আর্থিক অনিয়ম, শিক্ষকদের বেতন প্রদানে গড়িমসিসহ বিভিন্ন অভিযোগে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে পদত্যাগ করেছেন দিনাজপুর আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ ড. সৈয়দ রেদওয়ানুর রহমান। এর আগে দাবির বিষয়ে বলতে গেলে অধ্যক্ষপন্থি শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকালে কলেজে উপস্থিত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের তাদের মুখে পদত্যাগ করেন তিনি। এর আগে দুপুরের দিকে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে একজন হাসপাতালে ভর্তিসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।
জানা গেছে, আর্থিক অনিয়ম, শিক্ষকদের বেতন প্রদানে গড়িমসিসহ বিভিন্ন অভিযোগে অধ্যক্ষের অপসারণ চেয়ে সোমবার কলেজ প্রাঙ্গণে মানববন্ধন করেন অনার্সের শিক্ষকেরা। মঙ্গলবার সকালেও তারা অধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে অবস্থান করেন। পরে উচ্চ মাধ্যমিকের কিছু শিক্ষার্থী ও বহিরাগতদের নিয়ে নিজ রুমে প্রবেশ করেন অধ্যক্ষ ড. সৈয়দ রেদওয়ানুর রহমান। অবস্থানরত শিক্ষকরা অধ্যক্ষের সামনে গেলে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতির হয়।
এতে একজন শিক্ষকসহ কয়েকজন আহত হন। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা এগিয়ে গেলে তাদের মধ্যে হাতাহাতি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে পরিচিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করেন। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেন অধ্যক্ষ রেদওয়ানুর রহমান।
এর আগে অধ্যক্ষ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এ সময় দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নূরে আলম, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ জিন্নাহ আল মামুন, কোতোয়ালি থানার ওসি ফরিদ হোসেনসহ সেনাবাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আন্দোলনরত শিক্ষকরা দাবি করেন, দীর্ঘদিন থেকে তিনি প্রতিষ্ঠানের আয় ব্যয় নিয়ে গড়িমসি করছিলেন। বিষয়টি জেলা প্রশাসক বরাবর জানানো হয়। অনার্সের শিক্ষকদের তিনি ঠিকমতো বেতন-ভাতা দিতেন না। গরিব মেধাবী শিক্ষার্থীদেরও তিনি কোনও সাহায্য সহযোগিতা করতেন না। আজকে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের দাবির মুখে তিনি পদত্যাগ করেছেন। আশা করছি, খুব শিগগিরই কলেজে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসবে।
শিক্ষকদের দাবি, অনিয়মতান্ত্রিকভাবে অনার্স ফান্ডের এক কোটি ৬০ লাখ ৬৯ হাজার টাকা গ্রহণ, গভর্নিং বডির অনুমোদন ছাড়াই কলেজের টাকা ব্যাংকের অন্য অ্যাকাউন্টে রাখা, বেতন-ভাতা প্রদানে বৈষম্যসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ড. সৈয়দ রেদওয়ানুর রহমানের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যেই অনার্স শিক্ষকদের বকেয়াসহ শতভাগ বেতন-ভাতা প্রদান এবং কলেজের আর্থিক অসঙ্গতি ও বৈষম্য দূর করতে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি আবেদন দিয়েছেন কলেজের ৫৯ শিক্ষক।
শিক্ষকরা বলেন, অনার্স ফান্ড থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বকেয়া বেতন কলেজের অংশ থেকে দেওয়া হচ্ছে। যা প্রকৃত বিধিমালা অনুসরণ করা হয়নি। অনার্স শিক্ষকদের ক্ষেত্রে সব খাত থেকে বেতন-ভাতা প্রদান করা হচ্ছে না। যা চরম বৈষম্য, আমরা এই বৈষম্যের অবসান চাই।
তবে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলেও অধ্যক্ষ সৈয়দ রেদওয়ানুর রহমান ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নূরে আলম কথা বলতে রাজি হননি।