সরকারি চাকরিতে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৫৬ হাজার নতুন পদ সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে সৃষ্ট এসব পদের একটি বিরাট সংখ্যা সব সময়ই শূন্য থাকে। এ অবস্থায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শূন্যপদের সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে। বিগত কয়েক বছর ধরে সাড়ে ৩ লাখেরও বেশি পদ খালি থাকছে।
এর ওপর করোনাভাইরাস মহামারির কারণে নতুন পদ সৃষ্টি এবং শূন্যপদে নিয়োগের ক্ষেত্রে আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কতটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এবং পড়ছে, তার সঠিক হিসাব এখনও পাওয়া যাচ্ছে না। চলতি বছরের (২০২১ সাল) জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিসংখ্যানে সে বিষয়টি উঠে আসবে বলে মনে করছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা।
করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরীক্ষার্থীদের বয়সের বিষয়টি আমরা কনসিডার করব। সেই বিষয়েও আমাদের সিদ্ধান্ত আছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে সরকারি চাকরিতে অনুমোদিত পদের সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৬৪ হাজার ৭৬৪টি। ১১ বছরের ব্যবধানে ২০২০ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১৮ লাখ ৮৫ হাজার ৮৬৮টি। এই ১১ বছরে পদ বেড়েছে ৬ লাখ ২১ হাজার ১০৪টি। প্রতি বছর গড়ে নতুন পদ সৃষ্টি হয়েছে প্রায় ৫৬ হাজার।
অন্যদিকে ২০০৯ সালে সরকারি চাকরিতে ২ লাখ ১৬ হাজার ৭৫৯টি পদ শূন্য ছিল। ২০২০ সালের ডিসেম্বরের হিসাব অনুযায়ী, শূন্যপদের মোট সংখ্যা হয়েছে ৩ লাখ ৮০ হাজার ৯৫৫টি। ২০০৯ সালের তুলনায় শূন্যপদ বেড়েছে এক লাখ ৬৪ হাজার ১৯৬টি। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা সবসময়ই পদ সৃজন করি। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো বড় হচ্ছে। আমাদের কলেজগুলোতে ছাত্র সংখ্যা বাড়ছে, সেখানে শিক্ষক বেশি লাগছে। সেসব স্থানে পদ সৃজন হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ বেড়ে যাওয়ায় আমাদের উইং বাড়াতে হচ্ছে। যেমন- রেলওয়েতে পদ সৃজন করতে হচ্ছে। কারণ রেলওয়ে সম্প্রসারিত হচ্ছে। পদ বাড়তেই থাকবে। তাই শূন্যপদও থাকবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালে সরকারি চাকরিতে অনুমোদিত পদের সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৬৪ হাজার ৭৬৪টি। পরের বছর (২০১০ সালে) ৫৬ হাজার ৯৮৫টি পদ বেড়ে অনুমোদিত পদের সংখ্যা হয় ১৩ লাখ ২১ হাজার ৭৪৯টি। ২০১১ সালে ৪৮ হাজার ৩৭৮টি নতুন পদ সৃষ্টি হয়ে অনুমোদিত পদের সংখ্যা হয় ১৩ লাখ ৭০ হাজার ১২৭টি।
২০১২ সালে অনুমোদিত পদের সংখ্যা বেড়ে হয় ১৪ লাখ ৫ হাজার ৫২৪টি, ওই বছর ৩৫ হাজার ৩৯৭টি পদ বাড়ে। ৬৫ হাজার ৫১২টি পদ বাড়ে ২০১৩ সালে। ওই বছর মোট পদের সংখ্যা হয় ১৪ লাখ ৭১ হাজার ৩৬টি। ২০১৪ সালে এক লাফে ২ লাখ ৭ হাজার ৩০৬টি নতুন পদ সৃষ্টি হয়। ফলে মোট অনুমোদিত পদের সংখ্যা হয় ১৬ লাখ ৭৮ হাজার ৩৪২টি। ২০১৫ সালে অনুমোদিত পদের সংখ্যা বেড়ে হয় ১৭ লাখ ১০ হাজার ৭০৪টি। ওই বছর নতুন পদ সৃষ্টি হয় ৩২ হাজার ৩৬২টি।
২০১৬ সালে নতুন পদ সৃষ্টি হয় ৬০ হাজার ৪৮১টি। ওই বছর শেষে মোট পদ ছিল ১৭ লাখ ৬২ হাজার ১৯৫টি। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে মোট পদ ছিল ১৭ লাখ ৮৪ হাজার ৩০২টি। ওই বছর আগের বছরের চেয়ে পদ বেড়েছে ২২ হাজার ১০৭টি। ২০১৮ সালে নতুন পদ বেড়েছে ৩৬ হাজার ৯৮২টি। ওই বছর শেষে অনুমোদিত পদ ছিল ১৮ লাখ ২১ হাজার ২৮৪টি।
এরপর ২০২০ সাল পর্যন্ত দুই বছরে পদ বেড়েছে ৬৪ হাজার ৫৮৪টি। ২০২০ সাল শেষে সরকারি চাকরিতে অনুমোদিত মোট পদের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৮ লাখ ৮৫ হাজার ৮৬৮টি। যেহারে নতুন পদ সৃষ্টি হয়েছে সে অনুপাতে নিয়োগ হয়নি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে। এ কারণে প্রতি বছরই সৃষ্ট পদের বিপরীতে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শূন্যপদের সংখ্যা।
প্রতি বছর জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিসংখ্যান নিয়ে ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ নামের বই প্রকাশ করা হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংস্কার ও গবেষণা অনুবিভাগের পরিসংখ্যান এবং গবেষণা কোষ এ বইটি প্রকাশ করে।
সর্বশেষ ২০২০ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রশাসনে মোট অনুমোদিত ১৮ লাখ ৮৫ হাজার ৮৬৮টি পদের বিপরীতে ৩ লাখ ৮০ হাজার ৯৫৫টি পদ শূন্য রয়েছে। ২০১৯ সালের শূন্যপদের কোনো পরিসংখ্যান নেই। এর আগের বছর ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৩৩৮টি পদ খালি ছিল। ২০১৭ সালে পদ খালি ছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার ২৪৭, ২০১৬ সালে শূন্য পদের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৫৯ হাজার ২৬১টি।
সরকারি চাকরিতে ২০১৫ সালে ৩ লাখ ২৮ হাজার ৩১১টি, ২০১৪ সালে ৩ লাখ ২ হাজার ৯০৪টি, ২০১৩ সালে ২ লাখ ৭৬ হাজার ৫৮৭টি, ২০১২ সালে ২ লাখ ৭৬ হাজার ৯৬৪টি, ২০১১ সালে ২ লাখ ৫৪ হাজার ২০৫টি, ২০১০ সালে ২ লাখ ৪৩ হাজার ৬৬৭টি পদ খালি ছিল। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়মিতভাবে নিয়োগ চলছে । তবে বিভিন্ন ধরনের জটিলতার কারণে সব প্রতিষ্ঠান চাইলেই নিজেদের মতো করে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিতে পারছে না।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আনিছুর রহমান মিঞা জাগো নিউজকে বলেন, ‘শূন্যপদে নিয়োগের বিষয়ে সরকার পজিটিভ, যেখানে পদ শূন্য সেখানে নিয়োগ হচ্ছে। করোনার কারণে এখন তো পরিস্থিতি একটু ভিন্ন। কিছু পদ আছে সংরক্ষিত, সেই পদে নিয়োগ দিতে হলে সরকারের অনুমতি নিয়ে নিয়োগ দিতে হয়। বাকি পদগুলোতে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ নিজেরাই নিয়োগ দিতে পারে।
নিয়োগ এবং শূন্য থাকা পদ নিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী জাগো নিউজকে বলেন, ‘শূন্যপদগুলোতে রিক্রুটমেন্টও (নিয়োগ) প্রতিনিয়ত চলছে। এই সিচুয়েশন (করোনাভাইরাস মহামারি) ওভারকাম করে আমরা দ্রুত শূন্যপদে নিয়োগ সম্পন্ন করতে পারি সে প্রচেষ্টা আমাদের রয়েছে। সে বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্তও আছে।
তিনি আরও বলেন, ‘করোনার এ পরিস্থিতিতে আমরা গণজমায়েত করতে পারছি না, তাই বড় বড় নিয়োগ পরীক্ষাগ আটকে আছে। এই পরিস্থিতি দূর হলে অনেকগুলো পরীক্ষা আমাদের সামনে আসবে। করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরীক্ষার্থীদের বয়সের বিষয়টি আমরা কনসিডার করব। সেই বিষয়েও আমাদের সিদ্ধান্ত আছে।