সর্ববৃহৎ ঈদগাহ ময়দান গোর-এ শহীদে থাকবে তিন স্তরের নিরাপত্তা 
বাংলাদেশ

সর্ববৃহৎ ঈদগাহ ময়দান গোর-এ শহীদে থাকবে তিন স্তরের নিরাপত্তা 

করোনার কারণে গত দুই বছর বন্ধ থাকলেও এবার এশিয়ার সর্ববৃহৎ ঈদগাহ ময়দান দিনাজপুরের গোর-এ শহীদে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। সুষ্ঠুভাবে নামাজ আদায়ে ময়দানের সংস্কার কাজ এখন শেষের দিকে। দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাতে এবার ইমামতি করবেন দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল জামে মসজিদের খতিব মাওলানা শামসুল হক কাসেমি। আর জামাতের সময় দেওয়া হয়েছে সকাল ৯টায়। ময়দানের সার্বিক নিারপত্তায় থাকবে তিন স্তরের ব্যবস্থাপনা।

করোনার আগে এই ময়দানে অনুষ্ঠিত ঈদ জামাতে পাঁচ থেকে ছয় লাখ মানুষ একসঙ্গে নামাজ আদায় করেছেন। এবারও ছয় লাখের বেশি মানুষের সমাগম হবে বলে আশা করছেন আয়োজকরা। তবে ময়দানে ১০ লাখ মানুষের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।   

শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) দিনাজপুর গোর-এ শহীদ ঈদগাহ মাঠে গিয়ে দেখা যায়, ঈদ জামাতের জন্য ময়দান প্রস্তুতের কাজ শেষ পর্যায়ে। মাঠে বালু ভরাট করা হয়েছে। রোলার দিয়ে মাঠ সমানের কাজও চলছে। মিনারগুলো পানি দিয়ে ধুয়ে-মুছে রঙ করছেন শ্রমিকরা। মিনারের পেছনে ওজুর জন্য বসা ও পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। নির্মিত হয়েছে অস্থায়ী শৌচাগার। কাতারের জন্য লাইনের দাগও টানা হয়েছে।

মাঠে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য স্থাপিত হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। ২০১৭ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এই মাঠে ঈদের ছয়টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জামাতগুলোতে যেমন নিরাপত্তা ছিল ঠিক সেই রকম বা তার চেয়েও বেশি নিরাপত্তা দিতে মাঠে কাজ করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। যাতে কোনও বিশৃঙ্খলা না হয়। এ জন্য পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে। প্রতিটি কাতারেই থাকবেন সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যরা। এছাড়া র‌্যাব ও বিজিবির টহলও থাকবে। 

পুলিশ বলছে, মাঠে তিন থেকে চার স্তরের নিরাপত্তা থাকবে। ইতোমধ্যে যে কোনও ধরনের নাশকতা ঠেকাতে পুলিশ কাজ শুরু করছে। জেলার সর্বত্র সিসি ক্যামেরায় মনিটরিং কাজ চলছে। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও ময়দান ঘিরে কাজ করছে।

দিনাজপুরের পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, গত কয়েকটি জামাত যেভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে তার চেয়েও বেশি নিরাপত্তা থাকবে এবার। মাঠে প্রবেশের জন্য বেশ কয়েকটি গেট থাকবে, যেগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মেটাল ডিটেক্টর নিয়ে তল্লাশিতে থাকবেন। মাঠে মুসল্লিদের জায়নামাজ ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে না আসার আহ্বান জানানো হয়। মাঠে পুলিশের পাশপাশি র‌্যাব, বিজিবি, এনএসআই, ডিজিএফআই, ডিএসবিসহ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মোতায়েন থাকবেন। মাঠে সিসি ক্যামেরা ও ওয়াচ টাওয়ার থাকবে, যাতে সার্বক্ষণিকভাবে মাঠটি পর্যবেক্ষণ করা যায়। ইতোমধ্যে শহর ও আশপাশে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা কাজ শুরু করে দিয়েছেন। ময়দানে যাতে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় সেজন্য পুলিশ সার্বক্ষণিকভাবে তৎপর রয়েছে বলে জানান তিনি। 

ঈদগাহ ময়দানের উদ্যোক্তা ও পরিকল্পনাকারী জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক নির্দেশনায় সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে এখানে ঈদের জামাতগুলো অনুষ্ঠিত হয়। এই মাঠে প্রতিবারই পাঁচ থেকে ছয় লাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করেন। দিনাজপুর জেলাসহ পার্শ্ববর্তী পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষজন এখানে ঈদের নামাজ আদায় করেন। গত দুই বছরে করোনার কারণে মাঠে নামাজ আদায় হয়নি। এবারে করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

দিনাজপুরের উপশহর এলাকার বাসিন্দা নয়ন ইসলাম বলেন, গত দুই বছর ঈদের নামাজ আদায় করতে হয়েছে মসজিদে। এবার সবাই মিলে ময়দানে একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবো বলে আশা করি। 

মাতাসাগর এলাকার রাকিবুল ইসলাম বলেন, এই মাঠটি আমাদের গৌরবের মাঠ। এত বড় মাঠ সারা দেশে একটিও নাই। এমনকি উপমহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় ঈদগাহ মাঠ এটি। আমি আমার পরিবারের সদস্য ও বন্ধু-বান্ধব সবাই মিলে এই মাঠে নামাজ আদায় করবো। 

 দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার সাংবাদিক ও সামাজিক সংগঠন ‘পাশে দাঁড়াও’র আহ্বায়ক মাহফুজুল ইসলাম আসাদ বলেন, আমরা চিন্তা করেছি এবার গোর-এ শহীদ ময়দানে ঈদের নামাজ আদায়ে চিরিরবন্দর থেকে একটি টিম নিয়ে যাবো। দিনাজপুরের মধ্যে এত বড় মাঠ আর, আমরা নামাজ আদায় করতে যাবো না এমনটি হবে না। 

দিনাজপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গোর-এ শহীদ বড় ময়দানের আয়তন প্রায় ২২ একর। ২০১৭ সালে নির্মিত ৫২ গম্বুজের ঈদগাহ মিনার তৈরিতে খরচ হয়েছে তিন কোটি ৮০ লাখ টাকা।  ঈদগাহ মাঠটি ঐতিহাসিক নিদর্শন ও মনোরম সৌন্দর্য ও নান্দনিক হিসেবে নির্মাণ করা হয়। ৫০ গম্বুজের দুই ধারে ৬০ ফুট করে দুটি মিনার, মাঝের দুটি মিনার ৫০ ফুট করে। ঈদগাহ মাঠের মিনারের প্রথম গম্বুজ অর্থাৎ মেহেরাব (যেখানে ইমাম দাঁড়াবেন) তার উচ্চতা ৪৭ ফুট। এরসঙ্গে রয়েছে আরও ৪৯টি গম্বুজ। এছাড়া ৫১৬ ফুট লম্বায় ৩২টি আর্চ নির্মাণ করা হয়েছে। পুরো মিনার সিরামিকের তৈরি। প্রতিটি গম্বুজ ও মিনারে রয়েছে বৈদ্যুতিক লাইটিং। রাত হলে ঈদগাহ মিনার আলোকিত হয়ে উঠে। ২০১৭ সাল থেকেই প্রতিবারে এখানে ঈদের নামাজ আদায় করছেন দিনাজপুর জেলাসহ পাশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। তবে করোনার কারণে গত দুই বছরে এই মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় এবারে ঈদের জামাতের প্রস্তুতি নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

Source link

Related posts

ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারে ৫ লাখ পর্যটক, হোটেলে কক্ষ না পেয়ে ভোগান্তি

News Desk

তিস্তার সেচে ১১০০ কোটি টাকার বোরো উৎপাদন

News Desk

অশ্রু ঝরিয়ে বৃষ্টির প্রার্থনা

News Desk

Leave a Comment