার গুরুতর রোগীদের এই হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে এখানকার চিকিৎসকদের উপজেলা পর্যায়ে নিয়ে বড় কোনো লাভ হবে বলে মনে হয় না।’
এক হাজার শয্যার হাসপাতাল হলেও শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার রোগী ভর্তি থাকে। এ ছাড়া বহির্বিভাগে প্রতিদিন অন্তত সাত হাজার রোগী আসে সেবা নিতে। প্রতিদিন এই বিপুলসংখ্যক রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। শূন্য থাকা ৫৪ শতাংশ পদে চিকিৎসক পদায়নের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই মন্ত্রণালয়ে চিঠি-চালাচালি করে আসছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি।
হাসপাতালের প্রশাসন বিভাগ জানায়, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫০০ শয্যার অনুকূলে ২২৪ চিকিৎসক পদের বিপরীতে ছিলেন ১২১ জন। এর মধ্যে এখন আট চিকিৎসককে বদলি করা হলো।
সূত্র জানায়, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাধারণ রোগীর চিকিৎসা নিশ্চিত করতে বেশ জোরালো ভূমিকা রেখে আসছিলেন অর্থোপেডিক-সার্জারি বিভাগের কনিষ্ঠ কনসালট্যান্ট মো. মাসরেফুল ইসলাম। এরই মধ্যে তাঁর নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ বেশ প্রশংসা পেয়েছে। তিনি হাসপাতালে আসা রোগীদের বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে না পাঠিয়ে হাসপাতালের ল্যাবে বাধ্যতামূলক পরীক্ষা করার নিয়ম চালু করেন। এটি সাধারণ রোগীদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছিল। হঠাৎ তাঁকে বদলি করা হয়েছে পটুয়াখালী ২৫০ শয্যার জেলা হাসপাতালে। ‘গরিবের চিকিৎসক’ হিসেবে খ্যাতি পাওয়া এই চিকিৎসককে বদলির আদেশে স্থানীয় মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এ ছাড়া বদলি করা হয়েছে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিভাগের কনিষ্ঠ কনসালট্যান্ট তানিয়া আফরোজকে। তিনি নারী রোগীদের কাছে ক্রমে জনপ্রিয় হয়ে উঠছিলেন। তাঁকেও বদলি করা হয়েছে পটুয়াখালীর ২৫০ শয্যার জেলা হাসপাতালে।
এর বাইরে একই আদেশে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের কনিষ্ঠ কনসালট্যান্ট মো. জহিরুল ইসলামকে ভোলা জেলা হাসপাতালে এবং বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের কনিষ্ঠ কনসালট্যান্ট সঞ্জয় কুমার দাসকে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়েছে।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপাতালে সংকটের বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সচিব স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে বৃহস্পতিবার রাত নয়টা পর্যন্ত মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে নতুন করে কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।’