‘সন্ত্রাসীরা পুলিশকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে’
বাংলাদেশ

‘সন্ত্রাসীরা পুলিশকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে’

কোটাবিরোধী আন্দোলনকে পুঁজি করে রংপুর নগরীতে নজিরবিহীন তাণ্ডব ঘটেছে। এতে দুটি পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন, মেট্রোপলিটন তাজহাট থানা, তিন পুলিশ কর্মকর্তার কার্যালয়, পুলিশ লাইন্স, ফাঁড়ি, আওয়ামী লীগের কার্যালয়সহ ১০টি সরকারি অফিসে ভাঙচুরের ঘটনায় বুধবার (২৪ জুলাই) পর্যন্ত ১১টি মামলা করা হয়েছে। মামলায় ৫০০ জনের নাম ছাড়াও অজ্ঞাত আসামি করেছে পাঁচ হাজার জনকে। বুধবার পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছেন ৯৫ জন।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামান বলেছেন, সিসিটিভির ফুটেজসহ বিভিন্নভাবে পাওয়া ভিডিও অডিও পরীক্ষা করে তাণ্ডবের হোতা, মদদদাতা, অর্থ সরবরাহকারীসহ সরাসরি তাণ্ডবে অংশ নেওয়া ৫০০ জনকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে বুধবার পর্যন্ত ৯৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে তাণ্ডবে অংশ নেওয়া অনেকেই রয়েছেন।

এদিকে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানায় মহানগর আওয়ামী লীগ ও জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে তাণ্ডবের ঘটনায় বুধবার ভোরে পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে। মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষে মামলার বাদী হয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাশেম ও জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষে মামলার বাদী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জিনাত হোসেন লাভলু।

এ বিষয়ে মহানগর যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাশেম জানান, বিএনপি ও জামায়াতের ৭০ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৫০০ জনের নামে মামলা করা হয়েছে। মহানগর আওয়ামী লীগ অফিসে কিছুই নাই। অফিসের সমস্ত মালামাল ভাঙচুর, লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে কার্যালয়টি ভস্মীভূত করা হয়েছে। এই নারকীয় তাণ্ডব কোটা আন্দোলনকারীরা করেনি। পরিকল্পিতভাবে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা এই নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা আশা করবো, সবাইকেই গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।

জিনাত হোসেন লাভলু অভিযোগ করেন, আমাদের অফিসের সব মালামাল লুট করা হয়েছে। আসবাবপত্র ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। আমরাও ৬০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছি। অজ্ঞাত আরও ৫০০ জনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এ ছাড়াও পরিবার পরিকল্পনা অফিস, মৎস্য অধিদফতর অফিস ও সমবায় মার্কেটে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগে পৃথক পৃথক তিনটি মামলা করা হয়েছে।

যা বললেন রংপুরের পুলিশ কমিশনার

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামান বলেন, বিভাগীয় নগরী রংপুরে বিগত কয়েকদিন পরিকল্পিতভাবে জামায়াত-বিএনপির সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা রংপুর নগরীর তাজহাট থানা, ডিসি ডিবি, ডিসি ক্রাইম, নবাবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িসহ পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট করাসহ ১০টি সরকারি অফিসে নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছে। তারা পুলিশকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে। সরকারি বেসরকারি সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। এসব তাণ্ডবের বিভিন্ন অডিও ভিডিও সংগ্রহ করে এ পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক সন্ত্রাসীকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। তারা সরাসরি নাশকতায় জড়িত ছিল।

এ প্রতিনিধিকে পুলিশ কমিশনার বলেন, বিএনপি-জামায়াতের চিহ্নিত দুষ্কৃতিকারীদের মধ্যে যারা অর্থ ও অন্যান্যভাবে সহযোগিতা করেছে এর মধ্যে ৭৫ জনকে আটক করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এসব ঘটনায় মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি ও তাজহাট থানায় ১১ মামলা করা হয়েছে। আরও বেশ কয়েকটি অভিযোগ পাওয়া গেছে, সেগুলোর বিষয়ে আরও মামলা হবে।

তিনি বলেন, নগরীতে সেনাবাহিনী মোতায়েন আছে। পুলিশ বিজিবিসহ অন্যান্য বাহিনী নগরীজুড়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। শনিবার থেকে আমরা পুরো নগরীর নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়েছি। নগরবাসী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে। এখনও কারফিউ বলবত আছে এবং তা প্রতিপালিত হচ্ছে। কারফিউ চলবে তবে সময়সীমা আরও কমিয়ে দেওয়া হবে। সন্ত্রাসীরা আবারও কর্মকাণ্ড চালাতে পারে এমন আশঙ্কাও আমরা উড়িয়ে দিচ্ছি না।

রংপুর নগরীর পরিস্থিতি স্বাভাবিক

গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার রংপুর নগরীসহ দেশব্যাপী ভয়াবহ তাণ্ডবের পর শুক্রবার রাত ১২টা থেকে সারা দেশে কারফিউ জারি করা হয়। বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত শিথিল থাকার কারণে চার দিন পর জনজীবন ছিল পুরোপুরি স্বাভাবিক। দোকানপাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছে। ব্যাংকসহ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান খুললেও ইন্টারনেট সমস্যার কারণে বেশিরভাগ ব্যাংক লেনদেন বন্ধ ছিল। তবে ৫টার পর আবারও কারফিউ বলবত হওয়ার পর সেনাবাহিনী কঠোরভাবে নগরীর বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়। এ ছাড়াও বিজিবি ও পুলিশ পুরো নগরীতে টহল জোরদার করেছে।

Source link

Related posts

১৫ লাখে বাড়ি পৌঁছে যাবে ৪৫ মণের ‘মানিক’ 

News Desk

স্ত্রী ও চার সন্তানকে হারিয়ে একা হয়ে গেলেন প্রবাসী নারায়ণ

News Desk

৩৬ লাখ ২৫ হাজার দরিদ্র পরিবার পাবে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার

News Desk

Leave a Comment