প্রায় এক বছর বন্ধ থাকার পর আবারও শুরু হচ্ছে সরকারী জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া। সরকারী দফতরগুলোতে অর্ধ লক্ষাধিক পদে নিয়োগের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে প্রায় এক কোটি প্রার্থী। আগামী অর্থবছরই এসব নিয়োগ সম্পন্ন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। করোনা মহামারীর কারণে আটকে ছিল এই নিয়োগ প্রক্রিয়া। খুব শীঘ্র এই নিয়োগের কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানা গেছে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারী চাকরির নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করেছে সরকারী কর্মকমিশন (পিএসসি)। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ কার্যক্রম মন্ত্রণালয়, সরকারী দফতর-সংস্থার মাধ্যমে দেয়া হলেও তা এখনও স্থগিত রয়েছে বলে জানা গেছে। পিএসসির এক সদস্য জনকণ্ঠকে বলেন, বিসিএস এর ৪১, ৪২ ও ৪৩ ব্যাচ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর মধ্যে ৪২ এর মৌখিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ৪১ এর প্রিলিমিনারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এখন ফল প্রকাশের অপেক্ষায় আছে। আর ৪৩ এর আবেদন গ্রহণ চলছে। ৪১ ব্যাচে মোট আবেদনের সংখ্যা ৪ লাখ ৭৫ হাজার। ৪৩ এর আবেদন ইতোমধ্যে পাঁচ লাখে উন্নীত হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ৮ মার্চ দেশে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর বিভিন্ন ধাপে সরকারী ছুটি ঘোষণা করা হয়। ধাপে ধাপে লকডাউন ও সরকারী বিধিনিষেধ জারি করা হয়। মাঝে বিধিনিষেধ তুলে নেয়া হলেও এ বছর নতুন করে দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ বৃদ্ধির ফলে এই বিধিনিষেধ আবারও জারি করা হয়। তা এখনও বহাল থাকায় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর সরকারী নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এ দুই শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগও রয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠানেই লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা হওয়ার পরও নিয়োগ কার্যক্রম ঝুলে আছে। কোন কোন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও নেয়া হচ্ছে না পরীক্ষা।
করোনা পরিস্থিতির কারণে সরকারী নিয়োগের চাহিদা কমে গেছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে যে চাহিদা পাঠানো হয়েছে তার ভিত্তিতে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করে যোগ্যদের তালিকা তৈরি করে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে নতুন করে কয়েকটি সরকারী দফতর-সংস্থায় জনবল নিয়োগের চাহিদা এসেছে। আমরা ইতোমধ্যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছি। দেখা গেছে, নিয়োগ বিধি এবং মামলা জটিলতার কারণেও অনেক শূন্য পদে নিয়োগ দেয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের এসব নিয়োগ বিধি সংশোধন ও মামলা নিষ্পত্তির প্রাথমিক কাজ শেষ করতেই কেটে যাচ্ছে বছরের পর বছর। এদিকে ফি দিয়ে আবেদন করেও পরীক্ষা না দিয়েই চাকরির বয়স শেষ হচ্ছে অসংখ্য প্রার্থীর। ফলে তাদের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ ও হতাশা। তার ওপরে করোনা পরিস্থিতি যুক্ত হওয়ায় এ সঙ্কট আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে।
এদিকে গত বছরের মার্চে করোনা পরিস্থিতি শুরু হলেও তার আগের মাসে (ফেব্রুয়ারি) প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে ২০টি মন্ত্রণালয়, দফতর ও সংস্থায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সরকারী কর্মকমিশন (পিএসসি)। পরের মাসে (মার্চে) ১৫টি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও সে বছরে নার্স ছাড়া আর তেমন উল্লেখযোগ্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি। চলতি বছরের শুরুতে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে জানুয়ারি থেকে আবারও নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করে পিএসসি। কিন্তু দুই মাস ধরে করোনার প্রকোপ আবারও বেড়ে যাওয়ায় নিয়োগ কার্যক্রমে অনেকটা স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে নিয়োগ পরীক্ষার অপেক্ষায় রয়েছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৩৫ হাজার পদে ১৭ লাখ প্রার্থী। খাদ্য অধিদফতরের অধীনে সাড়ে ১১শ’ পদের বিপরীতে নিয়োগের অপেক্ষায় রয়েছেন ১৪ লাখ প্রার্থী। এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দেশের বিভিন্ন বিভাগে সাড়ে ১৯ হাজার পদের বিপরীতে অবেদন করেছেন প্রায় ৫৪ লাখ প্রার্থী। খুব শীঘ্র এদের পরীক্ষা শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
তবে চাহিদা মোতাবেক সরকারী জনবল নিয়োগে পরীক্ষার আয়োজন করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (নন ক্যাডার) নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে সরকারী নিয়োগের চাহিদা কমে গেছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে যে চাহিদা পাঠানো হয়েছে তার ভিত্তিতে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করে যোগ্যদের তালিকা তৈরি করে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে নতুন করে কয়েকটি সরকারী দফতর-সংস্থায় জনবল নিয়োগের চাহিদা এসেছে। আমরা ইতোমধ্যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষ করে চূড়ান্তভাবে পাস করা প্রার্থীদের তালিকা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হবে।
বর্তমানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ছোট আকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করতে সব সরকারী প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যেসব নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে সেগুলোও স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুরু করা হচ্ছে। বেশি আকারে আবেদনকারী হলে ধাপ ধাপে পরীক্ষা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আশা করি, দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারী সব স্তরের নিয়োগ কার্যক্রম ত্বরান্বিত করে তোলা হবে।
অন্যদিকে করোনার কারণে সিদ্ধান্ত হয়েও আটকে থাকা সরকারী নিয়োগে প্রার্থীদের বয়সসীমায় ছাড় দেয়া হয়েছে। তবে বিসিএসের বেলায় এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে না। যেসব মন্ত্রণালয় বা অধীন প্রতিষ্ঠান সরাসরি নিয়োগে গত বছরের ২৫ মার্চের আগে নিয়োগের জন্য ছাড়পত্রসহ প্রস্তুতি নিয়েও করোনার কারণে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারেনি, এখন সেসব বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীদের সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে গত বছরের ২৫ মার্চ তারিখ ধরতে বলেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সরকারী চাকরিতে প্রবেশে সাধারণত বয়সসীমা ৩০ বছর। এখন যাদের বয়স গত বছরের ২৫ মার্চ ৩০ বছর হয়ে গেছে, তারাও ওইসব নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করতে পারবেন।