নেপালকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সাফ নারী চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ নারী ফুটবল। যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন ঋতুপর্ণা, আর সেরা গোলরক্ষক রূপনা চাকমা। তাই তাদের নিজ জেলা রাঙামাটিতে তাদেরকে দেওয়া হয়েছে রাজকীয় সংবর্ধনা।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকালে ঘাগড়া স্কুল মাঠ থেকে ঋতু, রূপনা ও মনিকাদের নিয়ে যাত্রা শুরু করে গাড়ি বহর। আঁকা বাঁকা পাহাড়ি পথ পেরিয়ে এগিয়ে চলছিল। জনবসতিহীন এই পথেও শতশত মানুষ দুই ধারে ভিড় করেন একনজর তাদের দেখতে। শহরে ঢুকতেই বদলে যায় চিত্র। সব বয়সী মানুষ উচ্ছ্বাস আর হাত নাড়িয়ে স্বাগত জানান পাহাড়ি স্বর্ণকন্যাদের এমন সংবর্ধনায় আপ্লুত খেলোয়াড়রা।
গাড়িবহর শহরের ভেদভেদি, তবলছড়ি, বনরূপা হয়ে চিংহ্লামং মারী স্টেডিয়ামে উপস্থিত হয়। তখন মাঠে কয়েক হাজার মানুষ তাদের বরণ করেন।
সংবর্ধনায় খেলোয়াড়দের জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ ও সেনাবাহিনী থেকে প্রত্যেককে এক লাখ টাকা ও পৌরসভা ও জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে ৫০ হাজার টাকা করে পুরস্কার দেওয়া হয়। এ ছাড়াও জেলা বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন ক্রীড়া সংগঠন তাদের ফুল ও ক্রেস্ট দিয়ে বরণ করে নেয়। এ সময় সংবর্ধনা দেওয়া হয় ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দ্রা চাকমা, সাবেক শিক্ষক ও কোচ বীর সেন চাকমাসহ সবাইকে। এ সময় বাংলাদেশ ফিফা মনোনীত রেফারি জয়াকেও সংবর্ধনা ও পুরস্কার দেওয়া হয়।
ঋতুপর্ণা চাকমা বলেন, সাফ জয় করা দেশে ফেরার পর আমাদের রাঙামাটি থেকে সবাই ফোন করে জানতে চায়, কখন বাড়ি আসবো। তারা আমাদের অপেক্ষায় নিজ জেলায় এমন সংবর্ধনা সত্যিই ভাগ্যের বিষয়। আমরা তিন জনই খুব খুশি। এভাবে আপনাদের ভালোবাসা পেলে আরও ভালো খেলতে পারবো দেশের জন্য।
তিনি আরও বলেন, আমরা যে মাঠে খেলে আজ জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেয়েছি, মাঠটির অবস্থা খুবই বাজে। তাই চাইবো, নতুন নারী আরও খেলোয়াড় তৈরিতে এই মাঠটির সংস্কার প্রয়োজন।
জাতীয় দলের মধ্য মাঠের খেলোয়াড় মনিকা চাকমা বলেন, এত আয়োজন দেখে খুব ভালো লাগছে। আমরা চেষ্টা করবো আরও ভালো খেলার। তবে মনে অনেক কষ্ট। আমাদের বিদ্যালয়টি এখানও জাতীয়করণ করা হয়নি। বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হলে নতুন নতুন নারী ফুটবলার তৈরি হতো।
রাঙামাটি সেনা রিজিয়নের কমান্ডার শওকত ওসমান জানান, এই সংবর্ধনার মধ্য দিয়ে নতুন নতুন খেলোয়াড় উৎসাহ পাবে এবং ভবিষ্যতে আরও ভালো খেলোয়াড় তৈরি হবে। আর ঘাগড়া মাঠটি সংস্কারের জন্য আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এটি বড় কোনও কাজ না।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, রাঙামাটিতে বিকেএসপির একটি একাডেমি করার জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের কাজও চলছে। এটি শেষ হলে শুধু নারী ফুটবলার না পুরুষ ফুটবলারও বের হবে এই অঞ্চল থেকে। আজ এই তিন স্বর্ণকন্যাদের সংবর্ধনা দিতে পেরে রাঙামাটিবাসী আনন্দিত।