জামালপুরের সরিষাবাড়ী স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা-তারাকান্দি চলাচলকারী আন্তঃনগর যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। আগুনে চার নারীসহ ১০ জন আহত হয়েছেন।
স্থানীয়রা জানায়, শনিবার (১৮ নভেম্বর) দিবাগত রাত আনুমানিক ১টা ১০ মিনিটে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনটি সরিষাবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনে দাঁড়ায়। পরে তারাকান্দি স্টেশনের উদ্দেশে যাত্রা করলে ট্রেনের পেছনের বগিতে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা।
বগিতে আগুন দেখে ৪ নারীসহ ১০ জন ট্রেন থেকে লাফিয়ে পড়ে। এতে আহত হন আশিকা সুলতানা, মমতাজ বেগম, জেল বেগম ও লাবনী আক্তার। তারা সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের কর্তব্যরত মেডিক্যাল অফিসার ডা. তাহমিনা।
সরিষাবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন সহকারী মাস্টার আব্দুস সালাম ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলে দমকলকর্মীরা এসে প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। এতে ট্রেনের শেষদিকের বগি ক, খ, গ-তে আগুন ছড়িয়ে পড়লে দুটি বগি আগুনে ভস্মীভূত হয়। ট্রেনের বগিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যাত্রী সাধারণের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ঘটনায় ট্রেনের যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তাৎক্ষণিক জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোহরাব উদ্দিন, ওসি ডিবি শাহনেওয়াজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ বিষয়ে সরিষাবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনের কতর্ব্যরত সহকারী স্টেশনে মাস্টার আব্দুস সালাম জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ১টা ৭ মিনিটে স্টেশনে প্রবেশ করে। পরে ট্রেন ছেড়ে দেওয়ার জন্য পয়েন্টসম্যান লাইন ক্লিয়ার দেয়। ট্রেনটি ১টা ১০ মিনিটে রান করার পর যাত্রীরা ডাকচিৎকার (আগুন আগুন) করলে কক্ষ থেকে বেরিয়ে বগিতে আগুন দেখতে পান। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজনকে খবর দিলে তারা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন।
তিনি আরও জানান, ট্রেনের পেছনের ৩টি বগিতে ক (নম্বর-৭৩০৭) ও গ (নম্বর- ৬১০২) আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া ট্রেনের খ বগি (নম্বর-২১১৭) আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলেও জানান তিনি।
জানতে চাইলে ট্রেনের দায়িত্বরত পরিচালক (গার্ড) মাসুদ রানা জানান, স্টেশন থেকে ট্রেনটি হোম সিগন্যাল অতিক্রম করার সময় পেছন থেকে লোকজন ধোঁয়া ধোঁয়া বলে ডাকাডাকি করলে শিকল টেনে থামানো হয়।
এ ব্যাপারে সরিষাবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত এএসআই আব্দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের পুলিশ সদস্যরা প্ল্যাটফর্মে ডিউটিরত ছিল। এ সময় ট্রেনের বগিতে কে বা কারা হঠাৎ অগ্নিসংযোগ ঘটায়। ফলে ট্রেনের বগিতে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে।’
জানতে চাইলে সরিষাবাড়ী উপজেলা আনসার ও ভিডিপি প্রশিক্ষক রাজু রায়হান জানান, সরিষাবাড়ী রেলওয়ের অধীন শুধু হরতাল ও অবরোধকালীন সময়ে রেলওয়ের নিরাপত্তার জন্য ৪০ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্য নিয়োগ রয়েছে। তারা হরতাল ও অবরোধকালীন সময়ে ভোর ৬টা থেকে রেললাইনের নিরাপত্তায় ডিউটিরত থাকে। অগ্নিকাণ্ডের সময় হরতাল-অবরোধের আওতাবিহীন থাকায় আনসার সদস্যদের কোনও ডিউটি ছিল না বলে জানান তিনি।
সরিষাবাড়ী সিনিয়র ফায়ার স্টেশন অফিসার রুহুল আমীন বলেন, ‘রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় আন্তঃনগর যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনের ২টি বগিতে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুন নেভাতে ১৭ জন সদস্য নিরলসভাবে কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে। আমরা এখনও কাজ করছি।’
সরিষাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘ট্রেনে অগ্নিসংযোগের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ সদস্যদের পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় আমাদের ওপর কোনও দায়িত্ব অর্পিত হলে তদন্ত করে দোষীদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’